পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ব্যাংক লুটেরা পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক এ কে এম সাহিদ রেজা। অবশেষে ফাঁসলেন। দুর্নীতির দায়ে এবার সাহিদ রেজাকে অপসারন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক আদেশে সাহিদ রেজা’কে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী পরিচালক পদ থেকে অপসারনের আদেশ প্রদান করা হয় এবং আগামী ২ বছরের জন্য তিনি কোনভাবেই ব্যবস্থাপনায় সংযুক্ত হতে পারবেন না বলে আদেশ দেয়া হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আদেশে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত বিশেষ পরিদর্শনে এ কে এম সাহিদ রেজা এর বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লি. থেকে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক লি. এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লি. এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাগুজে/অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে দুর্নীতি, জালিয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে সৃষ্ঠ ঋনের মধ্যে ৪টি অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠান যথা- এমটিবি মেরিন লি., উইনটেল ইন্টারন্যাশনাল লি., কনিকা এন্টারপ্রাইজ, গ্রিনলাইন ডেভলপমেন্ট লি. এর নামে সৃষ্ঠ/গৃহীত ঋনের অর্থের একটি অংশ রেজার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করে ঋন নিয়মাচার ও বিধি-বিধান লঙ্ঘন করায় এবং পি কে হালাদারের দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে রেজার সম্পৃক্ততা, ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লি.-এর ঋনের নামে অর্থ সরানোর মাধ্যমে ঋন নিয়মাচার ও বিধি-বিধান লঙ্ঘন অভিযোগ আনা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ৪৬ ধারার আওতায় মার্কেন্টাইল ব্যাংক লি.-এর পরিচালক পদ থেকে এ কে এম সাহিদ রেজাকে অপসারণের আদেশ প্রদান করা হয়। ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ৪৬ (৩) ধারার বিধান অনুযায়ী এ আদেশের তারিখ থেকে দুই বছর তিনি উক্ত ব্যাংক কোম্পানী বা অন্য কোন ব্যাংক কোম্পানীর ব্যবস্থাপনায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
সূত্র মতে, আর্থিক খাতে সংঘবদ্ধ চক্র তৈরী করে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগ পিকে হালদারের বিরুদ্ধে। প্রাথমিক ভাবে দুদক ৬২ ব্যংক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীকে তার সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পিকে হালদার সংশ্লিষ্টতার এখনও পর্যন্ত ২৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে ৫ জন।
এদিকে আমানতকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়া পিকে হালদারের অন্যতম ভাগীদার একেএম সাহিদ রেজা। পিকে হালদারের মাধ্যমে এমটিবি মেরিন লিমিটেডের ৬ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন হয় ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি। এই ঋণ হিসাব থেকে একেএম সাহিদ রেজার মালিকানাধীন পদ্মা ওয়েভিং, পদ্মা বিøচিং, ফ্যাশন প্লাসের মার্কেন্টাইল ব্যাংকে থাকা হিসাবে সাড়ে ৫ কোটি টাকা জমা হয়।
উইন্টেল ইন্টারন্যাশনালের ৬৮ কোটি টাকা ঋণের ১৪ কোটি টাকাও গেছে সাহেদ রেজার ৪ প্রতিষ্ঠানে। গ্রিনলাইন ডেভেলপমেন্টের ৬৪ কোটি টাকার ঋণের ৭ কোটি টাকা জমা হয় পদ্মা ওয়েভিং ও ফ্যাশন প্লাসের হিসাবে। এভাবে পিকে হালদারের কাগুজে প্রতিষ্ঠানে ঋণের ২৮ কোটি টাকা জমা হয় সাহিদ রেজার বিভিন্ন হিসাবে। বিএফআইইউ’র প্রতিবেদনে পিকে হালদারের নিয়ন্ত্রণাধীন আইএলএফএসএলের অনৈতিক ঋণ সুবিধা সাহিদ রেজা পেয়েছেন তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।
সূত্র মতে, সাহিদ রেজা মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালীন ৯৫৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা ১০টি লিজিং কোম্পানিকে ঋণ দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড, বে-লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফাস্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড এবং এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
এর বিপরীতে সুবিধা হিসেবে তিনি হয় ক্যাশ টাকা অন্যথায় নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠানে নেয়া এই ঋণের পরিমানও ৮৮৩ কোটি টাকার বেশি। ওই সময়ে সাহিদ রেজা কয়েকটি ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানি থেকে ৮৮৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। যে সব প্রতিষ্ঠানের নামে তিনি ঋণ নিয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- অ্যালুর এ্যাপারেলস লিমিটেড, ফ্যাশন প্লাস লিমিটেড, পদ্মা বিøচিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড, পদ্মা ওয়েভিং লিমিটেড, রেজা ফেব্রিকস লিমিটেড এবং রেজা ফ্যাশন লিমিটেড।
সূত্র মতে, সাহিদ রেজা শূণ্য দশমিক ২৮ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে প্রভাব খাটিয়ে এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যানের পদ বাগিয়ে নেন এবং বিভিন্ন বেনামী ঋণ প্রদান করে অনৈতিক সুবিধা ভোগ করেন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতিটি কোম্পানীর পরিচালকদের পেইড আপ ক্যাপিটালের ২ শতাংশ শেয়ারের ধারণের বাধ্যবাধতা আসে। সে অনুযায়ী সাহিদ রেজার ক্যাজুয়াল ভ্যাকেন্সি হয়ে পরিচালক পদ শূণ্য হয়। সাহিদ রেজা ২০১৪ সালে পি কে হালদারের নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকা রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের মাধ্যমে পিকে হালদারের যোগসাজসে ৩৪ কোটি টাকার শেয়ার ক্রয় করে রাতারাতি শূণ্য দশমিক ২৮ শতাংশ শেয়ার থেকে ৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক হয়ে যান। পরিচালকদের শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে ঢাকা ষ্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডে ঘোষণা দিয়ে শেয়ার ক্রয় করতে হবে। কিন্তু সাহিদ রেজা কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের নিয়ম লঙ্ঘন করে ঘোষণা ছাড়াই পি কে হালদারের সহযোগিতায় অনৈতিকভাবে মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের ৫ শতাংশ শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে পুনঃরায় পরিচালক পদ বাগিয়ে নেন।
সাহিদ রেজার পরামর্শক্রমে পিকে হালদার তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন রেপটাইলস কোম্পানীর নামে মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের ৫ শতাংশ শেয়ার ক্রয় করেন এবং পরবর্তীতে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে পিকে হালদারের মনোনীত ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্তির জন্য দেনদরবার করেন। যেখানে সাহিদ রেজার পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। পুনঃরায় পরিচালক পদে আসার পর সাহিদ রেজা মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডকে ব্যবহার করে বিপুল পরিমান অর্থ সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন।
উল্লেখ্য, সাহিদ রেজা চাকরী জীবনের শুরুতে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের মহাখালী শাখার একজন ক্যাশ অফিসার ছিলেন। এ সময় তিনি ব্যাংকের শৃংখলা পরিপন্থী কর্মকান্ড করায় চাকুরীচ্যুত হন। সেই ক্যাশ অফিসার বর্তমানে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
শাহিদ রেজা নানা বিতর্কিত কর্মকান্ড করার পরও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের পরিচালক এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংক ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান হিসাবে আছেন। এমনকি শাহিদ রেজার ছেলে রাকিম রেজা রুশোকে প্রভাব খাটিয়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের এসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানীর চেয়ারম্যান পদে এবং স্ত্রী জোবেদা বেগমকে বর্তমানে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান পদে বসিয়েছেন। অবশ্য পরিবারের অন্যরা পদে থাকলেও আড়াল থেকে সবকিছু করছেন সাহিদ রেজা। অবশ্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্ট ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে ইতোমধ্যে এ কে এম শাহেদ রেজাসহ তার পরিবারবর্গ ও কর্মচারীদের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে।
এছাড়াও এ কে এম সাহিদ রেজার যোগসাজসে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে বড় অংকের ‘ঋণ ডাকাতি’র অভিযোগ রয়েছে রতনপুর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে। বিষয়টি ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন ব্যাংকটির সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক আমিরুল ইসলাম। বড় অঙ্কের ঋণ জালিয়াতি রোধ করার চেষ্টা করেও পুরস্কৃত হওয়ার পরিবর্তে ‘শাস্তি’ পান ওই শাখা ব্যবস্থাপক। সাহিদ রেজার নির্দেশে একজন মেধাবী ও দক্ষ শাখা ব্যবস্থাপক আমিরুল ইসলামকে প্রধান কার্যালয়ে ক্লোজ করা হয় এবং রাঙ্গামটি শাখার ব্যবস্থাপককে জুবলী রোড শাখায় দেয়া হয়। পরবর্তীতে অবশ্য তিনি দুষ্টুচক্রের সাথে আপোষ না করে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চাকুরী ছেড়ে অন্য একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে যোগ দেন।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানিয়েছে, সাহিদ রেজা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে চাঁদা দেয়ার নামে ব্যাংক থেকে ৫ কোটি উত্তোলন করেন এবং ৩ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিয়ে বাকী ২ কোটি টাকা নিজে আত্মসাত করেছেন। পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার তত্ত্বাবধানে ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে সাহিদ রেজাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।