Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাদের মির্জার গ্রেফতার চায় উপজেলা আ. লীগ

বসুরহাটে সহিংসতা বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি মির্জার

নোয়াখালী ব্যুরো ও কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০২১, ১২:০৪ এএম

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ। গতকাল দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরনবী চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়। এদিকে, পৌর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার কার্যালয়ে গুলিবর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ করে কোম্পানীগঞ্জের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেন মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। তিনি বলেন, একরাম চৌধুরীর বাড়িতে দফায় দফায় বৈঠক চলছে, আমাকে ও আমার পরিবারকে হত্যা করার জন্য। তবে এমন অভিযোগ নাকচ করে নোয়াখালী (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী বলেছেন এটি তার ( আবদুল কাদের মির্জা) কল্পনা প্রসূত বচন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে, গত ৯ মার্চ তারিখের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খাঁনের ওপর নিষ্ঠুর ও বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত সভায় মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার নেতৃত্বে হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। এছাড়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের নিঃশর্ত মুক্তি ও শ্রমিকলীগ কর্মী আলাউদ্দিনের নৃশংস হত্যার মাস্টার মাইন্ড খুনি মির্জাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি করা হয়।

হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ : নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা গতকাল সকাল ১১ টায় বসুরহাট পৌরসভার নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে মেয়র অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার রাতে পুলিশ আমার দলের নিরীহ কর্মী ইকবাল চৌধুরী, মো. লিটন, একরামসহ ৮ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। সারা রাত ডিবি পুলিশ, অন্যান্য বাহিনী আমার নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে এবং নিরাপরাধ নেতা-কর্মীদের পিতা ও আত্মীয়-স্বজনদের মারধর করছে।

তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে নির্বিচারে প্রতিপক্ষ আমার পৌরসভা কার্যালয়ে গুলিবর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণ রকে ল্যান্সার নিক্ষেপ করেছে সন্ত্রাসীরা। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৫ শতাধিক গুলি করেছে। এতে আমার কর্মীরা মানব প্রাচীর করে আমার গায়ের ওপর শুয়ে আমাকে প্রাণে রক্ষা করেন। আমার সাথে থাকা আমার ৬০ জন দলীয় নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। শুনেছি নোয়াখালী জেলা আ.লীগকে কোম্পানীগঞ্জের বিষয়ে তদন্ত করে দলীয় রিপোর্ট দেওয়ার জন্য। আমি আমাদের তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও আ.লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী দিয়ে কোম্পানীগঞ্জের ঘটনায় দলীয়ভাবে তদন্তবার দেওয়ার আহ্বান জানাই। জেলা আ.লীগ কমিটি এখন অনুমোদন হয়নি। তাছাড়া যারা আমার বিরুদ্ধে হামলা করেছে ঐ কমিটি তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে। তাই তাদেরকে দিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হবে না।

কাদের মির্জা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার দাবি সিএনজি চালক আলা উদ্দিন হত্যাসহ যত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এগুলোর বিচার বিভাগীয় কমিটি করে তদন্ত অথবা এনএসআই ও ডিজিএফআইকে তদন্তের বার দেওয়া হোক। নোয়াখালীর প্রশাসন দিয়ে তদন্ত করলে নিরপেক্ষ তদন্ত আশা করা যায় না। কারণ অপশক্তিরা নোয়াখালী প্রশাসনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে।

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, একরাম চৌধুরীর বাড়িতে দফায় দফায় বৈঠক চলছে, আমাকে ও আমার পরিবারকে হত্যা করার জন্য। নোয়াখালীর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনম সেলিম একজন মেরুদন্ডহীন প্রাণী, তার কারণে একরাম আকাম-কুকাম করছে। দুর্নীতি ও অনিয়ম করে একরাম টাকা বেশি খায়, সেলিম কম হলেও খান। মির্জা কাদের আরও বলেন, আমি সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ইভিএম ভোটে কাস্টিং ভোটের ৭৭ ভাগ ভোট পেয়েছি। আমার এ জনপ্রিয়তায় ঈর্ষাম্বিত হয়ে আমার প্রতিপক্ষরা নিজাম হাজারি ও একরাম চৌধুরীর সাথে এক হয়ে সবাই আমার বিরোধিতা করছে। আমার বিরুদ্ধে যতই ষড়যন্ত্র হোক আমি সব সময় সত্য কথা বলে যাবো।

অভিযোগ কল্পনা প্রসূত, ভিত্তিহীন : বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার অভিযোগ নাকচ করে পাল্টা জবাব দিয়েছেন নোয়াখালী (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধূরী।
গতকাল বিকাল ৩টার দিকে এমপি একরামুল করিম চৌধুরী এমপি ফোনে আবদুল কাদের মির্জার অভিযোগের জবাবে বলেন, আমি ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় অবস্থান করছি। গত এক সপ্তাহ ধরে আমি এলাকার বাহিরে। কাদের মির্জা তাকে হত্যা করার জন্য আমার বাড়িতে যে পরিকল্পনা হয়েছে বলে দাবি করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও অসত্য। এটি তার কল্পনা প্রসূত বচন। কারণ আমি ব্যবসায়িক কাজে চট্টগ্রামে ব্যস্ত ছিলাম। এরপর অন্য কাজে ঢাকায় অবস্থান করছি। আমার স্ত্রী ও সন্তানও আমার সাথে অবস্থান করছেন। তাই কাদের মির্জার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

নারী নিয়ে কাদের মির্জার ভাইরাল স্ট্যাটাস : কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি কবিতার কয়েকটি লাইনের দেয়া একটি স্ট্যাটাস মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়েছে। গতকাল বিকাল ৩টা ৭ মিনিটে তিনি ফেসবুক ওই স্ট্যাটাসে লেখেন- ’ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধন, যদিও পৃথক হয় নারীর কারণ’। কবিতার সাথে ভাই ওবায়দুল কাদেরের সাথে কোলাকুলি ছবিসহ দুটি ছবি জুড়ে দেন। স্ট্যাটাস দেয়ার সাথে সাথে হাজারো ব্যাক্তি লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করেন।

ইতিবাচক কমেন্টের সাথে নীতিবাচক কমেন্টও রয়েছে তার কমেন্ট বক্সে। নাগরিক অধিকার নামক ফেসবুক থেকে একজন লেখেন ‘অনেক বেদনা বুকে লুকিয়ে রেখে মির্জা কাদের ভাই আপনি দারুণ একটা পোস্ট করে সমাজের মানুষের সামনে বাস্তব একটি সত্য চিত্র তুলে ধরেছেন, সে জন্য আপনাকে ধন্যবাদ’। নায়েব চৌধুরী নামে একজন লেখেন, ‘অভিনয়ের জন্য অস্কার পাবেন আপনি। গ্রেফতারের ভয়ে এখন ওবায়দুল কাদের আপনার ভাই’। মো. রাসেল লিখেছেন, ‘গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে এখন বহুরুপী মির্জা কাদের ঘরের বউয়ের উপর দোষ চাপাচ্ছেন’। জুয়েল আহমেদ লিখেছেন,‘নারীর দোষ নেই,বড় কথা হলো ভাই ভাই যে আল্লাহর রহমত থাকা দরকার’। ইত্যাদি কমেন্ট করে যাচ্ছেন শত শত মানুষ।

তবে স্ট্যাটাস দেওয়ার ঘণ্টা খানেক পর রহস্যজনক কারণে কাদের মির্জা ওই স্ট্যাটাস ডিলেট করে ফেলেন। এ বিষয়ে কাদের মির্জার ফোনে ৫টা ৫১ মিনেটের দিকে ফোন করা হলেও তিনি ফোনে ধরেন নি। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ