পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া গড়তে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ও নীতি-নির্ধারকদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এই শুভ মুহূর্তে আমি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নেতা এবং নীতি-নির্ধারকদের প্রতি একটি শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষের বসবাস। এ অঞ্চলে যেমন সমস্যা রয়েছে, তেমনি রয়েছে প্রচুর সম্ভাবনা। আমাদের এ অঞ্চলের মানুষের রয়েছে অসম্ভব প্রাণশক্তি, উদ্ভাবন ক্ষমতা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে জয় করে টিকে থাকার দক্ষতা। পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে প্রাপ্ত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আমরা সহজেই দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটাতে পারি। আমরা যদি আমাদের জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করি, তাহলে অবশ্যই দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।
মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর প্যারেড স্কয়ারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ‘মুজিব চিরন্তন’ শীর্ষক মূল প্রতিপাদ্যের দশ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার ৮ম দিনের (২৪ মার্চ ২০২১) অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ‘শান্তি, মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত’। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বঙ্গবন্ধুর ছোটকন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই লড়াই করেননি। তিনি বিশ্বের সব নিপীড়িত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখতেন। তিনি শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান এবং আঞ্চলিক অখন্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত অসা¤প্রদায়িক সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে- আমরা সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।
ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ভুটান আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী বন্ধু-রাষ্ট্র। ভৌগোলিক নৈকট্য ছাড়াও আমাদের রয়েছে প্রায় একই ধরনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের অবস্থান প্রায় এক এবং অভিন্ন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে সহযোগিতার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভুটানের প্রয়াত মহামান্য তৃতীয় রাজা জিগমে দোর্জি ওয়াংচুক এবং সে দেশের জনগণ স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের শুধু সমর্থনই দেননি, সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ভুটানের তরুণেরা ভারতের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আহত এবং অসুস্থ বাঙালি শরণার্থীদের সেবা করেছিলেন।
বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ভুটানই প্রথম দেশ যে স্বাধীন বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়লাভের আগেই ৬ ডিসেম্বর ভুটান বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। আমরা ভুটানের জনগণের সে অবদানের কথা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করি। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১২ সালে ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দোর্জি ওয়াংচুককে ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার’ সম্মাননায় ভূষিত করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, পর্যটন, শিক্ষা ইত্যাদি খাতে সহযোগিতা ক্রমাগত বাড়ছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভুটানি ছাত্রছাত্রী বাংলাদেশে চিকিৎসাশাস্ত্রসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। আজকের সম্মানিত অতিথি প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসাবিদ্যায় গ্রাজ্যুয়েশন করেছেন। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। ভুটানের মানবসম্পদ উন্নয়নে সহযোগী হতে পেরে আমরা গর্বিত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালা ঘিরে ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যেই মালদ্বীপ এবং নেপালের মহামান্য প্রেসিডেন্টরা এবং শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। আজকের অনুষ্ঠানে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং আমাদের মধ্যে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন। তাঁর উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানকে মহিমান্বিত করেছে এবং আমরা নিজেরা সম্মানিত বোধ করছি।
আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। আলোচনা পর্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. রওনক জাহান। এছাড়া ভ্যাটিক্যান সিটি থেকে প্রাপ্ত পোপ ফ্রান্সিস এবং ভারতের কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ভিডিওবার্তা প্রচার করা হয়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে বন্ধুরাষ্ট্র ভুটানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনা, ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যের ওপর টাইটেল অ্যানিমেশন ভিডিও, ‘ঐ মহামানব আসে’ শীর্ষক রবীন্দ্র সংগীত, ‘অজর, অমর, অক্ষয়’ শীর্ষক নজরুল সংগীত, ‘লোকনায়ক’ শীর্ষক লোকসংগীত, স্পন্দন পরিবেশিত ‘মহাকালের গণনায়ক: তোরা সব জয়ধ্বনি কর’, বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠান ‘শতবর্ষ পরেও’, কনসার্ট ফর বাংলাদেশ-১৯৭১ এর ১ আগস্টের অনুষ্ঠানের চুম্বক অংশ, ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক দেশি শিল্পীদের পরিবেশনা এবং সব শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে ‘জর্জ হ্যারিসনের বাংলাদেশ’ পরিবেশনা করা হবে।
বাংলাদেশ আমার দ্বিতীয় ঘরের মতো: লোটে
বাংলাদেশকে নিজের ‘সেকেন্ড হোম’ বা দ্বিতীয় ঘর মনে হয় বলে মন্তব্য করেছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। বাংলাদেশ আর ভুটানের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য আছে বলেও মন্তব্য করেন ঢাকা সফররত দেশটির প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন লোটে।
গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তৃতাকালে লোটে শেরিং বলেন, বাংলাদেশকে আমার সেকেন্ড হোম মনে হয়। দুই দেশের মধ্যে অনেক মিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে বলেছেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়।’ আমাদের দেশের রাজাও বলেছিলেন, ‘সবার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক’-এর কথা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রশংসা করে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নেতা হিসেবে পেয়ে এই দেশের মানুষ সত্যিই ভাগ্যবান। আমার বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তাকে নিয়ে গর্ববোধ করতেন। তিনি এবং তার দল যে দক্ষতার সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরো বলেন, বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। এই করোনার মধ্যেও দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ জিডিপি বাংলাদেশের। এগুলো জেনে আমাদের সত্যিই আনন্দ অনুভূত হয়।
এছাড়াও নিজ বক্তব্যে কয়েক দফা বাংলায় শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাংলাদেশ ও এদেশের জনগণের প্রশংসা করেন তিনি। একই সঙ্গে উভয় দেশ ও দেশের জনগণের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করেন একসময় বাংলাদেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে থাকা ডা. লোটে শেরিং।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।