পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এক সপ্তাহে মারা গেছে ৫৬৫ জন : রাজধানীসহ সারা দেশে নমুনা পরীক্ষা কমেছে
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে লকডাউন, টিকা কার্যক্রম, কোনো কিছুতেই যেন ভাইরাসটির সংক্রমণ ও মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। গত ৫ এপ্রিল শুরু হয়েছে লকডাউন। ১৪ এপ্রিল থেকে চলছে কঠোর লকডাউন। লকডাউনে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমলেও দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে। গত দুই দিন মৃত্যুর সংখ্যা শতকের ঘর ছুঁই ছুঁই করছে। দুই দিনে মারা গেছে ১৯০ জন। আর গত ৯ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৭ দিনে দেশে করোনায় মারা গেছেন ৫৬৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। অথচ অগ্রিম টাকা দিয়ে ভারতের কাছ থেকে কেনা করোনার টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আবার নিত্যদিনের নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমে গেছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত এক দিনে ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনাভাইরাসে দেশে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজারের বিষাদময় মাইলফলক ছাড়ল। নতুন মৃত্যু ৯৪ জন নিয়ে মৃত্যের সংখ্যা দাঁড়াল ১০ হাজার ৮১ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতর এ তথ্য জানায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সংক্রমণের বিস্তার রোধে কঠোর লকডাউনের মধ্যে দিনে নমুনা পরীক্ষা কমে যাওয়ায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজার ১৯২ রোগী শনাক্তের পর মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭ হাজার ৩৬২ জন। তবে একদিনে ৫ হাজার ৯১৫ জনের সেরে ওঠার তথ্যও জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে। সব মিলিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫ লাখ ৯৭ হাজার ২১৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রকাশিত হিসেব অনুযায়ী করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ৯ এপ্রিল মৃত্যু হয়েছে ৭৪ জন। অতঃপর ১০ এপ্রিল ৬৩ জন, ১১ এপ্রিল ৭৭ জন, ১২ এপ্রিল ৭৮ জন, ১৩ এপ্রিল ৮৩ জন, ১৪ এপ্রিল ৯৬ জন ও গতকাল ১৫ এপ্রিল ৯৪ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতর কার্যত ২৪ ঘণ্টার পর পর মৃত্যুর এই হিসেবে পরের দিন অফিসিয়ালি প্রকাশ করে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম আক্রান্তের খবর আসে ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। ২০২০ সালের শেষ দিকে মৃত্যুর সংখ্যা কমে এলেও সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর এখন মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে অনেক বেশি। চলতি বছরের (২০২১) ৩১ মার্চ ৫২ জনের মৃত্যুর পর থেকে করোনায় দৈনিক মৃত্যু কখনোই ৫০ এর নিচে নামেনি। এর মধ্যে গত বুধবার একদিনে সর্বাধিক ৯৬ জনের মৃত্যু ঘটে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর গত ১৫ দিনেই এক হাজার করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ঘটেছে।
২০২০ সালে দেশে করোনা সংক্রমণের পর প্রথম মৃত্যুর আড়াই মাস পর ওই বছরের ১০ জুন মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছিল। এরপর ওই বছরের ৫ জুলাই ২ হাজার, ২৮ জুলাই ৩ হাজার, ২৫ অগাস্ট ৪ হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর ৫ হাজার ছাড়ায় মৃতের সংখ্যা। অতঃপর কমে আসে মৃত্যুর গতি। ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর ৬ হাজার, ১২ ডিসেম্বর ৭ হাজারের ঘর ছাড়ায় মৃত্যুর সংখ্যা। ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ৮ হাজার এবং গত ৩১ মার্চ মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা প্রথম থেকেই সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে সতর্ক করে আসছিলেন। কিন্তু সরকারের ঢিলেমি এবং স্ববিরোধী নানামুখি কর্মকান্ডে করোনা করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকে। করোনা দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর গত কয়েক দিন ধরেই দিনে ৬ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়ে আসছিল। এর মধ্যে গত ৭ এপ্রিল রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ৩৩তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ৩৮তম অবস্থানে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্ত রোগীর হার ২০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এই পর্যন্ত শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৮৩। আর শনাক্ত রোগীদের মৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৪৩ শতাংশে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২৫৭টি ল্যাবে ১৯ হাজার ৯৫৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৫১ লাখ ১৫ হাজার ৫৭২টি নমুনা। গত একদিনে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৬৪ জন পুরুষ আর নারী ৩০ জন। তাদের মধ্যে ৪ জন বাড়িতে মারা গেছেন, বাকিদের মৃত্যু হয়েছে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে। মৃতদের মধ্যে ৫২ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ২৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, ১৪ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর এবং ৩ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল। মৃতদের মধ্যে ৬৯ জন ঢাকা বিভাগের, ১২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৬ জন রাজশাহী বিভাগের, ৩ খুলনা বিভাগের, ২ জন বরিশাল বিভাগের, ১ জন করে সিলেট ও রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ১০ হাজার ৮১ জনের মধ্যে ৭ হাজার ৪৯৯ জনই পুরুষ এবং ২ হাজার ৫৮২ জন নারী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হওয়া পাঁচ হাজার ৯১৫ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের আছেন তিন হাজার ৮২২ জন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের এক হাজার ৮০০ জন, রংপুর বিভাগের আছেন ৩৫ জন, খুলনা বিভাগের ৪২ জন, বরিশাল বিভাগের ৩০ জন, রাজশাহী বিভাগের ৬৩ জন, সিলেট বিভাগের ১০৭ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের আছেন ১৬ জন।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর ‘কঠোর লকডাউন’ শুরুর আগে মানুষ যেভাবে গ্রামের পথ ধরেছিল, তাতে সংক্রমণ সারা দেশে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীলদের স্ববিরোধী কথাবার্তায় মানুষ ভরসা পায়নি। গার্মেস্টস, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, শেয়ারবাজার খোলা রেখে অন্য সব বন্ধ করায় মানুষ লকডাউনকে ভালভাবে মেনে নেয়নি। সরকার নিম্নআয়ের মানুষকে যে সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয়, তো কার্যকত ঘোষণার মধ্যেই সীমাবন্ধ থাকে। ফলে বাধ্য হয়েই নিম্নআয়ের গরিব মানুষ নিজেদের মতো করে লকডাউনের সময় রাজধানী ছাড়তে শুরু করেন। গাদাগাদি করে ঘরে ফেরায় করেনা সংক্রমণের ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে রোগীর সংখ্যা যত দ্রæত বাড়ছে। এমন বৃদ্ধি ২০২০ সালে দেখা যায়নি।
মূলত করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা গত বুধবার ৭ লাখ ছাড়িয়ে যায়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, এক লাখ রোগী বাড়তে মাত্র ১৬ দিন সময় লেগেছে। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে এক লাখ রোগী বাড়তে সবচেয়ে কম সময় লেগেছিল ৩০ দিন। চীন থেকে ছড়িয়ে মহামারি বাধিয়ে দেওয়ার পর ২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের তিন মাস পর ১৮ জুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়ায়। এর ঠিক এক মাস পর ১৮ জুলাই রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছিল দুই লাখে। এর পরের এক লাখ রোগী শনাক্ত হয় এক মাস ৯ দিনে; ২৬ অগাস্ট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়ায় তিন লাখ। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়াতে লেগেছিল আরো দুই মাস। তা পাঁচ লাখে পৌঁছাতে সময় লাগে ৫৫ দিন। এরপর সংক্রমণের গতি কিছুটা কমতে থাকায় ১০২ দিন পর এক লাখ রোগী শনাক্ত হয়। ২০২১ সালের ২৯ মার্চ শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়েছিল। এরপর সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে দ্রুত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ২৯ মার্চের পর দৈনিক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক দিনের জন্যও ৫ হাজারের নিচে নামেনি। বিশ্বে করোনা রোগীর সংখ্যায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৩৩তম। ভারতের অবস্থা আরো ভয়াবহ। দেশটিতে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে দ্রæত। দেশটি ব্রাজিলকে হটিয়ে এখন সংক্রমণের দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ভারতে এক কোটি ৩৮ লাখ রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রথম স্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩ কোটি ১৩ লাখ। তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে রোগী ১ কোটি ৩৫ লাখ। এদের চেয়ে অনেক কম ৫১ লাখ লাখ রোগী নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। রাশিয়া পঞ্চম এবং যুক্তরাজ্য রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে।
সার্কভুক্ত দেশ পাকিস্তানে রোগীর সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে একটু বেশি। দেশটিতে শনাক্ত হয়েছে ৭ লাখ ৩৪ হাজার কোভিড-১৯ রোগী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে এখন দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্রæত বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে এই অঞ্চলে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেছে ৬৩ শতাংশ। এশিয়ার পর ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির গতি বেশি হলেও তা তুলনায় অনেক কম। সেখানে এক সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ২২ শতাংশ। আমেরিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এক সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যথাক্রমে ৫ ও ৬ শতাংশ। বিপরীত চিত্র দেখা গেছে ইউরোপ ও আফ্রিকার ক্ষেত্রে। ইউরোপে এক সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি ৪ শতাংশ কমেছে, আফ্রিকায় কমেছে ১৪ শতাংশ।
বাংলাদেশে নমুনা পরীক্ষা কমে গেছে। ফলে রোগীর সংখ্যা কম। তবে শতকরা হিসেবে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে মৃত্যুও বেড়েছে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর প্রতিদিনই ৫০ জনের বেশি মৃত্যুর খবর আসছে। গত বুধবার ৯৬ জনের মৃত্যুর রেকর্ড হয়। দেশে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষাসহ নানা কারণ চিহ্নিত করছেন গবেষকরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।