পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
সাভারে ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত বেক্সিমকোর নতুন পিপিই পার্ক আজ (বুধবার) আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।
বেক্সিমকোর সিইও জনাব এস নাভেদ হুসাইন জানান, প্রায় ২৫ একরের বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে পিপিই পার্কটি। বাড়তি চাপ সামলাতে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সুযোগ রাখা হয়েছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও স্থাপত্যের সংমিশ্রণে মাত্র ছয় মাসে সকল অনুমতিসহ উৎপাদনক্ষম করে গড়ে তোলা হয় কারখানাটি।
উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, এখানে কাঁচামাল থেকে বিভিন্ন ওজনের লেমিনেটেড ফেব্রিক্সস ও মেল্টব্লোন পদার্থ তৈরি হবে। তারপর তা থেকে প্রস্তুত করা হবে জীবাণুমুক্ত ডিজপজেবল আইসোলেশন ও সার্জিক্যাল গাউন, পুনঃব্যবহারযোগ্য আইসোলেশন গাউন, এন৯৫ ক্যাপ টাইপ ও ফোল্ডেবল টাইপ মাস্ক, সার্জিক্যাল মাস্ক, ডিজপজেবল স্ক্রাবস, উভেন ও কিটেন সু কভার ও হেড কভার, পুনঃব্যবহারযোগ্য পানিরোধী স্ক্রাবসসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণ।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার পার্কটির উদ্বোধন করেন। পুরো অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন বেক্সিমকোর সিইও জনাব এস নাভেদ হুসাইন। এছাড়াও বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান জনাব সিরাজুল ইসলাম এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। এছাড়াও ইন্টারটেকের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সন্দ্বীপ দাস, উত্তর আমেরিকার গ্লোবাল সফটলাইন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট রক করোনা, উত্তর আমেরিকার পিপিই কারিগরি প্রধান জ্যাশন অ্যালেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
পুরো কারখানাটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। এখানে জীবাণুমুক্ত গাউন তৈরির জন্য একটি আলাদা ইটিও স্টেরালাইজেশন সুবিধা সম্পন্ন কক্ষ রয়েছে।
এছাড়াও বেক্সিমকো ও ইন্টারটেকের যৌথ উদ্যোগে পার্কের অভ্যন্তরে ১২ হাজার বর্গফিট জায়গাজুড়ে একটি সর্বাধুনিক ‘পিপিই সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি রয়েছে। এই পিপিই ল্যাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের মানদ- অনুসারে পিপিই তৈরির জন্য সকল ধরনের পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে।
এই চুক্তি সম্বন্ধে ইন্টারটেকের সিইও আন্দ্রে লাক্রোইক্স জানান, “একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কোম্পানি হিসেবে ইন্টারটেকের লক্ষ্য হল, জীবনমান, নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে একটি উন্নততর ও অধিক নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তোলা। এই লক্ষ্যেই আমরা বেক্সিমকোর সাথে আমাদের চুক্তি সম্প্রসারিত করেছি। এরফলে এই পিপিই উৎপাদন কেন্দ্রে সঠিক মান নিশ্চিত করে পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এই মহামারীতে বিশ্বজুড়ে পিপিইর সংকট, প্রয়োজনীয়তা এবং মানসম্মত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামাদির অভাব আমরা লক্ষ্য করেছি। যেহেতু ইতিমধ্যেই বেক্সিমকো পিপিই উৎপাদনে বিশ্বজুড়েই সমাদৃত হয়েছে তাই আমি বিশ্বাস করি, বিভিন্ন আপদকালীন সময়ে আগামীতে আমরা আরো নিরাপদ ও উন্নত সেবা প্রদানে সক্ষম হবো।”
বেক্সিমকোর সিইও সৈয়দ নাভেদ হুসাইন বলেন, “বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে বেক্সিমকো অবিচ্ছিন্নভাবে অবদান রেখে চলেছে। আমি এই নতুন সূচনার জন্য আনন্দিত, কেননা এটি বাংলাদেশকে বিশ্বের পিপিই উৎপাদন মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে। ইন্টারটেকের মান নিশ্চিতকরণের প্রক্রিয়া আমাদের বিভিন্ন আইনি ও সম্মতিপত্র গ্রহণে ব্যপকভাবে সহায়তা করেছে এবং আমাদের সম্পর্ককে আরো মজবুত করেছে। এই উৎপাদন কেন্দ্রটি একাধারে উৎপাদক, ক্রেতা, খুচরা বিক্রেতা, বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও সরকারকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করতে সক্ষম হবে। কারণ এখানে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানদ- অনুসারে একইসাথে সকল প্রকার পণ্য উৎপাদন করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে বিশ্বের বৃহত্তম পিপিই উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। এটি সেই লক্ষ্যকে দৃশ্যায়মান করছে।”
বেক্সিমকো পিপিই পার্কটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় বাজারেই পণ্য সরবরাহ করবে। এর লক্ষ্য হল নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চল কেন্দ্রিক না হয়ে সকল ধরনের পিপিই উৎপাদন ও রপ্তানি।
বেক্সিমকো গ্রুপ তাদের নতুন বেক্সিমকো স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারীদের কাছে মাস্ক এবং প্রতিরক্ষামূলক গাউনসহ পিপিই সরবরাহের চুক্তি করেছে।
এই সম্পর্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, এই উদ্যোগটি প্রমাণ যে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি পোশাকের বাইরেও উন্নত স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণ তৈরি করতে সক্ষম। এছাড়াও বিপুল শ্রমশক্তি সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে উন্নত ও মানসম্পন্ন রপ্তানিযোগ্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জামাদি তৈরিতে বাংলাদেশের সক্ষমতা তুলে ধরছে নতুন এই পদক্ষেপটি।
এর আগে বেক্সিমকো গত বছর মহামারীর শুরুর দিকে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে জরুরী ভিত্তিতে পিপিই উৎপাদন, প্রযুক্তি স্থাপন ও কৌশল আয়ত্তে এনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ৬.৫ মিলিয়ন গাউন সরবরাহ করে।
সাম্প্রতিক সময়ের সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রতিবছর আমেরিকায় ৬.৭ বিলিয়ন পণ্য রপ্তানি করে যা বিগত দশকের তুলনায় দ্বিগুণ। অপরদিকে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির চাহিদা পূরণে যথোপযুক্ত হওয়ায় আমেরিকা থেকে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য চারগুণ বেড়েছে। বেক্সিমকোর এই প্লান্টটি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শক্তিশালী এবং ক্রমবর্ধমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে আরো শক্তিশালী করবে বলে মন্তব্য করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিলার।
মিলার বলেন, “আমরা উভয় জাতিই দেশের উন্নয়নে বাণিজ্য ও স্বাধীন উদ্যোগের মূল্য সম্পর্কে সাধারণ কিছু দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করি। বেক্সিমকো এই মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে।”
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।