পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা সবাইকে সুরক্ষা দিতে চাই। আপনারা আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন, যেন করোনায় আমরা সবাইকে সুরক্ষা দিতে পারি। যেন আমাদের এই যাত্রায় সফল হতে পারি, সবাই মিলে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ৩ কোটি ৪০ লাখ ভ্যাকসিন পাবে। আমরা ভ্যাকসিন আনার জন্য চুক্তি করেছি। আমরা ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করতে যাচ্ছি। আমাদের দুর্ভাগ্য, কিছু কিছু মানুষ থাকে যারা সবকিছুতেই নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। তারা মানুষকে সাহায্য করে না, উল্টো ভয়ভীতি ঢুকানোর চেষ্টা। তারা ‘সবকিছু ভালো লাগে না’ রোগে ভোগে।
গতকাল রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনার ভ্যাকসিন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভাচুয়ালি যুক্ত হন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর ৫ জনকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়। বাংলাদেশে প্রথম ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের নার্স রুনু বেরোনিকা কস্তা। এরপর একে একে একই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আহমেদ লুৎফুল মোবেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা, ট্রাফিক পুলিশ মো. দিদারুল ইসলাম ও ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইমরান হামিদের শরীরে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। মাত্র ৫ মিনিটেই ৫ জন ব্যক্তিকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্পন্ন হয়। গ্রহণকারীদের কোনও কষ্টবোধ না হওয়া এবং গ্রহণের পর হাসিমুখ দেখে প্রধানমন্ত্রী নিজেও উৎফুল্ল হয়ে যান।
প্রথম টিকা গ্রহণকারী রুনু ভেরোনিকা কস্তা টিকা গ্রহণের আগে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম দিলে শেখ হাসিনা তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার ভয় লাগছে না তো?’ উত্তরে রুনু বলেন, ‘না।’ এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুব সাহসী তুমি। তোমার জন্য শুভকামনা। তুমি আরও বেশি করে রোগীদের সেবা করো।’ টিকা গ্রহণকারীকে হাসিমুখে ভ্যাকসিন নিতে দেখে প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখান। তবে তিনি বলেন, আগে নিলে বলবে, আগে নিলো কাউকে দিলো না; সবাইকে দিয়ে নেই, তারপর নেবো।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনায় সব স্থবির হয়ে গেছে। এই করোনা চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ছেলে পর্যন্ত মায়ের লাশ স্পর্শ করেনি। আত্মীয়স্বজনরা কেউ এগিয়ে আসেনি। এমন সংকটে আমরা মানুষের পাশে ছিলাম। আর্থসামাজিক গতিশীলতা রক্ষায় বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যাবতীয় উদ্যোগ নিয়েছি। ভ্যাকসিনও অনেক দেশের আগে আমরা দিচ্ছি। বিশ্বের অনেক দেশ এখনও করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। আমরা এই ঘনবসতিপূর্ণ দেশে শুরু করেছি। এটা ঐতিহাসিক দিন। ইনশাআল্লাহ আমরা করোনার এ স্থবির অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাব।
তিনি বলেন, মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে আমরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, প্রশাসন, পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন কমিটি করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আনসার ভিডিপিও মানুষের পাশে ছিল। যারা এগিয়ে এসেছিল, সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
সরকারপ্রধান আরো বলেন, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনও আমরা দ্রুততার সঙ্গে নিয়ে এসেছি। ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে আমরা তিন কোটি ৪০ লাখ টিকা পাব। ইতোমধ্যে ৭০ লাখ প্রস্তুত। এক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দেও কার্পণ্য করিনি। এক হাজার কোটি টাকা আগেই বরাদ্দ দিয়ে রেখেছিলাম।
শেখ হাসিনা বলেন, যেকোনো ভ্যাকসিন আসলে টেস্ট করার পর দেয়া হয়। আমাদের দুর্ভাগ্য, কিছু লোক থাকে নেতিবাচক সমালোচনা করে। তারা নিজেরা কাউকে সাহায্য করে না, অন্যের কাজের বিরূপ সমালোচনা করে। মানুষকে ভয়ভীতি দেখায়। পত্রিকা খুললেই দেখবেন, তারা সবকিছুতে দোষ খোঁজে। ভ্যাকসিন আসবে কিনা, আসলে এত দাম কেন? কাজ করবে কিনা? তাদের ‘কিছুই ভালো লাগে না’ রোগ। অবশ্য এ রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আমরা তাদেরও করোনা টিকা দেব। তাদের বলব, তারা যেন সাহস করে আসে। কারণ তাদের কিছু হলে আমাদের সমালোচনা করবে কে? তাদের সমালোচনা যতই হয়েছে, ততই কাজে আমরা উৎসাহ পেয়েছি। দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি করোনায় বেশি আক্রান্ত হয়, সে জন্য আমরা ব্যবস্থা রেখেছি। ভ্যাকসিন ডিসপোজালসহ সব প্রস্তুতিও আছে। আপনারা আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন, যেন করোনায় আমরা সবাইকে সুরক্ষা দিতে পারি। যেন আমাদের এই যাত্রায় সফল হতে পারি, সবাই মিলে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতামত ও অনুশাসন মেনেই আমরা ভ্যাকসিন কার্যক্রম করছি। আমার আকাঙ্ক্ষা ছিল খুব কাছে থেকে এ কাজের উদ্বোধন করব। কিন্তু তা হলো না। কারোনার কারণেই আমাকে বন্দি জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা হাসপাতালে ২৮ জানুয়ারি থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এসব হাসপাতালের ৪০০ থেকে ৫০০ স্বাস্থ্যকর্মী সবার আগে তা পাবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী তাদের মধ্যে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কিনা তা দেখা হবে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে প্রতিটি হাসপাতালেই আলাদাভাবে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মন্ত্রী আরও বলেন, এ প্রক্রিয়ার সবই করা হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী। নির্দেশনায় আগে স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়ার কথা বলা আছে। সময় মতো ভিআইপিসহ অন্যরাও পাবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।