Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাষ্ট্রের মাথায় পচন ধরেছে

গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রসঙ্গে মনজিল মোরসেদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০২১, ১২:১২ এএম

‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)র’ প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেছেন, সংবিধানে লেখা আছে, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান- বাস্তবে নয়। এটি শুধুমাত্র কাগজে লেখা। ‘কলেজ ছাত্রী মুনিয়ার অপমৃত্যু ও গণমাধ্যমের ভ‚মিকা’ শীর্ষক টক শো’তে তিনি কথা বলেন। একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার ‘কারেন্ট অ্যাফেফার্স’ বিভাগে গত সোমবার এটি প্রচারিত হয়। টক শো’ সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক জ.ই. মামুন। এতে সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক কাবেরী গায়েন অংশ নেন।

অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ তার বক্তব্যে বলেন, মিডিয়া কাঠগড়ায় উঠেছে অনেক আগে। গণমাধ্যমকর্মীরা হয়তো বিষয়টি টের পাননি। আরো আগে থেকেই আস্তে আস্তে মিডিয়া কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে। কারণ মিডিয়াকে আমরা বলতাম ‘তৃতীয় চোখ’। অর্থাৎ আমার দুই চোখে দেখা যায়। মিডিয়া দিয়ে আরেকটি দেখি। অর্থাৎ তৃতীয় চোখ। আরেকটা আমরা বলতাম, চতুর্থ স্তম্ভ। অর্থাৎ একদিকে সংসদ, বিচার বিভাগ আর নির্বাহী বিভাগ। এর সঙ্গে আমরা যুক্ত করেছিলাম ফোর্থ পিলার। চতুর্থ স্তম্ভ। দেখুন কতবড় গুরুত্ব দিয়ে এ দু’টি বিষয় বলা হয়েছিল। কেন? মানুষের প্রত্যাশা ছিল অনেক। অনেক কিছু হবে রাষ্ট্রে। অনেক কিছু থাকবে। সব জায়গা থেকে তৃতীয় চোখ আমাদের সামনে নিয়ে আসবে। কিন্তু দেখুন, ৯০ সাল থেকেই তো দেখছি। আপনারা (সঞ্চালক) যারা তারা বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক উপরে উঠেছেন। জেনুইন জার্নালিস্ট তারা মেজরিটি না মাইনরিটি? সত্যিকার সাংবাদিকদের সংখ্যাটা ২০১০-২০১২ থেকে ধীরে ধীরে কমছে। পেশাদার সাংবাদিকরা এখন মাইনরিটি? আমি আমার তো মনে হয় মাইনরিটি। আপনি বলুন, আমার দেশে কি ৩০টি মিডিয়ার দরকার আছে? মূল সমস্যাটিই এটি। বাংলাদেশের যে অর্থনীতি, বাংলাদেশের যে লোকজন তাতে কি এতোগুলো ব্যাংক দরকার আছে? ব্যাংক এতোগুলো আছে বলেই তো এত টাকা লুট হচ্ছে। এত ব্যাংক না থাকলে তো টাকা চুরি করা যেত না।

অতিরিক্ত মিডিয়া করার উদ্দেশ্যই ছিল- পুরো বিষয়টি বাইপাস করে মিডিয়াটাকে করায়ত্ব করা। বঙ্গববন্ধু যে ইচ্ছে নিয়ে রাষ্ট্র স্বাধীন করেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিলেন কি কারণে? মানবাধিকার। গণতন্ত্র এবং আপনার কথা বলার স্বাধীনতা। এ জিনিসগুলো তো ছিল। অতিরিক্ত মিডিয়া করার উদ্দেশ্যই ছিল এই জিনিসগুলো আস্তে আস্তে বাইপাস করে গোটা মিডিয়াকে হাতে নিয়ে আসা। আপনারা একটু গবেষণা করে দেখুন তো, গত তিন বছর আগে যে টক শো হয়, এখন কত পার্সেন্ট লোক টক শো দেখে? আগে কত শতাংশ মানুষ টক শো দেখত। এখন কত শতাংশ দেখে? বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের দেখলেই মানুষ চ্যানেল চেঞ্জ করে ফেলে। কারণ মানুষ জানে, এইলোকগুলো এখানে কথা বলতে এসেছে কেন? সে হয়তো ভাইস চ্যান্সেলর হবে। নয়তো সে বিচারপতি হবে। নয়তো ডিএজি হবে। না হলে সে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতিসংঘে যাবে। না হলে ভারতীয় অ্যাম্বাসিতে অ্যাটাশে হবে। এ কারণে এখন অনেকেই দেখবেন টু-থার্ড দর্শক সোশ্যাল মিডিয়ায় চলে গেছে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার অবস্থা আরও খারাপ। যেখানে কোনো কন্ট্রোল নেই। হাজারও মানুষ। হাজারও লোক। যা লেখে যা বলে তা আসলে কোনো রকম হজম করার মতো নয়। হাজারও লোকের হাজারও বক্তব্য। কোনটা সত্য, কোনটা সঠিক, কোনটা বেঠিক এটি বের করা কঠিন। তিনি বলেন, প্রফেশনাল যারা আছেন সব মানুষগুলো নানাভাবে ডিভাইড হয়ে গেছে। আজকে ধরুন বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে চলছে অবিচার। আইনজীবীরা সমবেতভাবে কথা বলতে পারেন না। যারা সরকারে থাকেন তারা মনে করেন, তার পদ। তার মন্ত্রিত্ব, বিচারপতি, তার অ্যাটর্নি জেনারেল, তার ডিএজি এ পদগুলো চলে যাবে। তারা কথা বলেন না।

সাংবাদিকরাও বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। তারাও এরকম কে কোন পদে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে যাবে। অসুস্থ হলে ৪০ লাখ টাকা পাওয়া যাবে- এ সমস্ত কারণে তারাও এটি পারেন না। শিক্ষকরা? কে ভাইস চ্যান্সেলর হবে। কে কোথায় যাবে- এসমস্ত চিন্তা করে পারছেন না। পেশাদারিত্বের জায়গায় একদম পচন ধরে গেছে। এখন একটি কথা আসতে পারে- আপনি কি এর বাইরে? আমি অবশ্যই এর বাইরে নই। কিন্তু আজকে আমাদেরকে এই কথাগুলো বলতে হবে। আমাদের প্রত্যেকটা জায়গায় ঘুড়ে দাঁড়াতে হবে। এক সময় পাকিস্তানি শোষণ, বঞ্চনায় কোথায় গিয়েছিলাম? শোষণের বিরুদ্ধে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ করে দেশটাকে স্বাধীন করেছি। আজকে রাষ্ট্রের মাথায় পচন ধরে গেছে। সংবিধানে বলা আছে, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। একটি মামলা হবে। মামলার যে অভিযোগ সেটির তদন্ত হবে। তার সঙ্গে সমান আচরণ করা হবে। আজকে যদি ধরুন আসামিটা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে হতো। কিংবা বিএনপি’র কোনো নেতার ছেলে হতো- কি হতো বলেন তো? সে কি রাত একটার সময় গ্রেফতার হতো না? তার কি পরের দিন রিমান্ড যাইতো না? আইনটিকে যে ভাগ ভাগ করা হলো। এটির দায়িত্ব কার? সবগুলো দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রতো আমার হাতে নয়। রাষ্ট্র যে চালায় তার হাতে। রাষ্ট্রের মধ্যে বড় দুর্বলতা হচ্ছে, কোনো একজন ব্যক্তির মস্তিষ্ক দিয়ে সবকিছু কন্ট্রোল করা সম্ভব নয়। রাষ্ট্র চলতে পারে না। এজন্যই রাষ্ট্রের সংবিধানে মন্ত্রিপরিষদের কথা বলা হয়েছে। অ্যাটলিস্ট ৫০ জন লোক রাষ্ট্রটা চালাবেন। কিন্তু আমার দেশের দুর্ভাগ্য হলো, ওই যে ৪৯ জন, প্রধানমন্ত্রীর ওপর দায়ভার দিয়ে দুর্নীতি, অন্যায়, অবিচার করছেন। চুরি করলে যাতে সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা না যায়। আমরা কতটা নিচে নেমে গেছি !



 

Show all comments
  • Dadhack ৫ মে, ২০২১, ২:১২ পিএম says : 0
    In Islam every body equal to Allah.. When Omar [RA] son committed a major crime, Omar [RA] whipped his son publicly and his son died, this is the Teaching of Allah. Our country is ruled by enemy of Allah as such they are committing severe oppression on us in every sector in our life.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ