পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তিন গম্বুজওয়ালা জামে মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজও। কুমিল্লার হোমনার তেভাগিয়া গ্রামের পাখি ডাকা, ছায়া ঢাকা, অনাবীল সুখ-শান্তির সুশীতল পরিবেশে অবস্থিত মসজিদটি। মসজিদটির ভিতর ও বাহিরে রয়েছে অপূর্ব সৌন্দর্য বিভিন্ন কারুকাজে নির্মাণ করা হয়। পুরো মসজিদটি চুনশুরকি দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। ভিতরের মিম্বরটিতে রয়েছে সুনিপুণ হাতে নির্মিত অপূর্ব কারুকাজ। যে কেউ একবার দেখলে পরে মন ভরে যায় সৌন্দর্যের কারণে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুদৃশ্য কারুকাজ খচিত তিনটি গম্বুজ। ভেতরের দেয়ালে দৃষ্টিনন্দন অলঙ্করণ। নির্মাণশৈলীতে সুলতানি স্থাপত্যরীতির পূর্ণ প্রকাশ। মসজিদটি সুনিপুণ হাতে নির্মিত তবে মসজিদটিতে কোনো শিলালিপি নেই। ফলে প্রতিষ্ঠার লিখিত সময় জানা নেই কারো। স্থাপত্য রীতি দেখে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এটি ১২৫০ খ্রিস্টাব্দে হুসেন শাহ সুলতানের পরবর্তী বংশধরা এই মসজিদটি নির্মাণ করেছেন। সে হিসেবে মসজিদটির বয়স ৪০০ বছরের বেশি। সুলতানি শাসন আমলে তার বংশধর হোমনায় মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করে ৩২ শতক জায়গাসহ এটি ওয়াকফ করে যান।
ওয়াকফ কার্যালয়ে গিয়ে তেভাগিয়া সরকারবাড়ি মসজিদটি ওয়াক্ফ স্টেট-এর ফাইলে ১৯৫৫ সালের আগের কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে পুরোনো যে নথিটি আছে, সেটি ১৯৫৫ সালের। সংশ্লিষ্ট ওয়াক্ফ সহকারী প্রশাসক মনির হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এই ওয়াকফ স্টেটটির বহুদিন ধরে কোনো তত্ত্বাবধায়ক ছিল না। তবে মসজিদটি না ভেঙে সংস্কার করে সংরক্ষণের জন্য বলেন।
কুমিল্লা নগর গবেষণা কেন্দ্রের স্থপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, এখনো মসজিদটি যে অবস্থায় আছে, তা সংরক্ষণযোগ্য। তিনি বলেন, প্রাচীন নিদর্শন বলতে হোমনা উপজেলায় এখন এই মসজিদটিই টিকে আছে। আগে সুলতানী আমলের আরো ২/১ মসজিদ ছিল সেগুলোও কালের বির্ততনে হারিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ আছে প্রতœসম্পদের পূর্ণ তালিকা করতে হবে। তার আগে কোনো প্রাচীন ভবন ভাঙা যাবে না। অথচ একের পর এক প্রাচীন স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে।
ইতিহাসবিদ আহসানুল কবীর দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কেবল মসজিদ নয়, পুরোনো সব স্থাপনা পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে। প্রশাসনের উদাসীনতা ও অজ্ঞতা, দখলদারদের চক্রান্ত ও রাজনীতিকদের যোগসাজশে এ কাজগুলো হচ্ছে। যে অবস্থা চলছে, তাতে আগামী কয়েক দশকে আর কোনো পুরোনো স্থাপত্য নিদর্শন থাকবে না।
মসজিদটির বর্তমান কমিটির সেক্রেটারি মো. ইদ্রিস মিয়া দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, তৎসময়ে এলাকায় মুসলমানদের নামাজ পড়ার জন্য তেমন উল্লেখযোগ্য কোন মসজিদ ছিল না। তাই হুসেন শাহ সুলতানের বংশধরা মুসলমানদের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদটি নির্মাণ করে গেছেন। তবে বর্তমান মসজিদ কমিটিসহ স্থানীয়দের দাবি তেভাগিয়া সরকারবাড়ি মসজিদটি সংস্কার করে প্রতœসম্পদের হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখার জন্য।
এই বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবুল ফজর মীর দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সুলতানি শাসন আমলে এই মসজিদটির কথা জানা ছিল না। তবে এখন মসজিদটির বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে সংরক্ষণের করতে কাজ শুরু করবেন বলে জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।