পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কতিপয় ইসলামবিদ্বেষী ব্যক্তি সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করে আত্মঘাতী তৎপরতায় মেতে উঠেছে। অসংখ্য নিরপরাধ আলেমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতেকাফরত আলেমকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার আতঙ্কে আলেম ও ইমামরা মসজিদ-মাদরাসায় যেতে পারছেন না। মাদরাসা শিক্ষা ও আলেম-ওলামাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর যে অবদান তা ম্লান হতে চলেছে। ঈদের আগেই গ্রেফতারকৃত আলেমদের মুক্তি দিন। গতকাল শনিবার দেশের শীর্ষ ৩০ আলেম ও ইসলামী আন্দোলনের নেতা পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
শীর্ষ ৩০ আলেম : দেশের শীর্ষস্থানীয় ৩০ জন আলেম ঈদের আগেই গ্রেফতারকৃত আলেমদের মুক্তি এবং ঈদুল ফিতরের পরপরই কওমি মাদরাসা খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার একযুক্ত বিবৃতিতে তারা এই আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, পবিত্র রমজান রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস। আল্লাহর দয়া লাভের মাধ্যমে মানুষের পরিশুদ্ধ হয়ে ওঠার মাস। মানুষের প্রতি মানুষের সহমর্মিতার মাস। আল্লাহপাক তার বান্দাদের ভালোবাসেন। কোরআনে এসেছে নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে ওলামায়ে কেরাম তাকে বেশি ভয় করে। ঐশী জ্ঞানের অধিকারী ও নবীর ওয়ারিস ওলামায়ে কেরাম পথহারা মানুষকে পথের দিশা দেন। তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি যে, কিছু ইসলামবিদ্বেষী ব্যক্তি সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করে আত্মঘাতী তৎপরতায় মেতে উঠেছে। অসংখ্য নিরপরাধ আলেমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেশের নানাপ্রান্তে সহজ সরল আলেমদের বাড়ি বাড়ি পুলিশি তল্লাশির কারণে তাদের পরিবারের নারী-শিশু সদস্যরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। গ্রেফতার আতঙ্কে অনেক আলেম ও ইমামরা মসজিদ-মাদরাসায় যেতে পারছেন না। এসব কারণে মাদরাসা শিক্ষা ও আলেম-ওলামাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী যে অবদান রেখে চলেছেন, তা মøান হতে চলেছে।
বিবৃতিতে ওলামায়ে কেরামরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে আদর্শ মানুষ তৈরির প্রতিষ্ঠান কওমি মাদরাসা খুলে দিয়ে মানুষকে আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়ার পথ সুগম করে দিন। করোনা দুর্যোগের কারণে জাতীয় জীবনে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে উত্তরণে ইসলামের সঠিক নির্দেশনার আলোকে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি, কোরআন তিলাওয়াত, তওবা-ইস্তেগফার ও দোয়ার অনুকূল পরিবেশ দরকার। এজন্যে কওমি মাদরাসাগুলো খুলে দেয়া নেহায়েত প্রয়োজন। কওমি মাদরাসা জাতিকে সঠিক ধর্মীয় দিশা দেয়ার সাথে সাথে লাখ লাখ এতিম, অসহায় ও সামাজিকভাবে অবহেলিত প্রজন্মকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু বর্তমানে মাদরাসা বন্ধ থাকার কারণে লাখ লাখ এতিম, গরিব, অসহায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও জীবনযাত্রা থমকে যাবার অবস্থা তৈরি হয়েছে।
সে কারণে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নিকট সনির্বন্ধ আহ্বান জানাই, ঈদের আগেই গ্রেফতারকৃত নিরপরাধ আলেমদের মুক্তি দিন এবং ঈদের পরপর মাদরাসাগুলো খুলে দেয়ার অনুমতি দিন। আমরা দোয়া করি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দেশজাতিকে করোনা মহামারিসহ সকল আজাব থেকে রক্ষা করেন। করোনাভাইরাস ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় দূর করে মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেন।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করে, মাওলানা নুরুল হক (সভাপতি, কওমি মাদরাসা সংগঠন কুমিল্লা), শায়খুল হাদীস মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী (সিলেট), মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মুফতি গোলাম রহমান (দারুল উলুম ঢাকা), মাওলানা আনোয়ারুল করিম (যশোর), ড. মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, (জামিয়া আরাবিয়্যা নতুনবাগ ঢাকা), প্রফেসর মাওলানা তৈয়বুর রহমান নিজামী, (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), মাওলানা শহিদুল ইসলাম আনসারী, মাওলানা জামালুদ্দিন মাহমুদ, (কাটাখালী মাদরাসা রাজশাহী), মাওলানা আব্দুর রহিম ইসলামাবাদী, (নাজিরহাট চট্টগ্রাম), মাওলানা আব্দুল মাবুদ (হাকিমপুর বাগেরহাট), মাওলানা মনিরুল হক কাসেমী (কুমিল্লা), মুফতি আরিফ বিল্লাহ, (জামিয়া কারিমিয়া ডেমরা), মাওলানা আব্দুল হক কাওসারী (জামিয়া আশরাফিয়া মাদানিয়া, পটুয়াখালী), মুফতি রেজাউল করিম, (শায়খুল হাদীস, জামিয়া কারিমিয়া, ডেমরা ঢাকা), মুফতি আব্দুল হামিদ (কুষ্টিয়া), মাওলানা মনির আহমদ নদিম (চন্দনাইশ চট্টগ্রাম), মাওলানা শামসুল আলম (সাতকানিয়া চট্টগ্রাম) মাওলানা সৈয়দ মাসউদ আহমদ (মৌলভীবাজার), মুফতি রশিদ বিন ওয়াক্কাস (মাদানী নগর যশোর), মুফতি আহমদ আলী (মিফতাহুল উলুম ময়মনসিংহ), মাওলানা মাহমুদুল হাসান সালমানী (গফরগাঁও ময়মনসিংহ), মাওলানা আব্দুল মালেক চৌধুরী (দারুল উলুম সিলেট), মাওলানা মেরাজুল হক (জামালপুর), মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক (ফুলপুর ময়মনসিংহ), মাওলানা জাবের হোসাইন (ধলহারা মাগুরা), মুফতি শিহাবুদ্দিন কাসেমী (গোপালগঞ্জ), মুফতি গোলাম কিবরিয়া (দর্শনা চুয়াডাঙ্গা), মাওলানা ওসমান গনি (ঝিনাইদহ), মাওলানা রেজাউল করিম (দিনাজপুর), মাওলানা ফজলুল করিম (বগুড়া) ও মাওলানা রশিদ আহমদ (জামালগঞ্জ সুনামগঞ্জ)।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান মসজিদে ইতেকাফরত অবস্থায় হেফাজত নেতা ও জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সিনিয়র কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা অ্যাডভোকেট শাহিনুর পাশা চৌধুরির গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্রত্যেক নিরপরাধ মানুষের গ্রেফতার এবং হয়রানিই নিন্দনীয়; কিন্তু কিছু বিষয় ধর্মপ্রাণ মানুষের অন্তরে চরম আঘাত করে। একজন মানুষ যখন পবিত্র মসজিদে ইতেকাফে বসেন, তখন তিনি একমাত্র আল্লাহর ধ্যান খেয়াল ছাড়া দুনিয়ার সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। তিনি তখন আল্লাহর ঘরে আল্লাহর মেহমান হয়ে যান। এ অবস্থায় একজন মানুষকে গ্রেফতার করাটা চরম পর্যায়ের বাড়াবাড়ি। তাঁকে যদি গ্রেফতার করাটা এতোই প্রয়োজন হতো, তাহলে তিনিতো পালিয়ে যাননি। প্রশাসন কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে পারতো। শাওয়ালের চাঁদ উঠলে গ্রেফতার করতে পারতো। প্রয়োজনে তাঁকে কয়েকটা দিন মসজিদেই নজরদারিতে রাখা যেত। এঘটনার মধ্য দিয়ে প্রশাসনের একটি অংশ যে আলেমদের প্রতি এবং ইসলামপন্থী নেতাদের প্রতি কতোটা নির্মম মূর্তি ধারণ করেছে, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটল। সারা দেশে চলমান গ্রেফতার অভিযানে এমনও কিছু নিরীহ আলেম গ্রেফতার হচ্ছেন, যাদের হেফাজতের সঙ্গেও কোনো সম্পৃক্ততা নেই এমন কি অন্য কোনো ইসলামী দলের সঙ্গেও কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বিবৃতিতে তিনি বলেন, সারা দেশে চলমান গ্রেফতার অভিযানে ইসলামী আন্দোলনের এ পর্যন্ত ২৭ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। এ নিয়ে আমরা বিচলিত নই। কারণ এদেশের রাজনৈতিক কর্মীদের বিনা অপরাধে চোর ডাকাত আর ক্রিমিনালের মতো কারাভোগ করতে হয়, এটা এদেশের দূষিত রাজনীতির কালচার।
ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগর : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম বলেছেন, রমজান মাসেও প্রতিদিন আলেমদের গ্রেফতার ও হয়রানি করছে সরকার। বিভিন্ন মাদরাসায় তল্লাশীর নামেও নিরীহ ছাত্র ও শিক্ষকদের ভীতি সৃষ্টি করছে। এমতাবস্থায় সরকারকে গ্রেফতারি অভিযান বন্ধ রেখে আলেমদের এবং ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মুক্তি দিন। গত শুক্রবার বাদ জুমা পুরানা পল্টনস্থ নগর কার্যালয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন, সেক্রেটারী আলহাজ আব্দুল আউয়াল মজুমদার, ডা. শহিদুল ইসলাম, আলহাজ নজরুল ইসলাম খোকন, মাওলানা নজরুল ইসলাম, এমদাদুল ফেরদাউস ও হাজী আবু তাহের।
ইমাম খতিব ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ : এদিকে, ইমাম খতিব ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান শাইখুল হাদিস আল্লামা মুফতি সুলতান আহমাদ নিরীহ আলেম-ওলামাদের হয়ারানি বন্ধ করে গ্রেফতারকৃত আলেমদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যে সকল আলেম-ওলামা ইসলাম ও দ্বীন কায়েমের লক্ষ্যে ওয়াজ নসিহতসহ যাবতীয় দ্বীনি কার্যক্রম করে যাচ্ছেন তাদেরকে হয়রানি না করে দ্বীনি কাজে সহযোগিতা করুন। তা’হলে আল্লাহর পক্ষ থেকে দেশে শান্তি ও বরকত বর্ষিত হবে। পবিত্র মাহে রমজানে মুসলমানদের আধ্যাত্মিক নেতা আলেম-ওলামা খতিবরা জেলখানায় বন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। গতকাল শনিবার সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয় ৩৫০ দনিয়া খাদেমুল ইসলাম কমপ্লেক্সে হল রুমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে মুফতি সুলতান আহমাদ প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, নিরীহ আলেমরা আজ গ্রেফতার আতঙ্কে নিজ মাদরাসা ও বাড়িছাড়া। তিনি গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ করে গ্রেফতারকৃত নির্দোষ আলেমদের ছেড়ে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।