Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রাবেয়া-রোকেয়ার ঘরে ফেরা সবার জন্য গর্বের

মুজিববর্ষে সংযুক্ত মাথা থেকে দুই বোনের মুক্তি বিমানের যাত্রীসেবার মান বাড়াতে হবে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০২১, ১২:০২ এএম

মুজিববর্ষে সংযুক্ত মাথার জমজ বোন রাবেয়া ও রোকেয়াকে সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথক করে তাদের সুস্থ শরীরে বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়াকে বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন হিসেবে অভিহিত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)-এ সংযুক্ত মাথা থেকে মুক্তি পাওয়া রাবেয়া-রোকেয়ার বাড়ি ফিরে যাওয়া উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত সিএমএইচ-এর অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে রাবেয়া-রোকেয়া বাড়ি ফিরে যাবে, তাদের মা-বাবার কোলে হেসে খেলে বেড়াবে এটা সত্যি খুব বড় পাওয়া। যেখানে আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করছি। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছি, ঠিক এই সময়ে এত বড় একটা সফল অস্ত্রোপচার করা এবং সফলতা অর্জন করা এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বিরাট অর্জন। মুজিববর্ষে জোড়া মাথা থেকে মুক্তি পাওয়া রাবেয়া-রোকেয়ার শুভ গৃহ প্রত্যাবর্তন সকলের জন্য আনন্দের এবং গর্বের।

এই মাসে (মার্চ) বাঙালির ইতিহাসে অনেক কিছু ঘটেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন, দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়, ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা আন্দোলন শুরু হয়েছিল, ৭১ এর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রী যমজ শিশুদের জিজ্ঞেস করেন তারা কেমন আছে। উত্তরে বাচ্চাদের একজন জানায়, সে ভালো আছে এবং সে প্রধানমন্ত্রীকে কেমন আছেন জিজ্ঞেস করায় প্রধানমন্ত্রী জবাব দেন তিনিও ভালো আছেন।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, ছোট বোন শেখ রেহানা তাকে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবর দেখিয়ে যমজ শিশুদের সম্পর্কে অবহিত করার পরে তিনি সংযুক্ত শিশুদের চিকিৎসার উদ্যোগ নেন। রাবেয়া-রোকেয়া’র মতো যমজকে পৃথক করার মতো এক বড় অপারেশন বাংলাদেশে করার কারণ হলো, এখনকার চিকিৎসক এবং টেকশিয়ানদের একটা অভিজ্ঞতা হবে। ৪৮টি অপারেশন এবং ৩৬ ঘণ্টা ধরে অপারেশন করা, এটা বিরাট ব্যাপার। হাঙ্গেরি থেকে আসা চিকিৎসকদের দলটি এখানে দীর্ঘদিন অবস্থান করে অপারেশনটা করেছে। আর সব থেকে ভালো লেগেছে এরা প্রত্যেকেই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি সকলের কাজের আন্তরিকতার প্রশংসা করে বলেন, প্রত্যেকেই এত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন যে, এটা আমি ভাষায় বর্ণনা করতে পারব না। এখানে, প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত পারদর্শি যারা, তাদেরকেই একত্রিত করা হয়েছে। যাতে কোনো রকম ফাঁক না থাকে। সব যেন ঠিকমত হয়। কারণ, এটা একটা জটিল অপারেশন ছিল।

তিনি বলেন, রাবেয়া এবং রোকেয়া জোড়া মাথা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘ক্রেনিয় পেগাজ’। এ ধরনের ঘটনা মাঝে মাঝে দেখা গেলেও আমাদের দেশে এটি পৃথক করার ঘটনা সম্পূর্ণ নতুন।

তিনি বলেন, সিএমএইচ-এ দীর্ঘদিন অপারেশন এবং রাবেয়া-রোকেয়ার বাবা-মাকে সেখানে রাখা এবং এত বড় একটা অপারেশন করাটা একটা অত্যন্ত মানবিক কাজ, যা আপনারা করেছেন। আমি দেশবাসীরও দোয়া চাই তারা যেন সুস্থ থাকে, ভালো থাকে এবং বাবা-মায়ের মুখে আনন্দ নিয়ে আসতে পারে।

২০১৯ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক মাইলফলক। এ দিনেই সিএমএইচ ঢাকায় জোড়া মাথা পৃথকীকরণের জটিল অপারেশনটি শুরু হয়। হাঙ্গেরী সরকারের সহযোগিতায় ‘একশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল ফাউন্ডেশন’-এর সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাঙ্গেরীতে ছোট-বড় ৪৮টি অপারেশন সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে শিশু দু’টিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে এই অপারেশনের সবচেয়ে জটিল অংশ যমজ-মস্তিষ্ক আলাদাকরণের কাজটি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকায় সম্পন্ন করা হয়। এ ধরনের অপারেশন সারা বিশ্বেই বিরল এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় প্রথম। অপারেশন পরর্বতী সাফল্যও বিশ্বে খুব বেশি নেই।

সূত্র জানায়, ঢাকা সিএমএইচ শিশু দু’টির জন্য আজীবন চিকিৎসাসুবিধা কার্ড প্রদান করেছে, যাতে ভবিষ্যতে সিএমএইচসহ যে কোনো সরকারি হাসপাতালে তারা বিনামূল্যে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা পায়। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই রাবেয়া এবং রোকেয়া এই যমজ দুই বোন সংযুক্ত মাথা নিয়ে পাবনার স্কুল শিক্ষক দম্পতি রফিকুল ইসলাম এবং তাসলিমা খাতুনের ঘরে জন্মগ্রহণ করে।

বিমানের যাত্রীসেবার মান
দেশের ‘ভাবমর্যাদার’ কথা বিবেচনায় নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের যাত্রীসেবার মান বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নতুন ড্যাশ ৮ কিউ ৪০০ উড়োজাহাজ ‘আকাশতরী’ ও ‘শ্বেত বলাকা’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের দেশ। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি। এদেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব, সকলেরই কর্তব্য। দেশটা যত উন্নত হবে অর্থনৈতিকভাবে আমরা যত স্বাবলম্বী হতে পারব বা আমরা আমাদের যাত্রীসেবা যত উন্নত করতে পারব, ততই দেশের লাভ হবে, দেশের মানুষের লাভ হবে এবং আমাদের দেশটাও আরো উন্নত হবে। সেদিকে সবাই লক্ষ্য রেখেই আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব আপনারা পালন করবেন। সেটাই আমি চাই। শেখ হাসিনা বলেন, এ পর্যন্ত জনগণের টাকায় ১৬টি নিজস্ব নতুন আধুনিক উড়োজাহাজ ক্রয় করা হয়েছে এবং সর্বমোট এখন আমাদের ২১টি জাহাজ আছে। সেগুলো যেন সুন্দরভাবে সুরক্ষিত থাকে এবং যাত্রীসেবার যেন মান উন্নত হয়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়ার জন্য আপনাদের কাছে আমার আহ্বান থাকল।

বিমান শুধু বাংলাদেশ না, সারা বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেজন্য সব সময় আমাদের প্রচেষ্টা ছিল যে এই বিমান যেন ভালোভাবে, সুন্দরভাবে আমরা গড়তে পারি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে ‘প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে ভৌগলিক অবস্থানটা আছে এবং আমরা ইন্টারন্যাশনাল এয়াররুটের ভেতরে আছি। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিন্তু প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের একটা সেতুবন্ধন রচনা করতে পারে। তাছাড়া আমরা দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বৃদ্ধি, যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টি করা, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর অনেক সুযোগ আমাদের রয়েছে। সেই সুযোগগুলো কাজে লাগানো- এটাও জাতির পিতার একটা আকাক্সক্ষা ছিল।

এখন যারা বিমানে চলাচল করেন, তারা ইন্টারনেটসহ সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতে পারেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমানে উঠে বেকার বসে থাকতে হবে না। ব্যবসা বাণিজ্যের কাজও চালাতে পারবে। সেই সুবিধাটাও আমরা দিয়েছি।

আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের আগে বিমান ‘দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায়’ ছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর সরকারে এসে আমরা চেষ্টা করি বিমানবন্দর উন্নয়ন করার, বিমানবন্দরে কোনো বোর্ডিং ব্রিজ বা কোনো কিছু কিন্তু ছিল না। যতটুকু উন্নতি আমরাই তৈরি করে দিয়ে যাই।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই যে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে আসার পর রাজশাহী বিমানবন্দর, বরিশাল বিমানবন্দর, সৈয়দপুর বিমানবন্দর সবাই প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর আবার সেগুলো চালু করি।

পাশপাশি কক্সবাজার বিমানবন্দরকে উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ইন্টারন্যাশনাল এয়াররুটে এই বিমানবন্দরটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

নতুন দুই উড়োজাহাজের অন্তর্ভুক্তি উপলক্ষে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোস্তফা কামালসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • Md Abdul Mannan ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:৪৩ এএম says : 0
    Alhamdulilah
    Total Reply(0) Reply
  • Md Abdul Mannan ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:৪৩ এএম says : 0
    Alhamdulilah
    Total Reply(0) Reply
  • Airin Sultana Besty ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:৪৩ এএম says : 0
    হাজার সালাম মমতা ময়ি মায়ের চরণে
    Total Reply(0) Reply
  • Khalilur Rahman ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:৪৩ এএম says : 0
    জাযাকাল্লাহু খায়রান।
    Total Reply(0) Reply
  • Abul Kalam Azad ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:৪৩ এএম says : 0
    Congratulations
    Total Reply(0) Reply
  • Md Bachu ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:৪৩ এএম says : 0
    এটা আননদের
    Total Reply(0) Reply
  • তোফাজ্জল হোসেন ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:৪৫ এএম says : 0
    অবশ্যই গর্বের।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ