Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তঃরাষ্ট্রীয় সুসম্পর্ক বজায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছি

সামরিক বাহিনীর কমান্ড ও স্টাফ কলেজের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:৪৩ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্র হচ্ছে- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। সে আলোকে আমরা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সুসম্পর্ক বজায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছি। কেউ বলতে পারবে না, বাংলাদেশের সঙ্গে কারও বৈরী সম্পর্ক আছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ঐক্য উন্নয়ন নিয়ে বাংলাদেশ গৌরবময় ভূমিকা পালন করছে। অভ্যন্তরীণ সম্পদসহ নানাবিধ সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা নানা সময়ে মানবিক ডাকে সাড়া দিয়েছি। রোহিঙ্গাদের বিষয়টি আপনারা জানেন, এ নিয়ে সারাবিশ্ব বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আমরা দ্ব›েদ্ব লিপ্ত হইনি। বন্ধুসুলভ আলোচনা করছি। তবে তারা (মিয়ানমার) অন্যায় করছে, সেটা আমরা বলবো।

গতকাল সামরিক বাহিনীর কমান্ড ও স্টাফ কলেজের ডিএসসিএসসি ২০২০-২০২১ কোর্সের স্নাতক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এ কোর্সে এবার ২২৫ জন অংশ নেন, যার মধ্যে ৪৩ জন বিদেশি কর্মকর্তা।

গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আপনাদের জীবনের একটি বিশেষ দিন। এ দিনটির জন্য দীর্ঘ ১১ মাস আপনাদের কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় করতে হয়েছে। আপনারা সমর জ্ঞান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে উচ্চতর জ্ঞান লাভ করেছেন। আমার বিশ্বাস এ প্রশিক্ষণ লব্ধ জ্ঞান, আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন ও নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হবে। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীটা একটা ভিলেজ। এখানে কেউ এককভাবে চলতে পারে না। সবাইকে নিয়ে চলতে হয়। এজন্য জ্ঞানের পরিধি অনেক বিস্তৃত করতে হয়। শেখ হাসিনা বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের গ্র্যাজুয়েটরা তাদের অর্জিত জ্ঞান, ইচ্ছাশক্তি ও অঙ্গীকারের মাধ্যমে দেশকে একটি স্থিতিশীল, টেকসই, আত্মনির্ভরশীল, সর্বোপরি গৌরবময় অবস্থানে নিয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, এদেশ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন করেছি। আমরা দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করতে চাই।

তিনি বলেন, উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে ২০২১-২০৪১ পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। যার মাধ্যমে দেখতে চাই, কেমন হবে ২০৪১-এর বাংলাদেশ। এটি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হবে। আজকের গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা কর্মকর্তারাই আমার ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সৈনিক হবে। তারা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে কাজ করবে।

তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক গ্রামে শহরের সুবিধা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা দেখতে চাই ২১০০ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে। সেজন্য ডেল্টা প্ল্যান করেছি। যাতে আমাদের এই ব-দ্বীপ জলবায়ুর পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়। চিরদিন হয়তো আমরা থাকবো না। তারপরও পরিকল্পনা করে দিয়ে যাচ্ছি। যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম উন্নত জীবন পায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক একাডেমি তৈরি করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি কুমিল্লায় সামরিক একাডেমির প্রথম বিদায়ী ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করেন। তিনি ওই সময় বলেন, পূর্ণ সুযোগ সুবিধা পেলে আমাদের ছেলেরা যেকোনো দেশের যেকোনো সৈনিকের সাথে মোকাবিলা করতে পারবে। আমার বিশ্বাস আমরা এমন একটি একাডেমি তৈরি করবো, সারা দুনিয়ার মানুষ আমাদের এই একাডেমি দেখতে আসবে।

এটাই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা। আজকে আমরা সেটা করতে পেরেছি। আমাদের এ একাডেমি সারাবিশ্বের কাছে বিস্ময়। সারাবিশ্বের মানুষ এই একাডেমিকে অনুভব করে, প্রশংসা করে।

শেখ হাসিনা বলেন, নানা প্রতিক‚লতার মধ্যে আমরা ২০২১ এ পদার্পণ করেছি। করোনায় সবকিছু স্থিমিত। স্থবিরতা নেমে এসেছে সবখানে। আমরা দেশের মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি সব উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, সফলও হয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিরাপদ ই-লার্নিং সল্যুশন স্থাপনের মাধ্যমে তাদের কোর্স চালু রেখেছে। একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। এটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়। এজন্য একাডেমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠাকালীন এ একাডেমিতে প্রশিক্ষণার্থী ছিল ৩০ জন সামরিক কর্মকর্তা। আজ ২২৫ জনে উন্নীত হয়েছে। প্রতিষ্ঠা থেকে এখন পর্যন্ত ৪৩টি দেশের এক হাজার ২০৮ জন সামরিক কর্মকর্তা এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তারা সবাই নিজ নিজ দেশে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ভালো অবদান রাখছেন। আজকের সমাবর্তন অনুষ্ঠানেও ১৬ দেশের ৪৩ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশ নিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা উন্নয়নের ক্ষেত্রে সার্বিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নারী শিক্ষাসহ সবার শিক্ষা নিশ্চিত করেছি। নারীর ক্ষমতায়নে কার্যকর ভূমিকা রেখেছি। আজকে আপনাদের কোর্সে একজন বিদেশি নারীসহ ১০ জন নারী প্রশিক্ষণার্থী আছে। যার মধ্য দিয়ে সামরিক বাহিনীতেও নারী ক্ষমতায়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস আমরা মোকাবিলা করছি। ভ্যাকসিন এসে গেছে। দেয়ার কার্যক্রমও চলছে। আমরা চাই, সবাই সুস্থ ও সুখী জীবন পাক। সেনাবাহিনীর ধর্মীয় শিক্ষক আবদুল মান্নানের কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন সামরিক বাহিনীর কমান্ড ও স্টাফ কলেজের কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. জুবায়ের সালেহীন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকীসহ সামরিক বাহিনীর কমান্ড ও স্টাফ কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।



 

Show all comments
  • কিরন ২৯ জানুয়ারি, ২০২১, ২:১২ এএম says : 0
    এভাবেই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Abu Bakar ২৯ জানুয়ারি, ২০২১, ২:১৫ এএম says : 1
    শেখ হাসিনার চাইতে ভালো সরকার বাংলাদেশে আর কোন দিন আসবে না জয় বঙ্গবন্ধু ।
    Total Reply(0) Reply
  • Nurul Amin ২৯ জানুয়ারি, ২০২১, ২:১৬ এএম says : 0
    জয়তু শেখ হা‌সিনা
    Total Reply(0) Reply
  • Nurul Alam Manju ২৯ জানুয়ারি, ২০২১, ২:১৭ এএম says : 0
    ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
    Total Reply(0) Reply
  • মাহমুদ ২৯ জানুয়ারি, ২০২১, ২:১৯ এএম says : 0
    অবশ্যই এখানে দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য বাংলাদেশের সকল মানুষের কাছে প্রশংসার দাবিদার।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ