পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞদের মতামত
সীমান্তে জরুরীভাবে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা উচিত : ডা. এবিএম খুরশীদ আলম
সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে নজরদারি আরও বাড়াতে বলা হয়েছে : ডা. নাজমুল ইসলাম
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। করোনার প্রথম ঢেউ পাশ্চিমা দেশগুলোতে আছড়ে পড়লেও দ্বিতীয় ঢেউ (ডবল মিউট্যান্ট) আছড়ে পড়ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতে। এর মধ্যে ভারতের ১০টি রাজ্য ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। করোনা মৃত্যু আর লাশ দাহ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে মানুষ। এরই মধ্যেই দেশটি বিশ্বের করোনাভাইরাস আক্রান্তে দ্বিতীয় এবং মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। ভারতে এখন সংক্রমণের এক ভয়াবহ ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ চলছে। ভারতে শনাক্ত করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট বা ধরণের এর ভয়াবহতা সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন। ভারতে এই ভ্যারিয়েন্ট গত ৫ অক্টোবর প্রথম শনাক্ত হয় মহারাষ্ট্রে। স¤প্রতি এটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সংক্রমণ ঠেকাতে দেশটির অনেক রাজ্যের বড় বড় শহরে কার্ফু জারি করা হয়েছে। দেশটিতে গত বুধবারও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৩৪ জন। একদিনে রেকর্ড ৪৫২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারতের মিডিয়াগুলোতে খবর বের হয়েছে, রাজধানী দিল্লিতে করোনায় মৃতদের দাহ করতে লাশ নিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করছে স্বজনরা। প্রতিদিন দেশটিকে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের পারদ ওপরে উঠছে। এ অবস্থায় দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এমনকি সরকার গঠিত করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তে কিছুদিনের জন্য ‘রেড অ্যালার্ট’ জারির তাগিদ দিয়েছে। তাদের বক্তব্য ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পারদ ঊর্ধ্বমুখি। শনাক্ত করোনাভাইরাসের ধরণ বিপদজনক। দুই দেশের সীমান্তও বন্ধ করা হয়েছে। এরপরও বাংলাদেশে কয়েকজনের শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি পেয়েছে।
সীমান্ত বন্ধ থাকলেও মানুষ সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই যাতায়াত করছেন। আর তাই যে কোন সময় দেশে ‘ভারতীয় ধরণের’ পূর্ণ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সীমান্ত বন্ধ থাকলেও বিশেষ ব্যবস্থায় বা অবৈধ পথে প্রতিদিন ভারত থেকে মানুষ সীমান্ত পাড় হয়ে বাংলাদেশে আসছে। তাই সীমান্তে দ্রæত রেড অ্যালার্ট জারি করা জরুরী। অন্যথায় ভয়াবহ বিপদের মুখে পড়তে পারে দেশ। একই সঙ্গে বৈধপথে যারা ফিরছেন তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু যারা অবৈধপথে ফিরছেন তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, দেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং যশোর জেলায় ৩ থেকে ৪ জন ভারত ফেরত যাত্রীর শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বি-১৬১৭ আমাদের দেশে এখন পাওয়া যাচ্ছে। সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন অফিসার সূত্র মতে, প্রতিদিনই সীমান্ত পাড় হয়ে বাংলাদেশে আসছে মানুষ। গতকালও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সোনামসজিদ স্থলবন্দর চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে আটকে পড়া ১১ জন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী দেশে ফিরেছেন। সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন অফিসার এসআই জাফর ইকবাল জানান, গত ২ দিনে ভারত থেকে দেশে ফিরলেন ৩৫ জন বাংলাদেশি। শুধু সোনামসজিদই নয়; ভারতে আটকেপড়া বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীরা দিনাজপুরের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরছেন। হিলি দিয়ে ফিরছে ভারতে আটকেপড়া বাংলাদেশিরা। গত বুধবারও হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে নারী-পুরুষ শিশুসহ ৩৭ জন দেশে ফিরেছেন। এছাড়াও প্রতিদিন সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, সিলেট, কুমিল্লার সীমান্ত এলাকা থেকে অনেক মানুষ দেশে প্রবেশ করছে। যাদের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার আখাউড়া ও বিবিরবাজার; যশোরের বেনাপোল; পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া-বাংলাবান্ধা; কক্সবাজার-টেকনাফ; ফেনীর বিলুনিয়া; রাজশাহীর সোনা মসজিদ; সাতক্ষীরার ভোমরা, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা; লালমনিরহাটের বুড়িমারি, কুড়িগ্রামের সোনাহাট ও তুরা রোড, রৌমারী; দিনাজপুরের হিলি ও রাধিকাপুর; সিলেটের তামাবিল; গোয়াইনঘাট, সুতারকান্দি-বিয়ানিবাজার; হবিগঞ্জ-জকিগঞ্জ; বাল্লা চুনারুঘাট, মৌলভীবাজারের ফুলতলা, চাতলা; ময়মনসিংহের নাকুগাও; শেরপুরের-গোবরা কুড়া, হালুয়াঘাট; জামালপুরের- ধানুয়া বকশিগঞ্জ থেকে বৈধ পথে প্রতিদিন ভারতে থেকে বাংলাদেশি নাগরিকরা প্রবেশ করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এসব স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় ৫শ’ জন দেশে প্রবেশ করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিফতরের পরিচালক (লাইন ডিরেক্টর এনসিডিসি) প্রফেসর ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেছেন, যে কোনো সময় দেশে করোনার ভারতীয় ধরণের পূর্ণ সংক্রমণ শুরু হতে পারে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দেশে চলে এসেছে। এমনকী চোখ রাঙাচ্ছে। সর্বক্ষণ মাস্ক পরতে হবে। বজায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, ভারতের ভ্যারিয়েন্টে ভারতে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। করোনায় ভারতে দৈনিক মৃত্যুর ৪ হাজারের উপরে। ভারতের এই ভ্যারিয়েন্টে দেশে যে কোনো সময় পূর্ণ সংক্রমণ শুরু হতে পারে।
প্রফেসর ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, ভারতের ভ্যারিয়েন্ট দেশে প্রতিনিয়ত শনাক্ত হচ্ছে। এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের হার অনেক বেশি। আমাদের দেশে এই ভ্যারিয়েন্টে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই আমরাও আমাদের হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রেখেছি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এবিএম খুরশীদ আলম ইনকিলাবকে বলেন, প্রতিদিনই ভারত থেকে মানুষ ঢুকছে। শুধু সীমান্ত দিয়েই নয়; অবৈধভাবে কিছু পথ দিয়েও প্রবেশ করছে। যাদের অনেক তথ্যই কারো জানা নেই। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, বুধবারও চাপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে নদী পার হয়ে মানুষ বাংলাদেশে এসেছে। সবাইকে শনাক্ত করা না গেলেও যাদেরকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে তাদের এক জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, কেউ যদি নিজে থেকে সচেতন না হয় তাহলে দেশ বিপদে পড়বে। কারণ অনেক সীমান্ত আছে যেখান থেকে দেশে আসা সহজ। দেশে ঢুকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করলেও তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। তাই করোনাভাইরাসের আর কোনো বিপর্যয় এড়াতে জরুরী ভারতের সঙ্গে সীমান্তে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত মুখপাত্র এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক প্রফেসর ডা. নজমুল ইসলাম বলেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এসব জেলায় স্থলবন্দর ব্যতীত অন্য পথে লোক ঢুকছে। তবে এ বিষয়ে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর সিভিল সার্জন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় পরিচালকদের সঙ্গে সভা করেছি। সভায় জেলাগুলোর প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সীমান্তে নজরদারি আরও বাড়াতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব বৈধ স্থলবন্দর ছাড়াও দুই দেশের বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকা। এর সব স্থানে কাঁটাতারের বেড়া নেই। এখনও অনেক এলাকা আছে একটি বাড়ির ভেতর দিয়ে সীমান্ত রেখা গেছে। এসব পথ দিয়ে অবৈধভাবে দৈনিক বিপুল সংখ্যক মানুষ দেশে প্রবেশ করে। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, স¤প্রতি যশোরের একটি স্থল বন্দর দিয়ে বৈধভাবে একদিনে ৩ জন দেশে প্রবেশ করেছেন। একই দিন ওই এলাকা থেকে অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করে ২৭ জন। সীমান্ত এলাকায় কর্মরত স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিন সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, সিলেট, কুমিল্লার সীমান্ত এলাকা থেকে অনেক মানুষ দেশে প্রবেশ করছে। যাদের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিন অবৈধ পন্থায় যে পরিমাণ মানুষ দেশে ঢোকে তাদের চিহ্নিত করা বা কোয়ারেন্টিনে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তারা সেখান থেকে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এনে চারপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে কিনা সেটিও জানা সম্ভব হচ্ছে না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আহমদ পারভেজ জাবীন ইনকিলাবকে বলেন, সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই দেশে লোক ঢুকছে। এভাবে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এ জন্য সীমান্তে নিñিদ্র তদারকি বাড়াতে হবে। বিশেষ করে আসা-যাওয়ার বৈধ পথগুলো ছাড়া পুরো সীমান্ত এলাকায় ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করতে হবে। যাতে সীমান্তরক্ষীদের ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে কেউ দেশে আসতে না পারে।
উল্লেখ্য, ভারতের নতুন ধরণের করোনা ভ্যারিয়েন্ট কোনোভাবেই যেন ছড়াতে না পারে সেজন্য সীমান্ত ১৪ দিনের বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ। গত ২৬ এপ্রিল থেকে এই নির্দেশ কার্যকর হয়েছে এবং যা এখনো বলবৎ রয়েছে। তবে যেসব বাংলাদেশির ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে তারা ভারতে বাংলাদেশি দূতাবাসের বিশেষ অনুমতি নিয়ে দেশে ফিরছেন। আবার কেউ কেউ অবৈধভাবে বিভিন্ন পথে দেশে ফিরছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।