পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পূর্বাচলের সীমানার বাইরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের কুলিয়াদি মৌজার বন বিভাগের জমি পুরোটাই দখল হয়ে পড়েছে। এসব জমি চলে গেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের কব্জায়। কাগজে কলমে বন বিভাগের জমি হলেও এখানে দেখা যায় শতাধিক বসত ঘর। আর দিনে-দুপুরে মাটি ও গাছ কাটার হিড়িক। আবার বনের গাছ থেকে আসবাব তৈরি করতে রয়েছে ৩টি করাত কল। যার কোনটির নেই সরকারি অনুমোদন। অভিযোগ রয়েছে উপজেলার ৫২টি করাত কলের মধ্যে ৫১টিরই বৈধ সনদ নেই। এ যেন ঘটা করেই চলছে দখল ও লুটপাটের মহোৎসব।
সূত্র জানায়, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কাজ শুরুর পর থেকেই ভাওয়াল রাজার ভোগদখলীয় স্টেটগুলো ক্রমেই বেদখল হয়ে পড়ে। চোরাকারবারী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের অপতৎপরতায় গজারী বনগুলো ধ্বংস করা হয়। এর মাঝে রূপগঞ্জের গোবিন্দ্রপুরের গুচ্ছগ্রাম, গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বরকাউ ও পারাবর্তা মৌজার বন পূর্বাচলের সীমানা হলেও রক্ষা পায়নি দখলদারদের হাত থেকে।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা ফজজুল করীম মাস্টারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সময় লাখ লাখ গজারী গাছে সমৃদ্ধ ছিল কুলিয়াদি মৌজার এ বন। এ বনের অধীনে ছিলো অর্ধশত প্রাকৃতিক টেক ও টিলা। খুব বেশি দিনের কথা নয়। মাত্র ৩০ বছর পূর্বেই এ বনে দেখা মিলতো বানর, হনুমান, বাঘডাস, খরগোশসহ নানা প্রজাতির পাখি। এ বনেই স্বাধীনতার পূর্র্বে বাঘ, সিংহ ও হরিনের অবস্থান ছিলো। এছাড়াও ভাওয়াল রাজার স্টেটের সঙ্গে এ বনের সংযোগ থাকায় রাজার তৎকালীন হরিণের বন হিসেবেই ছিলো এর খ্যাতি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সময়ের ব্যবধানে কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের কুলিয়াদি মৌজার বন বিভাগের ২০ একর ৯৫ শতক জমি অবৈধভাবে দখলে নেয় নানা জনে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বসতি নির্মাণ করে বনের জমিকে নিজের বলে দাবি করতে থাকে। দখলদারদের কেউ কেউ বন বিভাগের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে মামলাও দায়ের করেন। অভিযোগ রয়েছে বন বিভাগের জায়গা দখল করে ভুয়া দলিল ও কাগজপত্র তৈরি করে বিক্রি করে দেয়ার। আবার দখলদাররা আইনি ঝামেলা এড়াতে কৌশলে জমি হস্তান্তর করে খোলা স্ট্যাম্পে।
প্রভাব খাটিয়ে দখল করা জমি অন্যের কাছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে বাড়িঘর করার সুযোগ দেয়। এর আগে বনের মাটি চুরি আর গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলে তারা। চোরাই গাছ বিক্রি করেন বনের অধীনে থাকা করাত কল মালিক কিংবা কাঠ ব্যবসায়ীদের কাছে। করাত কল মালিকরা বনের গাছ অর্ধেক মূল্যে ক্রয় করে তা বাইরে বিক্রি করে দেয়। চোরাই কাঠ ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে কুলিয়াদির বন বিভাগের জমিতে রয়েছে ৩টি করাতকল। এসব করাতকল মালিকদের একজন মোক্তার হোসেন। তিনি বলেন, বন বিভাগ বা প্রশাসনের কেউ আমাকে কোন দিন বাধা দেয়নি। তাছাড়া কাঠ কাটার প্রয়োজনে চেরাই করি। গাছের মালিকরা গাছ চুরি করে আনলো বা তাদের বৈধ গাছ কি না এসব যাচাই করা আমার কাজ নয়।
সূত্র জানায়, বিগত সময়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দখলদারদের উচ্ছেদের চেষ্টা করলেও কোর্টে মামলা থাকায় অভিযানে সফল হননি তারা। এছাড়াও রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন বনবিভাগ দখল নিয়ে তদন্ত করে একটি একাধিকবার প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিল করেছিলেন। তবে দখলদাররা দাবি করেন, সিএস পর্চামূলে তারাই মালিক। এসএ ও আরএসে মালিক বনবিভাগ। যখন সরকার রায় পাবে তখন তারা বন বিভাগের জমি ছেড়ে দিবে।
এদিকে আরএস রেকর্ড সূত্র ধরে দাউদপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মজিবুর রহমান জানান, রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের কুলিয়াদি মৌজার এসএ ও আরএস পর্চামূলে ২নং খতিয়ানের ২৫টি দাগে ২০ একর ৯৫ শতক জমি বন বিভাগের। এ রেকর্ডের মালিক হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট। বিধি অনুসারে এসব জমির বৈধ মালিক বনবিভাগ। সূত্র জানায়, রহস্যজনকভাবে কিছু দাগের দখলীয় কলামে ভিটি ও বাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন জরিপ কর্মকর্তাদের অসাধু কর্মকান্ডের অবৈধ দখলদারদের বৈধতা দেয়ার চেষ্টায় রেকর্ডে দখলীয় কলামে এমনটা করেছেন।
সরেজমিনে ঘুরে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দাউদপুর ইউনিয়নের মিয়া আর খাঁ বংশের লোকদের দখলে রয়েছে কুলিয়াদি এলাকার এ বনের বেশিরভাগ জমি। মিয়া বংশীয়রা হলেন শিমুলিয়া এলাকার মরহুম মহসিন মিয়ার বংশধর আর কুলিয়াদির বাসিন্দা আরমান খাঁনের। আবার যে দল যখন ক্ষমতায় আসে এমন প্রভাবশালীরাও ধারাবাহিকভাবে এ বনের জমি দখলে নেয়। এতে তাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে করা হয় সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের মধ্যে রয়েছে, কুলিয়াদির বাসিন্দা ফজলু হক সিকদার, মহর আলী, সেরাজুল মিয়া, গেসু মিয়া, মান্নান মিয়া, ফিরোজ খান, সিরাজ ভ‚ইয়া, আব্দুর রেজাক, আজগর হোসেন, সামসুল হক, আজহারুল ইসলাম, আয়নাল হক, মজিবুর রহমান, ইমরান মিয়া, অলিউল্লাহ মিয়া, সেলিনা বেগম, মালেকা বেগম, মোশারফ হোসেন, আতাবর মিয়া, জুয়েল মিয়া, ইমরান মিয়াসহ আরো শতাধিক লোক। এদের মাঝে কেউ কেউ বনের জমি দখল করে ভুয়া দলিল ও কাগজপত্র তৈরি করে জমি বিক্রি করে দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ বাড়িঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছে।
এমন এক দখলদার সেলিম মিয়া বলেন, এক সময় এসব জমি প্রজাই জোতের অধীনে ছিলো। এখন এসএ ও আরএসে বন বিভাগের লেখা হয়েছে। তবে দখলে পূর্বের লোকজনই রয়েছে। বন বিভাগের কোন দখল নেই। তবে সাবেক রূপগঞ্জ উপজেলা বন কর্মকর্তা রিয়াজউদ্দিন বলেন, সীমানা পিলার দিয়ে বনের জমি চিহ্নিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান বলেন, বনের জমি বিষয়ে দখলদারদের করা মামলা আদালতে চলমান। তবে বনের জমি উদ্ধার করে ওখানে ইকো পার্ক গড়ার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন আইনি তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। বন কর্মকর্তার সঙ্গে বসে বিষয়টি জেনে আইনি ব্যবস্থা নেব। তিনি আরো বলেন, করাতকল স্থাপন আইন বিধি অনুযায়ী কোন করাতকল প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম চালালে ২ মাস থেকে ৩ বছরের সাজা ও এর অতিরিক্ত ন্যূনতম ২ থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দন্ড দেয়ার বিধান রয়েছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা বন কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার বলেন, রূপগঞ্জের মাঝে কেবল ২০ একর ৯৫ শতক কাগজে কলমে বনের রয়েছে। লোকবল না থাকায় এসব জমি পুরো দখলে আনা সম্ভব হয়নি। যদিও বনের সীমানা পিলার দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এ সময় তিনি আরো বলেন, বন বিভাগের কাঠ কাটা ও বৃক্ষ নিধনে কেউ জড়িত হয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।