পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশ সরকার শীত মৌসুমে নদীর পানি ব্যবহারের জন্য বাতিল হওয়া গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পের বিকল্প হিসাবে গঙ্গার শাখা ও উপশাখা নদীগুলোর উপর প্রাথমিক পানিধার নির্মাণের উপর জোর দিয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকার ভারতের সাথে এ বিষয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে ২৪ বছর আগে ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি পর্যালোচনা করার জন্য প্রস্তুতিও শুরু করেছে। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ঝুলে আছে গত পাঁচ দশক ধরে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অভিন্ন নদী ৫৪টি। কিন্তু এর মধ্যে পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি আছে শুধু গঙ্গা নিয়ে। আবার সেই গঙ্গা চুক্তিতে ন্যায্যতা মানা হচ্ছে না। তবে প্রতিবছর ডিসেম্বর এলে ভারতের সঙ্গে পানি চুক্তি নিয়ে তোর জোর শুরু হয়, জানুয়ারি-ফেব্রæয়ারি মাস শেষ হলে আর পানি নিয়ে আলোচনা থাকে না।
বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন এবং স্থল সীমান্ত চুক্তির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তার্যা বলছেন, এতে আশান্বিত হওয়ার মতো তেমন কিছু এখনো ঘটেনি। তারা মনে করেন, এ নিয়ে কোনো অগ্রগতির সম্ভাবনা নেই। এটা বলতে গেলে ডিপ ফ্রিজ’-এ চলে গেছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের প্রফেসর মুশফিকাস সালেহীন বলেন, গঙ্গাসহ নদীগুলোতে জড়িত বিশাল প্রকল্প গ্রহণের আগে সকল বিকল্প উন্মুক্ত রেখে একটি যথাযথ সম্ভাব্যতা নির্ণয় করা উচিত। পরিবেশ ও মানুষের ক্ষয়ক্ষতিসহ নেতিবাচক প্রভাবগুলো হ্রাস করতে হবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিক বিশ্লেষক প্রফেসর ড. তারেক শামসুর রহমান বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে যে কথা বলেছেন তা এখনো বাস্তবায়ন করাটা হচ্ছে ক‚টনৈতিক শিষ্টাচার ছাড়া আর কিছুই না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৭ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় গঙ্গার পানি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা উত্থাপন করেছিলেন। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারতের অনাগ্রহের কারণেই ভার্চুয়াল আলোচনার পরে দেয়া যৌথ বিবৃতিতে বিষয়টি প্রতিফলিত হয়নি। তবে, গঙ্গার পানির সর্বোত্তম ব্যবহারের সুযোগের ভিত্তিতে সরকার প্রাথমিক পর্যায়ে একটি গবেষণা চালানোর বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
২০১৯ সালের আগস্টে সচিব পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল এবং পরে বিষয়টি নিয়ে একটি প্রযুক্তিগত সংস্থা গঠন করা হয়েছে। ঢাকা সম্প্রতি সমীক্ষার জন্য শর্তাবলীর প্রস্তাব দিয়েছে, তারা বলেছে, টিওআর নিয়ে দিল্লি এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেনি। এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বিষয়টি ত্বরান্বিত করার জন্য বাংলাদেশ যথাসম্ভব চেষ্টা করবে। কারণ এ ধরনের কোনও গবেষণা শেষ করতে কমপক্ষে দুই বছর সময় প্রয়োজন।
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার আনুষ্ঠানিক সফরের পরে রাজবাড়ীর পাংশায় পদ্মা ব্যারেজ প্রকল্পটিকে তিস্তার ব্যারেজের মতো আত্মঘাতী প্রকল্প বলে অভিহিত করেছেন। প্রকল্পের সূত্র ধরে, সরকার এর আগে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ রোধে, চার হাজার কোটি ডলার ব্যয়ে পাংশায় বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সেচের জন্য পানি সরবরাহ করতে এবং সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। সরকার নিজে থেকেই প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গে ফারাক্কা ব্যারেজের উজানের উপর পদ্মার বিরূপ প্রভাব পড়ার বিষয়ে ভারত আপত্তি জানায়। ব্যারেজটি নির্মাণের বিষয়টি নয়াদিল্লি থেকে ছাড়পত্রের অপেক্ষায় রয়েছে। এই পরিকল্পিত ব্যারেজ সম্পর্কে তারা বিশদ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা রিপোর্ট চেয়েছে। সমীক্ষার রিপোর্ট অবশ্য প্রকাশিত হয়নি। ভারত একতরফাভাবে গঙ্গার পানি উজান থেকে কলকাতা বন্দরের দিকে প্রবাহিত করতে ১৯৭৫ সালের এপ্রিলে ফারাক্কা ব্যারেজ চালু করেছিল। ভারতীয় বাঁধের কারণে বাংলাদেশে নদীর পানি প্রবাহকে মারাত্মকভাবে কমে গেছে যার ফলে এর কৃষি, ফিশারি, বনজ, নেভিগেশন এবং শিল্প প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নিম্নাঞ্চলে পদ্মার গভীরতা ও পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বঙ্গোপসাগর থেকে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে যা বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থান সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
বাংলাদেশ ও ভারত ১৯৯৬ সালে ফারাক্কায় গঙ্গার পানির ভাগাভাগি নিয়ে ৩০ বছরের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের পক্ষে এইচডি দেব গৌড় স্ব স্ব সরকারের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। তবে বিদেশি ও স্থানীয় চার সদস্যের প্যানেল দ্বারা পরিচালিত ১৯৯৭ থেকে ২০১৬ সালে করা এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী প্রাপ্য পানি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমের মতো সঙ্কটকালীন সময়ে। ‘গঙ্গার পানি ভাগাভাগির ব্যবস্থার সমালোচনা পর্যালোচনা’ শীর্ষক এই গবেষণাটি যৌথভাবে নেদারল্যান্ডের ওয়াগেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ফুলকো লুডউইগ ও কাজী সাইদুর রহমান, কানাডার আলবার্টা পরিবেশ ও পার্কের গবেষক জাহিদুল ইসলাম এবং বুয়েটের পানি সম্পদ প্রকৌশল বিভাগের উম্মে কুলসুম নাভেরা পরিচালনা করেছিলেন। সমীক্ষাটি চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রকাশিত হয়েছিল। তিস্তা, ফেনী, মনু, মুহুরী, খোওয়াই, গুমতি, ধরলা ও দুধকুমারসহ অন্যান্য সাধারণ নদীর পানি ভাগাভাগির বিষয়েও ভারতের সাথে অন্তর্র্বর্তীকালীন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনায় করে আসছে।
সাধারণ হিসেবে ভারত থেকে ৫৩টি নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আর বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করেছে একটি নদী। আর সেই নদীটি হলো কুলিক নদী। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গিতে উৎপত্তি হয়ে এটি ভারতে প্রবেশ করেছে। এই ৫৪ নদীর মধ্যে মাত্র একটি নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি আছে। আর তা হলো গঙ্গা নদী। কিন্তু সেই নদীর পানির প্রবাহ হিসাব করা হয় ফারক্কা পয়েন্টে। তবে ফারাক্কা পয়েন্টের আগেই অনেক পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশ পায় না বলে অভিযোগ। এছাড়া পাঁচ দশক ধরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে কথা হলেও কোনো ফল আসছে না। ১৯৭৭ সালের গঙ্গা চুক্তিতে শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশকে কমপক্ষে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। ১৯৮২ সালে তা পরিবর্তন করে শুকনো মৌসুমে নজিরবিহীন কম প্রবাহ হলে তা ভাগাভাগির ফর্মুলা বের করা হয়। ১৯৯৬ সালের চুক্তিতেও এমন বিধান রয়েছে। ১৯৯৭ সালে শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশ গঙ্গা থেকে ১০ হাজার কিউসেক পানি পেতেও ব্যর্থ হয়। পরে তা নেমে আসে ৩ হাজার কিউসেকের নিচে।
গবেষণা থেকে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর ১৯৮৩ সালে তিস্তা নিয়ে প্রথম একটি সমঝোতা হয়। সমঝোতা অনুসারে তিস্তার ৩৯ শতাংশ ভারত ও ৩৬ শতাংশ বাংলাদেশের পাওয়ার কথা। বাকি ২৫ শতাংশের বড় অংশ বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত তিস্তার গতিপথকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন। কিন্তু ভারত তা কখনোই মানেনি। ১৯৮৬ সালে দুই দেশের জয়েন্ট কমিটি অব এক্সপার্টের সভায় বাংলাদেশ নদীর পানি ভাগাভাগির রূপরেখায় ব্রহ্মপুত্র নদের ৭৫ শতাংশ, তিস্তাসহ আটটি বড় নদীর (পদ্মা ও মেঘনা ছাড়া) পানির ৫০ শতাংশ দাবি করে। পরে বাংলাদেশ নির্দিষ্টভাবে ২০ শতাংশ পানি তিস্তার নাব্যতার জন্য রেখে দিয়ে বাকি ৮০ শতাংশ সমান ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব দেয়।
ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প কংগ্রেস সরকার বাস্তবায়নে অনীহা দেখালেও মোদি সরকার এটা নিয়ে কাজ করছে। আর ভারতের আদালতের একটা রায়ও আছে এটা বাস্তবায়ন করতে। আন্তঃনদী সংযোগের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি ভারতের মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হবে। ভারত ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি মানস, সন্তোষ, ধরলা, তিস্তায় ক্যানাল করে নিয়ে যাবে। তারপর পাঞ্জাব, মহানন্দা, বিহার হয়ে পানি নিয়ে যাবে। তিস্তা থেকে মেচি, ডাহুক এবং মহানন্দায় পানি নিচ্ছে ভারত।
নদী রক্ষা বিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপল-এর সাধারণ সম্পাদক শেখ রোকন ইনকিলাবকে বলেন, গঙ্গা চুক্তির ফলে বাংলাদেশের ৪৫ হাজার কিউসেক পানি পাওয়ার কথা। তবে শুকনো মৌসুমে পানি তেমন পাওয়া যায় না।
শেখ রোকন বলেন, তিস্তা এবং মনু এই দু’টি নদী ভারত বাংলাদেশের বিশেষ নদী। এই দু’টি নদীতে বাংলাদেশ ব্যারেজ দিয়েছে, ভারতও ব্যারেজ দিয়েছে। তিস্তায় শুকনো মৌসুমে পানি থাকে মাত্র পাঁচ হাজার কিউসেক। পানি থাক বা না থাক যতদিন পর্যন্ত না চুক্তি হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত ভাটির দেশ হিসেবে তিস্তার ওপর বাংলাদেশের অধিকার স্বীকৃত হচ্ছে না। পানি না থাকলে কোনো দেশই পাবে না। পানি থাকলে পাবে।
পানি এবং আন্তর্জাতিক নদী বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী মো. ইমামুল হক ইনকিলাবকে বলেন, ন্যায্যতার জন্য চুক্তি থাকতে হবে। ১৯৯৭ সালে আন্তর্জাতিক নদী ব্যবহারের যে কনভেনশন, তা গঙ্গা চুক্তিতে অনেকটাই মানা হচ্ছে না। তবুও চুক্তি না থাকার চেয়ে চুক্তি থাকা ভালো। এর মূল্য আছে। জাতিসংঘের কনভেনশনে বলা আছে, উজানের দেশ নদীকে এমনভাবে ব্যবহার করবে না, যাতে ভাটির দেশের ক্ষতি হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।