পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশটা কীভাবে চলবে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য কীভাবে পরিবর্তন হবে, বাংলাদেশের কীভাবে উন্নতি হবে- আমরা সেটাকেই বেশি গুরুত্ব দিই। অন্যের পরামর্শ নিয়ে আমরা চলি না। তিনি বলেন, আমরা সমগ্র দেশে রেল যোগাযোগের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। এমনকি যেসব এলাকায় রেল নেই সেসব এলাকায় আমরা রেলসংযোগ দিয়ে দিচ্ছি। অল্প খরচে যোগাযোগ স্থাপন ও পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে সমগ্র বাংলাদেশকে রেল যোগাযোগের আওতায় নিয়ে আসছি। যেন পণ্য পরিবহন এবং ব্যবসা বাণিজ্য সমৃদ্ধ করা যায়।
গতকাল গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে ফরিদপুরের মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা পর্যন্ত নতুন রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। নাম উল্লেখ না করে বিশ্বব্যাংকের উদ্দেশ করে সরকার প্রধান বলেন, যারা একসময় রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল, তারাই আবার উদ্যোগ নিয়েছে সেখানে আরেকটা রেলসেতু করার জন্য। অর্থাৎ যমুনা নদীর ওপর আরেকটি ডেডিকেটেড রেলসেতুরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। সেটার কাজ আমরা করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড ট্রেন চালুর চিন্তা-ভাবনা সরকারের আছে। তবে আমাদের দেশের মাটি কতটা স্পিড লোড নিতে পারবে তার ওপর নির্ভর করে, স্টাডি করে সেটা আমরা করব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে অনেকগুলো লাইন বন্ধ হয়ে যায়। আবার স্টেশনও বন্ধ হয়ে যায়। পুরো রেলযোগাযোগকে প্রায় ধ্বংস করে গেছে তারা। গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে রেলের অনেক অভিজ্ঞ লোককে বিদায় করে দিয়েছে। এমনকি বিদেশি পরামর্শে তারা রেলসেবা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। তিনি বলেন, আমরা পদ্মাসেতু নির্মাণ করছি, সেখানে রেললাইন করছি। পদ্মাসেতু পার হয়ে ভাঙ্গা দিয়ে একদিকে যশোর হয়ে খুলনা এবং অপরদিকে সোজা বরিশাল হয়ে একেবারে পায়রা নতুন নৌবন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। সেই পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, বরিশাল বিভাগকে এক সময় বলা হতো বাংলার ভেনিস। সেখানে অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল; সেখানে রেললাইন করার চেষ্টা করে ব্রিটিশরাও পারেনি। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, স্টাডি চলছে। সমগ্র বাংলাদেশকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ থেকে ভারতের যে সব জায়গায় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, আমরা সেগুলো পুনরায় স্থাপন করেছি, আস্তে আস্তে আমরা করে যাচ্ছি। যেমন বাংলাদেশে-ভারতের মধ্যে দর্শনা-গেদে, বেনাপোল-পেট্রাপোল, রহনপুর-সিঙ্গাবাদ, বিরল-রাধিকাপুর এবং চিলহাটি-হলদিবাড়ি—এই রুটে রেল চালু করেছি আমরা। এখন শিলিগুড়ি পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপন করার পরিকল্পনা নিয়েছি।
অনলাইন ব্যবসার সুবিধা কাজে লাগাতে হবে
এর আগে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ডাক বাক্সের আদলে নির্মিত নান্দনিক নতুন ডাক ভবন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডাক অধিদপ্তরকে অনলাইন ব্যবসায় সর্বাধিক সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। যেহেতু অনলাইন ক্রয়-বিক্রয় জনপ্রিয়তা লাভ করছে। কাজেই, ডাকঘর পিছিয়ে থাকলে চলবে না। ডাক বিভাগকে এ ব্যাপারে আরো দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে, এটাও হবে ডাকবিভাগের জন্য একটি বড় ব্যবসার ক্ষেত্র। ভবিষ্যতে ডাকের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য, ফলমূলসহ বিভিন্ন পচনশীল পণ্যও পাঠানো যাবে। এ ধরনের পণ্য পরিবহন সেবা দিতে কুলিং চেম্বার বিশিষ্ট গাড়ি ও গুদামঘরসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পচনশীল জিনিস অর্থাৎ খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে ফলমূল, তরি-তরকারি এগুলোও যেন ডাকের মাধ্যমে পাঠানো যায়। আমি মনে করি এখানে রান্না করে আরেক জায়গায় খাবার পাঠাবো বা কোনো আত্মীয়ের কাছে পাঠাবো সেটাও যেন পাঠাতে পারি। এজন্য কুলিং সিস্টেমটা দরকার। সেই ধরনের টেমপারেচার বা ফ্রিজিং সিস্টেম করে দেওয়া, যাতে সেখানে জিনিসটা নষ্ট হবে না এবং যার হাতে যাবে তার কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা। সে ধরনের গাড়ি কিনে এই ডাকের মাধ্যমে মানুষ যেন সেবা পায় সে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, এখানে শুধু গাড়ি কিনলে হবে না, এখানে চেম্বার দরকার, সেজন্য ডাকঘরগুলোতে কুলিং সিস্টেমযুক্ত চেম্বার যাতে তৈরি হয় তার ব্যবস্থা, অর্থাৎ ওয়্যার হাউজ নির্মাণ হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রত্যেকটা উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এরকম সেন্টার থাকবে। সেখান থেকে যারা নিয়ে যাবে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওই কুলিং সিস্টেম। এখন তো যথেষ্ট পোর্টেবল বক্স পাওয়া যায়। কাজেই পৌঁছে দিতে পারবে। সেভাবেই ডাকের সেবাটা একেবারে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। সেই ব্যবস্থাটাও এখন নিতে হবে। হ্যাঁ ধাপে, ধাপে আমরা এগোচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডাক বাছাই ত্বরান্বিতকরণ ও পচনশীল দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য কুলিং চেম্বারের সুবিধা সম্বলিত ওয়্যারহাউজ যুক্ত ১৪টি অত্যাধুনিক মেইল প্রসেসিং ও লজিস্টিক সার্ভিস সেন্টার নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ হচ্ছে। এটাকে প্রথমে আমরা জেলা ও বিভাগীয় শহরে করে দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য থাকবে, ডাক বিভাগকে আমরা বলবো আপনারা এরকম প্রজেক্ট নেবেন একেবারে উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অর্থাৎ ডাকঘর যেখানে যেখানে আছে সেখানে এই ব্যবস্থাটা থাকতে হবে। জেলা ও বিভাগীয় সদরে আধুনিক মেইল প্রসেসিং, কুলিং সুবিধাযুক্ত স্টোরেজ, ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এবং গ্রাহকবান্ধব ৩৮টি মডেল ডাকঘর নির্মাণ কাজে সরকার হাত দিয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
ডাক বিভাগের মাধ্যমে বহুমুখী সেবা প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ডাক সিস্টেম এটা শুধু ডিজিটালাইজড করা না, আরও সেবা মানুষকে যেন দিতে পারে সে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা ১১৮টি মেইল গাড়ি সংযোজন করেছি। তাছাড়া গাড়ি চালানোর জন্য নারী-পুরুষ তাদের ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের পর আপনারা জানেন এখন বেশির ভাগই অনলাইন সেবা চলছে, ক্রয়-বিক্রয় চলছে। যেহেতু অনলাইন সেলিং জনপ্রিয়তা লাভ করছে কাজেই ডাকঘর পিছিয়ে থাকলে চলবে না। ডাক বিভাগকে এই ব্যাপারে আরো দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
ডাকঘরে কর্মরত ডাককর্মীদের সম্মানী ভাতা বাড়ানো প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, গ্রামীণ ডাকঘরে কর্মরত ডাককর্মীদের সম্মানী ভাতা বাড়িয়েছি। ২০১৩ সালে এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল সাব পোস্টমাস্টার, এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল এজেন্ট, এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল ডেলিভারি এজেন্ট ও এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল মেইল ক্যারিয়ারদের নির্ধারিত মাসিক ভাতা ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ৬৫০ টাকা, ১ হাজার ২৬০ টাকা, ১ হাজার ২৩০ টাকা এবং ১ হাজার ১৮০ টাকা যা পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে ২০১৮ সালে মাসিক ভাতা নির্ধারণ করে দিয়েছি যথাক্রমে ৫ হাজার ৮৪১ টাকা, ৪ হাজার ৪৬০ টাকা, ৪ হাজার ৩৫৪ টাকা এবং ৪ হাজার ১৭৭ টাকা।
ডাককর্মী সম্মানী আরও বাড়ানো প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, এটা ঠিক বর্তমান যুগে এ টাকাটা যথেষ্ট না। এই ক্ষেত্রে আমার মনে হয় ডাক বিভাগও কিছু ব্যবস্থা নিতে পারে। যারা কাজ করছে তাদের কোনো ধরনের ইনসেনটিভ, ডাক বিভাগ যে লাভ করবে সেটার ছোট একটা অংশ ব্যবস্থা করতে পারে সেটা মনে হয় ভালো হয়। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যেটুকু করার দরকার সেটা তো করবোই এবং আমরা করে যাচ্ছি। পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হচ্ছে। এসময় ঢাকার আগারগাঁওয়ের ডাক ভবন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।