Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুঁজিবাজারে এখন বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়

দুবাইতে বিএসইসির ‘রোড শো’

হাসান সোহেল, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১৯ এএম | আপডেট : ১:৩২ এএম, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

#নতুন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে শেয়ারবাজারে অনেক সংস্কার হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী
#এখনই বিনিয়োগ না করলে ভুল করবেন-বিএসইসি চেয়ারম্যান
বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সঠিক সময় এখনই। তাই এখনই প্রবাসী ও বিদেশীদেরকে বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বিশে^র বিভিন্ন দেশের উন্নয়নের মূলে শেয়ারবাজার। দেশের অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের একই ধারায় উন্নয়ন হয়নি। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে প্রবাসী ও বিদেশিদের বিনিয়োগ থাকলেও তা খুবই কম। তাই এখনই বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হবে বলে মনে করছেন তারা।

গতকাল আরব আমিরাতের দ্বুাইয়ের পার্ক হায়াত হোটেলে ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ আয়োজিত ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার : পোটেনশিয়াল অব বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেটস’ শীর্ষক রোড শোতে বক্তারা এ কথা বলেন।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। এভাবে এগোতে থাকলে এখনই বাংলাদেশে বিনিয়োগের সময় ও উপযুক্ত জায়গা। এখন না করলে ভুল করবেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে না। তখন বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগ করা হবে। অনুষ্ঠানে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমানের প্রথম অনলাইনে বেনিফিশিয়ারি অনার্স (বিও) হিসাব উদ্বোধন করেন তিনি।

প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত বলেন, গত ২দিন আমরা দুবাইয়ের বিভিন্ন ব্যাংক ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এতে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখেছি। তিনি বলেন, আমরা অনেকে ভুলেই গিয়েছিলাম দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের কাজ শেয়ারবাজারের এবং ব্যাংকের কাজ স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেয়া। কিন্তু আমাদের দেশে ব্যাংকগুলো ১ বছর মেয়াদি আমানত নিয়ে ৪-৫ বছর মেয়াদি ঋণ দেয়। যাতে করে ঋণ খেলাপি তৈরী হয় এবং ব্যাংকগুলোকে বিপদে পড়তে হয়।

এতো আইপিও কেনো দেয়া হয় কেউ কেউ এমন প্রশ্ন করে জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে ক্যাপিটাল দেয়া না হলে, কে দেবে? সেকেন্ডারি মার্কেট হলো বাহির হওয়ার রাস্তা। তাই আমরা এখন প্রাইমারি মার্কেটকে গুরুত্ব দিচ্ছি।

তিনি বলেন, আগামিতে দেশে বড় বড় অর্থায়নের প্রয়োজন হবে। যা শেয়ারবাজার থেকে দিতে হবে। এটা বন্ডের মাধ্যমে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। গত কয়েকমাসে অনেক বন্ডের অনুমোদন দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, সব বন্ড বিক্রি হয়েছে। কোন বন্ড আন্ডারসাবসক্রাইব হয়নি। এই বন্ড ব্যবসায়িদেরকে এগিয়ে নেবে। পাশাপাশি মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। যারা ঝুঁকি নিতে না চান, তারা বন্ড ও মিউচুয়্যাল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন।

অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত বলেন, প্রতিটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড ১০-১৮ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দেবে। এখন কেউ যদি লোকসান করতে না চায়, তাহলে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারে। এছাড়া বন্ডে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। এই ২ ক্ষেত্রে বিনিয়োগে ঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে সক্ষমতা থাকলে নিজেই পোর্টফোলিও ম্যানেজ করতে পারে। এক্ষেত্রে ঝুঁকিও তার। ফলে লোকসান করে কাউকে দোষারোপ করা ঠিক হবে না।

গ্রীণ ফিল্ডের প্রজেক্টকে উৎসাহিত করার কথা জানিয়ে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে কোন কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে, সে কেনো শেয়ারবাজারে আসবে। তাই গ্রীণ ফিল্ডের প্রজেক্ট অনুমোদন দিতে হবে। এক্ষেত্রে যাদের তালিকাভুক্ত কোম্পানি আছে, তাদেরকে দিতে হবে। তারপরেও ওই তালিকাভুক্ত কোম্পানির অতিত রেকর্ড, উদ্যোক্তা/পরিচালকদের ইতিহাস বিবেচনায় নিতে হবে।
তিনি বলেন, অধিকাংশ দেশে শেয়ারবাজারের উন্নতি হলে অর্থনীতির উন্নতি হয়, আর শেয়ারবাজারের পতন হলে অর্থনীতির পতন হয়। কিন্তু আমাদের দেশের এরকম হয় না। সব ব্যবসাতেই ঝুঁকি আছে জানিয়ে ভূমিমন্ত্রী বলেন, একইভাবে শেয়ারবাজারেও ঝুঁকি আছে। গেইন করতে গেলে ঝুঁকি নিতে হবে। এ সময় তিনি বলেন, বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে শেয়ারবাজারে অনেক সংস্কার হয়েছে। সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, শুধু দুবাইতেই রোড শো নয়; অন্যান্য দেশেও এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে রোড শো করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, বাংলাদেশে শেয়ারবাজারসহ সব ক্ষেত্রেই এখন বিনিয়োগের উৎকৃষ্ট সময়। আমাদের শেয়ারবাজার সময়ের ব্যবধানে অনেক উন্নত হয়েছে। অনলাইনে বিও খোলাসহ নানা অগ্রগতি হয়েছে। বর্তমান কমিশন আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আরিফ খান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিদেশীদের বিনিয়োগ ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের আকার খুবই দুর্বল। বাজারের উন্নয়নের জন্য এই দুই খাতের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানিগুলো থেকে মন্দাবাজারেও উল্লেখযোগ্য রিটার্ন পাওয়া গেছে। এজন্য ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে। অন্যের কথায় দুর্বল শেয়ারের পেছনে দৌড়ালে লোকসানের শঙ্কা বাড়ে। এছাড়া লোকসান করে অনেকে সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দোষারোপ করে। এটা ঠিক না। তাই বিনিয়োগের কোম্পানির তথ্যাদি বিশ্লেষন, করপোরেট গভরনেন্স পরিপালনের বিষয়, অতিত রেকর্ড দেখে নিতে হবে। আর সেটা করা সম্ভব না হলে ভালো ফান্ড ম্যানেজারের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে হবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, অর্থনীতির উন্নতির সঙ্গে শেয়ারবাজারের একই ধারায় উন্নয়ন হয়নি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের থেকেও আমাদের শেয়ারবাজার অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এই বাজারকে উন্নয়নে শুধুমাত্র ইক্যুইটির পরিবর্তে নতুন নতুন পণ্য সংযোজন করতে হবে।

তিনি বলেন, এখন শেয়ারবাজারে লেনদেন বেশি হওয়ার ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সমস্যা কাটিয়ে তোলার জন্য ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) চালু করা হবে। এরইমধ্যে ২০টির বেশি ব্রোকারেজ হাউজ থেকে এই ওএমএস সিস্টেমের জন্য আবেদন করেছে।

ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রহমত পাশা তার বক্তব্যে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের জন্য দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের প্রক্রিয়া তুলে ধরেন। ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ দুবাই মলের পাশে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি একটি ডিজিটাল বুথ চালু করতে যাচ্ছে। ওই বুথে গিয়ে এবং বাসায় বসেও দুবাইবাসীরা লেনদেন করতে পারবেন বলে জানান তিনি। এ সময় তিনি প্রবাসীদের জন্য বিনিয়োগ সুবিধা তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে ক্যাপিটাল গেইনের ক্ষেত্রে কোন ট্যাক্স নেই বলে জানান। যা বিশ্বে খুবই বিরল ঘটনা।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএসইসির কমিশনার কামালুজ্জামান, নির্বাহি পরিচালক মাহবুবুর রহমান, বিএমবিএ সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান, ইউসিবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান চৌধুরী, এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মাহতাবুর রহমান, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল ও ইউসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সিইও রাশেদুল হাসান।
সূত্র মতে, চারদিনব্যাপি এই রোডশোর দ্বিতীয় দিনে বুধবার সকালে সুকুক: দ্যা নিউ ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটি ইন বাংলাদেশ শিরোনামে একটি সেমিনার হবে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অংশ নেবে। তৃতীয় দিন সকালে স্কোপ অব প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যান্ড ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ শিরোনামে একটি সেমিনার হবে। এখানেও অংশ নেবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। শেষ দিনে ১২ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বৈঠক। এখানে বিনিয়োগকারীদেও ছোট ছোট গ্রুপ অংশ নেবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ