Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আউটার রিং রোডের সুফল কোথায়

পতেঙ্গায় ১৫ কি.মি. সড়ক নির্মাণে ব্যয় বেড়েছে তিন গুণ : ১০ বছরেও শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:৪২ এএম

চারবার মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের কাজ। গত দশ বছরে এ মেগা প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে তিনগুণের বেশি। এরমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ সড়কটি সীমিত আকারে যান চলাচলের জন্য খুলে দিয়েছে। তবে তিনটি সংযোগ সড়কের একটিও নির্মাণ না হওয়ায় আউটার রিং রোডের সুফল মিলছে না।

এরমধ্যে তৃতীয় দফা সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্প ব্যয় আরো ২৫০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুন থেকে ছয় মাস বাড়িয়ে করা হয়েছে ডিসেম্বর পর্যন্ত। মহানগরীর পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এই রিং রোড নির্মাণে শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৮৫৬ কোটি টাকা। এখন ব্যয় এক হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রকল্পে ব্যয় আরও বাড়তে পারে। ইতোমধ্যে আরও কিছু কাজ সংযুক্ত করে দ্বিতীয় ধাপে (আউটার রিং রোড-২) আরেকটি প্রকল্প গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

আউটার রিং রোড ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের একাংশে যানবাহন চলছে। অন্য অংশে এখনো নির্মাণ কাজ চলছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে ভারী যানবাহন নগরীতে প্রবেশ করতে পারছে না। আবার মহানগরী থেকেও ওই সড়কে ভারী যানবাহন উঠতে পারছে না। ফলে বেশিরভাগ সময় সড়কটি থাকছে ফাঁকা। তিনটি ফিডার রোডের একটিও নির্মাণ করা হয়নি। এতে সড়ক চালু হলেও সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-পশ্চিম) জয়নাল আবেদীন গতকাল মঙ্গলবার বলেন, সংযোগ সড়ক ছাড়া রিং রোড চালু হওয়ায় এর সুফল এখনো মিলছে না। বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর, পাহাড়তলীসহ মহানগরীর বিস্তৃত এলাকায় যানজট কমছে না। রিং রোড হয়ে বিমানবন্দরগামী ভিআইপিদের যানবাহনসহ কিছু ভারী যানবাহন চলাচল করছে। তবে মহানগরী থেকে ওই সড়ক হয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর সড়কটি এড়িয়ে চলছেন যানবাহন চালকেরা। ফিডার রোড না হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি এর সুফল পাওয়া যাবে না। পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের নেতা বিশিষ্ট স্থপতি প্রফেসর জেরিনা হোসেন বলেন, আউটার রিং রোড প্রকল্পটি আমাদের সক্ষমতার প্রতীক- কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের অংশ। এ ধরনের একটি প্রকল্প নিয়ে যেনতেন আচরণ অপ্রত্যাশিত। এ সড়ক হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কমুখী দ্রæতগামী ভারী যানবাহন চলাচল করবে। অথচ পর্যটকদের নিরাপদ যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা ছাড়াই সড়কের পাশেই সৈকতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে।

বারবার মেয়াদ এবং ব্যয় বাড়িয়েও আউটার রিং রোড নির্মাণ শেষ না হওয়া প্রসঙ্গে সুজন চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আকতার কবির চৌধুরী বলেন, মহাপ্রকল্পের নামে জনগণের অর্থের যে হরিলুট চলছে এটি তারই ধারাবাহিকতা। এশিয়া এবং ইউরোপের তুলনায় আমাদের দেশে প্রকল্প ব্যয় কয়েকগুণ বেশি। অথচ এ দেশে সবচেয়ে সস্তায় শ্রম এবং নির্মাণ সামগ্রী মিলছে। জবাবদিহিতার সংস্কৃতি পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ায় দুর্নীতি বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের মেগা প্রকল্পকে দুর্নীতিবাজেরা টাকা কামানোর ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করছে। জনগণের সম্মিলিত প্রতিরোধ ছাড়া এ প্রবণতা প্রতিরোধ অসম্ভব।

তবে প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ভ‚মি অধিগ্রহণসহ নানা কারণে প্রকল্পের সময় এবং ব্যয় দুটোই বেড়েছে। নতুন করে ফিডার ও সংযোগ সড়ক সংযুক্ত হওয়ায় প্রকল্পে সংশোধনী আনা হয়েছে। করোনার কারণে কয়েক মাস কাজও বন্ধ ছিল। তবে তিনি আশাবাদী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ইপিজেড, হালিশহর ও সাগরিকা এলাকায় সংযোগ সড়ক নির্মাণ হলে এর পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাবে। সর্বশেষ একনেকের সভায় প্রকল্পের ব্যয় ২৫০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

জানা যায়, জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেবিআইসি) চট্টগ্রাম মহানগরীর অপ্রতুল অবকাঠামোগত অসুবিধাগুলো চিহ্নিত করতে ২০০৬ সালে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। সমীক্ষায় শহর রক্ষাকারী বাঁধ ও একইসঙ্গে রাস্তা নির্মাণের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। সিডিএর মাস্টার প্ল্যানেও শহরের আউটার রিং রোডের উল্লেখ করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ২৯ মার্চ একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। সেসময় প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৮৫৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০১১ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর।

উপক‚লীয় বাঁধ শক্তিশালী করা, নগরীতে যানজট কমানো, আবাসন-বাণিজ্য ও পর্যটন উৎসাহিত করা এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি যুক্ত হবে কর্ণফুলীতে নির্মাণাধীন টানেল এবং দেশের অর্থনীতির লাইফলাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে। ২০১১ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্টের সঙ্গে চুক্তি সাক্ষর করে সিডিএ। ২০১৩ সালের অগাস্টে একনেকে অনুমোদনের পর ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জুলাইতে শুরু হয় নির্মাণ কাজ। সেসময় সংশোধিত ব্যয় নির্ধারিত হয় এক হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। তখন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০১৭ সালের জুন। এরপর ২০১৮ সালের জুনে প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় বেড়ে হয় দুই হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০১৯ সালের জুন। সর্বশেষ প্রকল্পের ব্যয় ২৫০ কোটি টাকা বাড়িয়ে দুই হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয় রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রকল্প


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ