Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা অব্যাহত রাখায় গুরুত্ব দিতে হবে

এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রভাব নিয়ে ইআরএফ’র ওয়েবিনারে সুপারিশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ৬:৩২ পিএম

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) দেশের কাতার থেকে উত্তরণ দেশের জন্য সম্মানজনক। তবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রপ্তানি বাণিজ্যে। পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা আর থাকবেনা। এ কারণে রফতানি আয় বর্তমান থেকে অন্তত ১৪ ভাগ কমে যেতে পারে। এই অভিঘাত থেকে সুরক্ষা পেতে এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা অব্যাহত রাখার বিষয়ে জোর দিতে হবে। জোটগত প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং অন্যান্য প্রচলিত-অপ্রচলিত সব বাজার হিসেবে পরিচিত সব দেশ ও সরকারের সঙ্গে দরকষাকষির কাজটি চালিয়ে যেতে হবে। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে এরকম উদাহরণ আছে।

রোববার (২০ ডিসেম্বর) ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি’ শীর্ষক এক ওয়েবিনার এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও সরকারের প্রতিনিধিরা। শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা অব্যাহত রাখতে আঞ্চলিক জোট, বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। কোন কোন দেশ ও জোটের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) কিংবা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করারও কথাও বলেছেন তারা। এছাড়া ইতিমধ্যে গঠিত জোটেও অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ খুঁজতে হবে। এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপ্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) এবং চীনা নেতৃত্বাধীন রিজিওনাল কমপ্রিহেনসিভ ইকোনোমিক পার্টনারশিপের (আরসিইপি) উদাহরণ দিয়েছেন তারা।

অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোটার্স ফোরাম (্ইআরএফ), গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফল ডেভেলপেমন্ট (র‌্যাপিড) ও এশিয়া ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই আয়োজন করেছে। জুম প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন। বিষয়ের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক। ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশে এশিয়া ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি কাজী ফয়সল বিন সিরাজ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এম আবু ইউসুফ। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশেদুল ইসলাম। অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব নিয়ে ইআরএফ’র সিরিজ আলোচনার অংশ হিসেবে এই আয়োজন করা হলো। এটি এ ধরনের তৃতীয় আয়োজন।

প্রসঙ্গত, আগামী ২২ থেকে ২৬ ফেব্র্র্রুারি জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট কমিটির (সিডিপি) এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করবে। ধারণা করা হচ্ছে এলডিসি থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের পক্ষে সুপারিশ পাওয়া যাবে। এই সুপারিশের পর ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিশ^বাণিজ্যে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা অব্যাহত থাকবে। ২৮ জাতির জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) আরো চার বছর অর্থাৎ ২০২৭ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা থাকবে। এর পর এই সুবিধা আর থাকবেনা। তখন রফতানি অন্তত ১০ শতাংশ কমবে। বর্তমানের তুলনায় রফতানি কমবে ৭০০ কোটি ডলারের মত। অন্যন্য সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও কিছুটা অসুবিধায় পড়বে বাংলাদেশ।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আছে সরকারের। দীর্ঘদিন এলডিসির মধ্যে পড়ে থাকা দেশের জন্য সম্মানের বিষয় নয়। এলডিসি থেকে উত্তরনের ফলে বাণিজ্য বিঘিœত হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই কী হবে সেটা কেবল ২০২৪ সালেই বোঝা যাবে। তিনি বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখতে ইইউ’র সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। ব্রেক্সিট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাজ্যের সঙ্গেও এই আলোচনা করা যায়। একই সঙ্গে প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গেও বাণিজ্য বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। কারণ, আমদানি- রফতানিতে সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ের সুযোগ আছে প্রতিবেশিদের সঙ্গে বাণিজ্যে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, এলডিসি নিয়ে দুশ্চিান্তর কিছু নেই। তবে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। ব্যবসা বাণিজ্য সহজ করার জন্য বিডার বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি। বাণিজ্য সচিব বলেন, এলডিসি উত্তরণের পরও রুপান্তরকাল হিসেবে অতিরিক্ত আরো কয়েক বছর শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে চেষ্টা করছেন তারা। ইইউতে জিএসপি প্লাস সুবিধা নিয়ে আলোচনা চলছে। এলডিসিভুক্ত দেশগুলো নিয়ে সম্মিলিতভাবেও চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। ভুটানের সঙ্গে পিটিএ হয়েছে। নেপালের সঙ্গে হবে আগামী মাসে। এরকম ১১টি দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে।

মূল প্রবন্ধে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মোট রফতানির ৭৫ শতাংশ এখন শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় আছে। এলডিসি থেকে উত্তরণে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা হারানোর পাশাপাশি পণ্যে প্রণোদনা দেয়া যাবেনা। শুল্ক বাড়বে গড়ে ১৪ শতাংশ। সবচেয়ে বড় বাজার ইইউতে বাড়বে ৯ শতাংশ, কানাডায় ১৭, চীনে ১৬ দশমিক ২ ও জাপানে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। ফলে রফতানি কমে যেতে পারে ৭০০ কোটি ডলারের মত। সবচেয়ে বড় বাজার ইইউ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভিয়েতনামের সঙ্গে জোটের এফটিএ হয়েছে। পযায়ক্রমে দেশটির শুল্ক কমছে ইইউতে। ২০২৭ সাল নাগাদ ভিয়েতনামের পণ্য যাবে বিনা শুল্কে। যেখানে বাংলাদেশের পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্কারোপ হবে। তখন কঠিন অবস্থায় পড়বে বাংলাদেশ। শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা অতিরিক্ত তিন বছর বাজার সুবিধা প্রলম্বিত করার আলোচনা শুরুর পরমার্শ দেন তিনি। আগামী ২০২৩ সালে ইইউ জিএসপি পর্যালোচনা হবে। সেই আলোচনা ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হতে হবে বাংলাদেশকে।

এলডিসি থেকে উত্তরণকালে অভিঘাত মোকাবেলায় আরো বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেন তিনি। এরমধ্যে উৎপাদন ও রফতানি সক্ষমতা বাড়ানো, খাতভিত্তিক অগ্রাধিকার নির্ধারণ, দ্বিপাক্ষিক কৌশলী অবস্থান নির্ধারণ অর্থাৎ পরিস্থিতি বুঝে কোন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক, কোন জোটভুক্ত হওয়া যেমন, আরসিইপি, টিপিপিতে যুক্ত হওয়া। এছাড়া শুল্ক হার ক্রমান্বয়ে আরোপের সুযোগ নেওয়া । ড. রাজ্জাক রফতানির স্বার্থে আমদানি নীতি সংস্কার, জিডিপি অনুপাতে কর বাড়ানোসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন। ওয়েবিনারে ইআরএফের সদস্য বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা অংশ নেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ