Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেতু বা টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা

শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌ-রুট

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০২১, ১২:০৫ এএম

শরীয়তপুর-চাঁদপুর মধ্যবর্তী স্থান মেঘনা নদীর দৈর্ঘ্য মাত্র ১০ কি.মি। এই নৌ-রুটে যাত্রী এবং পন্য পরিবহনের জন্য মেঘনা নদীতে একটি সেতু বা সুড়ঙ্গপথ (টানেল) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এটি নির্মিত হলে রাজধানীর ওপর যানবাহনের চাপ যেমন কমবে, তেমনি মানুষের চাপও কমবে। রাজধানীর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর দূরত্ব কমে আসবে।

একইভাবে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের যানবাহন বা লোকজন ঢাকা না গিয়েই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবেন। পাশাপাশি বদলে যাবে দেশের অর্থনীতির চাকা এমনই একটি সেতু বা টানেল নির্মাণের কথা ভাবছে সরকার। এতে সময় এবং টাকা দুই-ই বাঁচার পাশাপাশি তিনটি সমুদ্রবন্দরের মধ্যে সড়কপথে পণ্য পরিবহনে সময় কমিয়ে দিবে। যে পথ দিয়ে রেলও চলাচল করবে। এমনই এক স্বপ্ন দেখছেন চাঁদপুর-শরীয়তপুর দুই পাড়ের দুই সাংসদ। এ সেতু বা টানেলটি নির্মিত হলে ওই এলাকায় নতুন নতুন শিল্প কারখানা তৈরি হবে। ফলে কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টির সুযোগ হবে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মেঘনা নদীর এক প্রান্তে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার আলুবাজার ফেরিঘাট আর অন্য প্রান্তে চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাট। দুই ফেরিঘাটের মধ্যেদূরত্ব নদী ও চর মিলিয়ে ১০ কিলোমিটার। এখানে সেতু নির্মাণের সমীক্ষার জন্য ইতিমধ্যে দরপত্রও আহŸান করেছে সেতু বিভাগ। এ দুইঘাটের দুই প্রান্তেই আঞ্চলিক মহাসড়ক রয়েছে। তার ওপর আবার পদ্মা নদীর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা থেকে শরীয়তপুর সদর পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণের ডিপিপি প্রস্তুত করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।

সূত্রটি থেকে আরো জানা যায়, দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে বর্তমান সরকার ২০০১ সালে জাপানি অর্থ সহায়ক সংস্থা (জাইকা) দেশে যে পাঁচটি দীর্ঘ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা দেয় তার মধ্যে শরীয়তপুরের আলুবাজার ফেরিঘাট থেকে চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাট পর্যন্ত মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব ছিল। আরও যে চারটি সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়, তারই একটি পদ্মা সেতু যা মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পর্যন্ত নির্মাণের কাজ এখন চলছে।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আলুবাজার ফেরিঘাট থেকে হরিণাঘাট ফেরিঘাট পর্যন্ত সেতু বা টানেলের দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার হলেও এখানে মূল সেতুর দৈর্ঘ্য মাত্র ২ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার। বাকিটা চর এলাকা। এখানে নদীর গভীরতাও প্রায় ৬৫ মিটার।

তবে সড়ক খাতের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলুবাজার থেকে হরিণাঘাট পর্যন্ত সেতু বা টানেল নির্মাণ করা হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ২২ জেলা, সিলেটের চার জেলা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম বা সিলেটের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ করতে কাউকে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে হবে না। ফলে রাজধানীর ওপর যানবাহনের চাপ যেমন কমবে, তেমনি মানুষের চাপও কমবে। একইভাবে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের যানবাহন বা লোকজন ঢাকা না গিয়েই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবেন।
সম্প্রতি চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ এর স্থান পরিদর্শনকালে বাংলাদেশ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম এমপি সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপির সাথে আমার কথা হয়েছে। শরীয়তপুর-চাঁদপুর যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য আমরা এমন একটি কাজ করে যেতে চাই যার জন্য মানুষ আমাদেরকে মনে রাখবে। এসময় উপমন্ত্রী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। যার ফলে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। এবারে আমরা স্বপ্ন দেখছি মেঘনায় নদীতে শরিয়তপুর-চাঁদপুর সেতু বা টানেল করব। যা দিয়ে রেল চলাচল করবে। এ বিষয়ে আমাদের সমীক্ষা কাজ চলছে। আমরা দুজন মিলে এই স্বপ্নটি বাস্তবায়নে কাজ করব। আমরা আশা করছি এই সরকারের শেষদিকে হলেও মেঘনা সেতু অথবা টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারবো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সড়ককে সোজা করে করলে দূরত্ব কমে আসবে ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে। এটিকে আঞ্চলিক সড়ক না করে চার লেনে উন্নীত করে জাতীয় মহাসড়ক করলে তা হবে বেশি কার্যকর হবে। কারণ মেঘনার ওপারে চাঁদপুরের হরিণাঘাট থেকে হাজীগঞ্জ-কুমিল্লা পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়া লক্ষীপুর-নোয়াখালী-চৌমুহনী-ফেনী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যুক্ত হওয়া বিদ্যমান সড়কটিও আঞ্চলিক মহাসড়ক যা আগামীতে চার লেনে উন্নীত হবে। এছাড়াও রেলপথসহ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি বদলে দিতে পারে দেশের অর্থনীতি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ