Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মহামারির বছরে যাদের হারিয়েছে বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৮ এএম

২০২০ বছরটি ছিল মহামারীর। করোনাভাইরাস সবকিছুই যেন ওলটপালট করে দিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে রাজনীতি, চলচ্চিত্র, শিক্ষা, সাহিত্য, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেককে। বিদায়ী এ বছরটিতে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল অনেক বেশি। দেশ হারিয়েছে জাতির মেধাবী অনেক সন্তানকে। শোক আর শূণ্যতায় কেটেছে পুরো বছর। বছরটিতে জাতি যাদের হারিয়েছে তাদের সম্পর্কে বর্ননা দেয়া হল।

ড. আনিসুজ্জামান : জাতির বাতিঘর ছিলেন শিক্ষাবিদ, লেখক ও জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। ২০২০ সালের ১৪ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন তিনি। দীর্ঘদিন তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। তার মরদেহ থেকে নমুনা নিয়ে করোনা পরীক্ষা করা হলে জানা যায় তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত একুশে ও স্বাধীনতা পদক এবং ভারত সরকারের পদ্মভ‚ষণ সম্মান অর্জন করেছেন। এই বুদ্ধিজীবীকে হারানো বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় বড় ধরণের শূণ্যতা।

ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী : দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অবদানের জন্য সমাদৃত ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ও সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল, রাজধানীর কলাবাগানের নিজ বাসায় ম্যাসিভ ‘হার্ট অ্যাটাকে’ তিনি ইন্তেকাল করেন। পরে তার করোনা পরীক্ষায় পজেটিভ ধরা পড়ে। একাধারে তিনি গবেষক, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী ছিলেন। তার জন্ম ১৯৪৩ সালে, সিলেটে। তার বাবা আর ভাইসহ পরিবারের অনেক সদস্যই প্রকৌশলী ছিলেন। একসময় বুয়েটে অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জামিলুর রেজা চৌধুরী। দায়িত্ব পেয়েছিলেন ১৯৯৬ সালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও। উপাচার্য ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির। সবশেষ ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। জাপান সরকার জামিলুর রেজা চৌধুরীকে সম্মানজনক ‘অর্ডার অব দ্য রাইজিং সান, গোল্ড রেইস উইথ নেক রিবন’ খেতাবে ভূষিত করেছে। ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি পাওয়া একমাত্র বাংলাদেশি তিনি।

সাহারা খাতুন
৯ জুলাই আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য সাহারা খাতুন ইন্তেকাল করেন। কিডনি ও শ্বাসতন্ত্রের জটিলতায় ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে তিনি মারা যান। তিনি ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এরপর তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। তিনি ঢাকা-১৮ সংসদীয় আসনে পরপর তিনবার নির্বাচিত হন।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক
বার্ধক্যজনিক রোগসহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ অক্টোবর রাজধানীর আদ্ব-দীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। ১৯৩৫ সালে কোলকাতার সুবর্নপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম
করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। ১৯৪৯ সালের ১৭ ফেব্রæয়ারি মুন্সীগজ্ঞের লৌহজং উপজেলার মৌছামান্দা গ্রামে জš§গ্র্রহণ করেন তিনি।

লতিফুর রহমান
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাড়িতে বার্ধক্যজনিত কারণে ১ জুলাই বাংলাদেশের অন্যতম বড় ব্যবসায় গোষ্ঠী ট্রান্সকম গ্রæপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান মারা গেছেন। তিনি প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকার অন্যতম মালিক। এছাড়া, আন্তর্জাতিক ফুড চেইন পিৎজা হাট ও কেএফসি, পেপসি এবং ফিলিপসের বাংলাদেশের ফদ্ধাঞ্চাইজের মালিক ছিলেন তিনি। ওষুধ, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক পণ্য, চা শিল্প, নেসলে বাংলাদেশ, হোলসিম বাংলাদেশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিমাসহ একাধিক কোম্পানিরও প্রধান ছিলেন তিনি। ২০১২ সালে মর্যদাপহৃর্ণ বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন।

মুর্তজা বশীর
চলতি বছরের ১৫ আগস্ট করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর ইন্তেকাল করেন। তিনি করোনা ‘পজিটিভ’ ছিলেন। বহু ভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর ছেলে মুর্তজা বশীর ছিলেন একধারে চিত্রশিল্পী, লেখক, গবেষক। ১৯৮০ সালে একুশে পদক পান মুর্তজা বশীর; স্বাধীনতা পুরস্কার পান ২০১৯ সালে।

কামাল লোহানী
ভাষাসংগ্রামী, মুক্তিযোদ্ধা, বরেণ্য সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ বছর ২০ জুন রাজধানীর মহাখালীতে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। কামাল লোহানী এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ যেকোনো স্বাধীকার আদায়ের আন্দোলনে এক গুরুত্বপহৃর্ণ নাম। সাংবাদিকতার কিংবদন্তী। কামাল লোহানী ২০১৫ সালে সাংবাদিকতায় একুশে পদক লাভ করেন।

মনজুরে মওলা
খ্যাতিমান কবি, রবীন্দ্র-গবেষক, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ও ফেলো মনজুরে মওলা মৃত্যুবরণ করেন গত ২০ ডিসেম্বর। তিনি ভুগছিলেন বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক জটিলতায়। করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনি ও তার স্ত্রী রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মনজুরে মওলা বাংলাদেশের সাহিত্য- জগতে এক অনন্য নাম।

জিয়াউদ্দিন তারিক আলী
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন তারিক আলী ইন্তেকাল করেন গত ৭ সেপ্টেম্বর। তিনি শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। জিয়াউদ্দিন তারিক আলী একাত্তরের যে গানের দল বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছে, সেই দলের সদস্য ছিলেন তারিক আলী।

চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ
করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৯ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ মারা গেছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান তিনি। বিএনপির এই নেতা ফরিদপুর-৩ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায় ১৯৯১ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ২০০১ সালে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি
বছরের দ্বিতীয় দিনেই রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রথম শোকের খবর আসে সাবেক সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসার বাপ্পির আকস্মিক মৃত্যুতে। নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার চার দিন পর ২ জানুয়ারি তার মৃত্যু ঘটে। পরে নমুনা পরীক্ষায় তার সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণের বিষয়টি ধরা পড়ে। পেশায় আইনজীবী বাপ্পির বয়স হয়েছিল ৪৯ বছর। যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর নবম ও দশম সংসদে সংরক্ষিত আসনের সদস্য ছিলেন তিনি।

আবদুল মান্নান
সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান ৬৬ বছর বয়সে ১৮ জানুয়ারি চিরবিদায় নেন। ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি তিনবার এমপি হয়েছেন।

ইসমাত আরা সাদেক
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর সামলানো ইসমাত আরা সাদেক ২১ জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন। যশোর-৬ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। ওই আসনে এক সময় তার স্বামী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এএইচএসকে সাদেক সংসদ সদস্য ছিলেন।

রহমত আলী
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট রহমত আলী ৭৫ বছর বয়সে ১৬ ফেব্রæয়ারি ইন্তেকাল করেন। তিনি গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর-ভাওয়ালগড়-পিরুজালী-মির্জাপুর) আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

শামসুর রহমান শরীফ ডিলু
পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ভূমি মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান শরীফ ডিলু ৮৪ বছর বয়সে ২ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন। পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডিলু ওই এলাকা থেকে পাঁচ বার নির্বাচিত হন। আমৃত্যু ছিলেন তিনি। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে ১৯৯৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর কখনও ভোটে হারেননি তিনি।

সা’দত হুসাইন
মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান সা’দত হুসাইন ৭৩ বছর বয়সে ২২ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন তিনি। দক্ষ আমলা হিসেবে পরিচিত সা’দত হুসাইন পাকিস্তান আমলে ১৯৭০ সালে সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তানে (সিএসপি) যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতে গিয়ে প্রবাসী সরকারে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদের সচিব ছিলেন। ২০০৭ থেকে পাঁচ বছর তিনি পিএসসি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন।

হাবিবুর রহমান মোল্লা
ঢাকা-৫ (ডেমরা-দনিয়া-মাতুয়াইল) আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা ৭৮ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ৬ মে ইন্তেকাল করেন।

রোজিনা আক্তার
বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম নারী ক্যামেরাপারসন রোজিনা আক্তার ২৪ এপ্রিল মারা যান। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ ক্যামেরাপারসন পদে কর্মরত ছিলেন। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রথমে প্রতিবেদক হিসেবে যোগ দিলেও পরে ক্যামেরাপারসন হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন রোজিনা।

নিলুফার মঞ্জুর
প্রায় সাড়ে চার দশক অগণিত শিক্ষার্থীকে জীবন পথের দিশা দেখিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৬ মে ঢাকার সানবিমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নিলুফার মঞ্জুর ইন্তেকাল করেন।

আবদুল মোনেম
বাংলাদেশের বড় বড় অবকাঠামো তৈরিতে যে প্রতিষ্ঠানটির নাম জড়িয়ে, সেই মোনেম গ্রæপের চেয়ারম্যান আবদুল মোনেম ৩১ মে মারা যান। ৮৬ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ীর ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছিল। বাংলাদেশে ছোট থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ী ব্যক্তির ক্ষেত্রে মোনেম বড় উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত। মোনেমের নিজের নামে গড়া এএমএল কন্সট্রাকশনস লিমিটেড দেশের অন্যতম শীর্ষ কন্সট্রাকশনস ফার্ম। সড়ক, সেতু, ফ্লাইওভারসহ দেশের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ কাজে যুক্ত এএমএল কন্সট্রাকশনস পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পেও বিভিন্ন কাজে জড়িত। ইগলু, কোকাকোলা তারই কোম্পানি। ঢাকার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি ছিলেন।

এন আই খান
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম খান বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে ৬ জুন মারা যান। এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এন আই খান নামেই পরিচিত ছিলেন।

মোহাম্মদ নাসিম
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ব্রেইন স্ট্রোকে ১৩ জুন চিরতরে বিদায় নেন। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে নাসিম ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হয়ে রাজনীতিতে পা রাখেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে মনসুর আলী হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ার পর আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন তিনি। ১৯৮৬ সাল থেকে ছয় বার সিরাজগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নাসিম।

সাইফুল আজম
যুদ্ধক্ষেত্রে বৈমানিক হিসেবে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিমানবাহিনী কর্তৃক ‘লিভিং ঈগল’ স্বীকৃতিধারী সাইফুল আজম ৮০ বছর বয়সে ১৪ জুন মারা যান। ১৯৬৭ সালের তৃতীয় আরব-ইসরায়েলি ছয় দিনের যুদ্ধে তিনি চারটি ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিত করে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। পাবনা-৩ আসন থেকে দুবার এমপি হয়েছেন।

খোন্দকার মোজাম্মেল হক
এইচ এম এরশাদের সামরিক শাসনামলে ‘গেদু চাচার খোলা চিঠি’ কলাম লিখে জনপ্রিয় সাংবাদিক খোন্দকার মোজাম্মেল হক ২৯ জুন মারা যান। করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়েই প্রবীণ এই সাংবাদিকের মৃত্যু হয়।

নুরুল ইসলাম বাবুল
দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, যমুনা গ্রæপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল ১৩ জুলাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবুল ১৯৭৪ সালে যমুনা গ্রæপ প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকার বারিধারায় যমুনা ফিউচার পার্ক এবং নির্মাণাধীন মেরিয়টস হোটেলের মালিকানাও রয়েছে যমুনা গ্রুপের হাতে। দৈনিক যুগান্তর ছাড়াও যমুনা টেলিভিশন যমুনা গ্রæপের দুটি প্রতিষ্ঠান। বাবুলের স্ত্রী সালমা ইসলাম একজন সংসদ সদস্য। জাতীয় পার্টির নেতা সালমা এর আগে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

শাহজাহান সিরাজ
মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা পর্বের সাক্ষী শাহজাহান সিরাজ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৭৭ বছর বয়সে ১৪ জুলাই ইন্তেকাল করেন। ছাত্রলীগ, জাসদ ও পরে বিএনপির নেতা হয়ে শাহজাহান সিরাজ মন্ত্রী হলেও একাত্তর সালে উত্তাল মার্চে ছাত্র সমাজের পক্ষে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠকারী হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে নাম লেখা থাকবে তার।

বঙ্গবন্ধুর ‘চার খলিফা’র একজন হিসেবে খ্যাত তিনি। স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে জাসদ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তার। পাঁচ বারের এমপি ছিলেন তিনি। ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে তিনি বন ও পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর সময় দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।

এমাজউদ্দীন আহমদ
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ ৮৮ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৭ জুলাই ইন্তেকাল করেন। ১৯৯২-৯৬ সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক এমাজউদ্দীন সর্বশেষ ইউনির্ভাসিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) উপাচার্য ছিলেন।
বিএনপিতে কোনো পদে না থাকলেও খালেদা জিয়ার একজন পরামর্শদাতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন এমাজউদ্দীন। বিএনপি সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গঠিত শত নাগরিক কমিটির সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন এমাজউদ্দীন। ১৯৯২ সালে শিক্ষা ক্ষেত্রের অবদানের জন্য একুশে পদক পান তিনি।

ইসরাফিল আলম
করোনাভাইরাস সংক্রমণ মুক্ত হওয়ার পর ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে ২৭ জুলাই মারা যান নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম। তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে মিটার রিডার হিসেবে চাকরি করতেন ইসরাফিল আলম। সেখানেই তিতাস কর্মচারী ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের মাধ্যমে তার রাজনীতির শুরু। পরে ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। ২০০৮ সাল থেকে তিনবার এমপি হয়েছেন।

চিত্তরঞ্জন দত্ত (সি আর দত্ত)
মুক্তিযুদ্ধকালীন ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল চিত্তরঞ্জন দত্ত ৯৩ বছর বয়সে ২৫ অগাস্ট যুক্তরাষ্ট্রে মারা যান। তিনি বাসায় পড়েগিয়ে ব্যথা পেয়েছিলেন, পরে অস্ত্রোপচার করলেও আর জীবনে ফিরতে পারেননি। বীর উত্তম সি আর দত্ত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। সেক্টর কমান্ডারস ফোরামেরও নেতা ছিলেন তিনি।

রাহাত খান
প্রবীণ সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক রাহাত খান ৮০ বছর বয়সে ২৮ অগাস্ট ইন্তেকাল করেন। দীর্ঘদিন দৈনিক ইত্তেফাকে কাজ করা রাহাত খান সর্বশেষ দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯৬ সালে রাহাত খান একুশে পদক পান। তার আগে ১৯৭৩ সালে পান বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার।

আবু ওসমান চৌধুরী
স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সেনানী আবু ওসমান চৌধুরী ৮০ বছর বয়সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৫ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন আবু ওসমান চৌধুরী।
স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০১৪ সালে আবু ওসমান চৌধুরীকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে সরকার।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী
হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা, চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ‘বড় মাদ্রাসা’ হিসেবে পরিচিত আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী শত বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে ১৮ সেপ্টেম্বর মারা যান। দেশে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার ভিত মজবুত করতে তার ভূমিকা এবং দেওবন্দের অনুসারী আলেমদের কাছে আহমদ শফী ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র, তাকে ডাকা হত ‘বড় হুজুর’ বলে। কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন।

নওশেরুজ্জামান
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় নওশেরুজ্জামান ৭০ বছর বয়সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২১ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন।

হায়দার আনোয়ার খান জুনো
কমিউনিস্ট নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আনোয়ার খান জুনো ২৯ অক্টোবর হার্ট অ্যাটাকে ইন্তেকাল করেন। কমিউনিস্ট নেতা হায়দার আকবর খান রণোর ছোট ভাই জুনো। ১৯৭০ সালে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন গঠিত হলে তিনি এর সভাপতির দায়িত্ব নেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন জুনো।

শওকত আলী
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শওকত আলী ৮৪ বছর বয়সে গত ১৬ নভেম্বর মারা যান। পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হয়েছিল, তাতে শওকত আলীকে ২৬ নম্বর আসামি করা হয়। শরীয়তপুর-২ আসন থেকে ছয় বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

খন্দকার মুনীরুজ্জামান
দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, কলামনিস্ট খন্দকার মুনীরুজ্জামান ৭৩ বছর বয়সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ২৪ নভেম্বর পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র সাপ্তাহিক একতায় সাংবাদিকতার শুরু করেন।

নূর হোসাইন কাসেমী
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী ৭৫ বছর বয়সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৩ ডিসেম্বর মারা যান। কাসেমী জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব, বেফাকের সহসভাপতি ও আল-হাইয়া বোর্ডেরও কো-চেয়ারম্যান ছিলেন। হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এ সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত ১৫ নভেম্বর নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি হলে সেখানে তাকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া

এম এ হাসেম
পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম এ হাসেম ৭৮ বছর বয়সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ডিসেম্বর মারা যান। ব্যবসায়ী হাসেম ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি, মুক্তি পেয়ে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি ছাড়ার ঘোষণা দেন তিনি। অর্ধ শতক আগে তামাক দিয়ে ব্যবসা শুরু করা হাসেম গত পাঁচ দশকে তার বাণিজ্যের বিস্তার ঘটিয়েছেন আবাসন, আমদানি-রপ্তানি, পার্টিকেল বোর্ড, ইস্পাত, প্লাস্টিক, ভোগ্যপণ্য, ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন খাতে। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হাসেম এক সময় সিটি ব্যাংক লিমিটেড ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন। জনতা ইনসুরেন্স কোম্পানিও তিনি গড়ে তোলেন।

 



 

Show all comments
  • আশিক রহমান খান ১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:৫৩ এএম says : 1
    ধর্ম প্রতিমন্ত্রি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এর নাম কোথায়?
    Total Reply(0) Reply
  • আশিক রহমান খান ১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:৫৬ এএম says : 1
    ধর্ম প্রতিমন্ত্রি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এর নাম কোথায়?
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ দুলাল মিয়া ১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:২১ এএম says : 0
    এদের মধ্যে কয়জন লোক বেশি ভালো ও জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন ।আর কয় জন লোক খারাপ ...লোক ছিলেন।আপনারা কি জানেন ।তবে যারা বেশি ভালো ছিল তাদের আল্লা হেফাজতে রাখবে।আর যারা অসত্ ছিল ।তাদের কি উপায় হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ