Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাতে চুরি দিনে দোকানদারি

২৭ লাখ টাকাসহ সস্ত্রীক ধরা মনির হোসেন

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৩ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

মো. মনির হোসেন (৪০) একজন পেশাদার চোর। দীর্ঘ সাত বছরে ২৫০টির মতো চুরি করেছেন। চুরির পাশাপাশি নগরীর আকবর শাহ থানার বিশ্ব কলোনী শাপলা গ্যাস লাইন এলাকায় একটি ভাঙ্গারির দোকান আছে তার। তিনি রাতে চুরি করেন। দিনে করেন দোকানদারি। চোরাইকৃত মালামাল নিজের দোকানে রেখেই বিক্রি করেন।

তার অন্যতম সহযোগী স্ত্রী খুকু মনি ওরফে খুকু বেগম (২৮)। টাকাসহ মূল্যবান চোরাই জিনিসপত্র থাকে তার হেফাজতে। নিজের অটোরিকশায় চড়ে চুরি করেন মনির। অটোরিকশা চালক মো. মাহফুজ (৩০) চুরিতে তার সঙ্গ দেন। তিনি রাতে চুরি করেন, তিনি ঘুমান। নগরীর জুবিলী রোডের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ২৭ লাখ টাকা চুরির ঘটনা তদন্তে পুলিশ এই চোরের সন্ধান পায়। স্ত্রী ও সহযোগীসহ পাকড়াও করার পর পেশাদার চোর মনিরের কাছ থেকে চুরির চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ।

নগরীর জুবিলী রোডে বাংলাদেশ সাপ্লাইয়ার্স নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরি হয়। ব্যবসায়ী কাইজার আবুওয়ালা অভিযোগ করেন আমাফা সেন্টার বিল্ডিংয়ের ৪র্থ তলায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হানা দিয়ে গ্রিল কেটে লকার ভেঙ্গে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা লুট করে। একই ভবনের ৩য় তলায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক জুবিলী রোড শাখার জানালার গ্রিল কেটে ভেতরে হানা দিলেও সেখান থেকে কিছু নিতে পারেনি। গত ১৮ মে সন্ধ্যা থেকে রাতের যে কোন সময় এই চুরির ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় ব্যবসায়ী কাইজার আবুওয়ালা ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় দুটি মামলা দায়ের করে। শুরু হয় মামলার তদন্ত এবং আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ চুরির কাজে ব্যবহৃত অটোরিকশার সন্ধান পায়। শুক্রবার রাতে চুরির ঘটনায় জড়িত মনিরের অটোরিকশার চালক মাহফুজকে স্টেশন রোড থেকে পাকড়াও করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে অটোরিকশা এবং নগদ পাঁচ হাজার টাকা ও দুটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মনির ও তার স্ত্রী খুকু মনিকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বাসা থেকে ব্যাগ ভর্তি চোরাইকৃত ২৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

থানার ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, জিজ্ঞাসাবাদে তারা চুরি ঘটনা স্বীকার করেছে। যথারীতি নিজের অটোরিকশাযোগে ওই ভবনে চুরি করতে যায় মনির। চালক মাহফুজ অটোরিকশা নিয়ে নীচে পাহারায় ছিলো। গ্রিল কেটে চুরির পর তাকে দশ হাজার টাকা ভাগ দেয় মনির। বাকি টাকা বাসায় নিয়ে স্ত্রীর কাছে জমা রাখে।
ওসি জানান, মনির প্রতিদিন রাত সাড়ে ১১টায় মাহফুজকে নিয়ে অটোরিকশাযোগে চুরি করতে বের হন। তারা বিভিন্ন বাসাবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টার্গেট করে। যেখানে অন্ধকার পরিবেশ দেখে সেখানে অটোরিকশা থামিয়ে মনির ভবনে ঢুকে পড়ে। অন্ধকার ভবনের পেছনের পাইপ বেয়ে দ্রুত উপরে উঠে যায় মনির। এপর কৌশলে জানালার গ্রিল কেটে ভেতরে হানা দিয়ে চুরি করে। এসময় মাহফুজ অটোরিকশা নিয়ে আশপাশের এলাকায় রাউন্ড দিয়ে পুলিশকে পাহারা দিতে থাকে। চুরি শেষে মনির মাহফুজকে ডাক দিলে সে অটোরিকশা নিয়ে যথাস্থানে চলে আসে। তারা দ্রুত অটোরিকশাযোগে এলাকা ত্যাগ করে। বাসায় গিয়ে মনির হোসেন মাহফুজকে প্রতিদিন চোরাই টাকা যা পায় তার ভাগ দিয়ে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৭ লাখ ৫ হাজার টাকা চুরির ঘটনায় মাহফুজকে নগদ ১০ হাজার টাকা ভাগ দেয়।

পুলিশ জানায় যা ভাগ পায় তাতে মাহফুজের ভালই চলে। আর তাই সে দিনের বেলায় ঘুমায় এবং রাতে অটোরকশা চালায়। এর আগে তারা নগরীর নজির আহমেদ রোডের লায়লা মঞ্জিলের ৩য় তলার একটি বেসরকারি অফিসে হানা দিয়ে ২০ হাজার টাকা চুরি করে। তার আগে রাজাপুকুর লেইন এলাকার কাগজের ৩টি গোডাউন থেকে ৫০ হাজার টাকার বিভিন্ন সিলভার জাতীয় মালামাল ও তার চুরি করে। এছাড়া চকবাজার গুলজার মোড়ের ক্যাপেচিনে রেস্টুরেন্টের ক্যাশ বাক্স থেকে নগদ ৩৬ হাজার টাকা, একটি এলইডি মনিটর, চৌমুহনী শেখ মুজিব রোডস্থ মাহমুদা এন্টারপ্রাইজের উপরে ৪র্থ তলায় একটি অফিস থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা, একটি ল্যাপটপ এবং আগ্রাবাদ সেন্টারের বিকাশ অফিসের উপরে ৩য় তলার একটি অফিস থেকে দুটি ল্যাপটপ চুরির কথা স্বীকার করে তারা।

তারা জানায়, অফিসের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় স্কুল কলেজে নগদ টাকা এবং মূল্যবান জিনিস চুরি করে তারা। গ্রিল কেটে হানা দেওয়ার পর কোন অফিস বা স্কুলে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে ডিভিআর মেশিনটি খুলে বালতির পানিতে চুবিয়ে রাখে, যাতে তাকে কেউ চিনতে না পারে। সিসিটিভি ক্যামেরা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য তারা সকল প্রকারের কৌশল অবলম্বন করে। মনির হোসেন আকবরশাহ থানা ও খুলশী থানার দুটি চুরির মামলায় গ্রেফতার হয়ে দুই বছর হাজতবাস করেছে। জেল থেকে বের হয়ে ফের চুরিতে নেমে পড়ে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ