Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনায় ৬৫.৭১ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে

ওয়েবিনারে বক্তারা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১২:১০ এএম

করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে সারাদেশের ৬৫ দশমিক ৭১ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে এবং ৩৭ দশমিক ১৪ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে খাদ্যসহ দৈনন্দিন চাহিদা মেটাচ্ছে বলে জানিয়েছে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ। গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও খাদ্য গ্রহণে প্রভাব’ শীর্ষক জরিপের ফলাফল নিয়ে এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব তথ্য জানান। এ সময় বক্তারা বলেন, করোনার প্রথম ধাক্কা কিছুটা কাটিয়ে উঠতে শুরু করলেও দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশে ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার করোনার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে লকডাউন শুরু করেছে। এতে আয় কমে যাওয়ায় বিপদে পড়েছে দেশের দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষ। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খাদ্যসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রফেসর ড. সায়মা হক বিদিশা ও দক্ষিণ এশিয়া, ইকো কো-অপারেশন কর্মসূচির পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। স্বাগত বক্তব্য ও সঞ্চালনা করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী। এ সময় জরিপের সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করেন বিআইডিএস-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ। এছাড়াও আয়োজকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি উপস্থাপিত সুপারিশগুলোর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, আমরা একটি অস্বাভাবিক সময় পার করছি। মানুষের আয় কমে গেছে। আবার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি দরিদ্র মানুষকে বিপদগ্রস্ত করেছে। আমরা টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে খাদ্য সামগ্রী বিক্রির একটি উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারেও তেল, চিনি, পেঁয়াজসহ দ্রব্যমূল্য বেড়ে চলেছে, যার প্রভাব দেশের বাজারেও পড়ছে। দাম কমানোর জন্য খাদ্য, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যার যার জায়গা থেকে কাজ করছে। আমরা মনিটরিং করছি, কিন্তু পর্যাপ্ত লোকবল আমাদের নেই।

মন্ত্রী বলেন, এ রমজানে টিসিবির মাধ্যমে বিক্রির জন্য ৩৫ হাজার টন সয়াবিন তেল বরাদ্দ করা হয়েছিল। তবে এ মুহূর্তে মানুষের কাজ না থাকাটা আসলেই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সরকার এজন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। আমাদের এখন আসলে কোভিড মাথায় রেখেই পরিকল্পনাগুলো করতে হবে।
ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম নেই। সেজন্য দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কমিশন গঠন করা দরকার। খাদ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা দরকার। এক্ষেত্রে শিশুদের পুষ্টির বিষয়টির উপর বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, শহরের বস্তিবাসী দরিদ্রদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকা উচিত ছিল বাজেটে। জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কার্যক্রমগুলো যত দ্রæত সম্ভব ডিজিটালাইজেশন করা দরকার।

জরিপের ফলাফল উপস্থাপনকালে ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের অর্থনীতি গত বছর থেকেই বিরাট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখনই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ। ইতিমধ্যে চলছে সরকার বিধিনিষেধ। এর ফলে নি¤œ আয়ের মানুষ বিশেষত দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, রাস্তার হকাররা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

জানা গেছে, জরিপে অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগ ব্যক্তির পরিবার তিনবেলা খাবার যোগাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। তাদের প্রাণিজ আমিষ গ্রহণের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে। প্রায় ৬৫ দশমিক ৭১ শতাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। ৩৭ দশমিক ১৪ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে খাদ্যসহ দৈনন্দিন চাহিদা মেটাচ্ছেন। স্বল্প আয়ের এসব মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারি সহায়তা দরকার।

নাজনীন আহমেদ উল্লেখ করেন, বর্তমানে চালের বাজারে সিন্ডিকেটের দেখা পাওয়া যায় না। কিন্তু সরকার অনুমোদিত বৃহৎ রাইস মিলাররা যে পরিমাণ চাল মজুত করার এখতিয়ার রাখে তা চালের বাজার অস্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণে করণীয় বিষয়গুলো তিনি তুলে ধরেন। ১. খাদ্য নিরাপত্তাকে নাগরিকের অধিকার হিসেবে নিশ্চিত করতে হবে। ২. খোলা বাজারে চাল বিক্রি বাড়াতে হবে। ৩. আগামী এক বছরের জন্য এলাকাভিত্তিক কয়েকটি স্থায়ী খোলা বাজারে বিক্রির জন্য দোকান/স্টোর তৈরি করা যেতে পারে। ৪. টিসিবির বিক্রির সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। ৫. সমাজের ধনী ব্যক্তিদের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভীত হয়ে দ্রব্যসামগ্রী কিনে মজুত করার প্রবণতা পরিহার করতে হবে এবং ৬. স্থানীয় পর্যায়ে মুদি দোকানগুলোর মজুত ব্যবস্থা নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ