Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার করবেন না

জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার না করার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ তবে ধর্মান্ধ নয়। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সব ধর্মের-বর্ণের মানুষের রক্তের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। কেউ ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার করবেন না। গতকাল জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তিনি এ আহবান জানান। বিটিভিসহ সবগুলো গণমাধ্যমে সরাসরি এ ভাষণ প্রচার করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশ লালন শাহ, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দ, শাহজালাল, শাহ পরান, শাহ মকদুম, খানজাহান আলীর। এটা শেখ মুজিবের বাংলাদেশ; এ দেশ সকলের। ধর্মের নামে কোন ধরনের বিভেদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেব না। ধর্মীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে এ দেশের মানুষ প্রগতি, অগ্রগতি এবং উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবেন। তিনি আরো বলেন, ১৯৭১’র পরাজিত শক্তির একটি অংশ মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া বক্তব্য দিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে মাঠে নেমেছে। সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। জাতির পিতা ১৯৭২ সালে বলেছিলেন ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার না করতে। পরাজিত শক্তির দোসররা দেশকে আবার ৫০ বছর আগের অবস্থায় ফিরে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। রাজনৈতিক মদদে সরকারকে ভ্রæকুটি দেখানোর পর্যন্ত ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে।

বর্তমান সরকারের সময়ে ইসলামী শিক্ষার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে বাঙালি জাতির যে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছিল; বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে তা স্তব্ধ হয়ে যায়। অথচ তিনি এ দেশের লক্ষ-কোটি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। জাতির পিতা একজন খাঁটি মুসলমানই ছিলেন এবং ধর্মীয় আচারাদি নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতিপালন করতেন। তিনি যখন সংবিধান রচনা করেন, তখন মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র এই চারটি মৌলিক বিষয়কে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় ’৭৫ পরবর্তী সময়ে সামরিক জান্তারা সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। ইতিহাস বিকৃত করে আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কালিমা লেপনের চেষ্টা করে। শেখ হাসিনা বলেন, ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধু ইসলাম ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষা ও প্রসারে যা করেছেন, ইসলামের নামে মুখোশধারী সরকারগুলো তা করেনি। আইন করে মদ-জুয়া-ঘোড়দৌড় নিষিদ্ধ করা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা, মাদ্রাসা বোর্ড স্থাপন, ওআইসি’র সদস্যপদ অর্জনের মত কাজগুলো বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই বাস্তবায়িত হয়। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্বে আসে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে এবং ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়ন করেছে। ধর্মীয় শিক্ষা প্রসারে যত কাজ করেছে, অন্য কোন সরকার তা করেনি। আমরা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছি; ৮০টি মডেল মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। কওমী মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দিয়েছি এবং দাওয়ারে হাদিস পর্যায়কে মাস্টার্স মান দেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছি। প্রতিটি জেলা-উপজেলায় দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। ইমাম-মোয়াজ্জিনদের সহায়তার জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে দিয়েছি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতায় সারাদেশে মসজিদ-ভিত্তিক পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে। লক্ষাধিক আলেম-ওলামায়ে কেরামের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উন্নয়নের ধারাবাহিক চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছি। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার। আমরা তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। তবেই ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের উন্নত, সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে। বঙ্গবন্ধু বলতেন ভিক্ষুক জাতিকে কেউ সম্মান করে না। আমরা বাংলাদেশের সেই দুর্নাম ঘুচিয়েছি। আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ একটি সমীহের নাম। আজকের বাংলাদেশ স্বাবলম্বী বাংলাদেশ। একটা সময় ছিল আমাদের উন্নয়ন বাজেটের সিংহভাগ আসতো বিদেশি অনুদান থেকে। এখন বাজেটের ৯৭ ভাগ মেটানো হয় নিজস্ব অর্থায়নে। বাংলাদেশ কারও দয়া বা করুণার উপর নির্ভরশীল নয়। তিনি আরো বলেন, করোনার কারণে বছরটি শুধু আমাদের জন্যই নয়, বিশ্ববাসীর জন্য এক দুর্যোগময়। করোনাভাইরাসের মহামারি স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার পাশাপাশি অর্থনীতির উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশ্ব অর্থনীতি এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। করোনাভাইরাসের মহামারির ফলে অনেক উন্নত এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির মুখে পড়েছে। আমরা সময়োচিত পদক্ষেপ এবং কর্মসূচি গ্রহণ করে এই নেতিবাচক অভিঘাত কিছুটা হলেও সামাল দিতে সক্ষম হয়েছি। প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি যা জিডিপি’র ৪.৩ শতাংশ। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ২.৫ কোটি প্রান্তিক মানুষকে নগদসহ নানা সহায়তা দিয়েছি। প্রবাসী আয়, কৃষি উৎপাদন এবং রপ্তানি বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। গত অর্থবছরে ৫.২৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রক্ষেপণ বলছে ২০২০ সালে বাংলাদেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি হবে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। তিনি আরো বলেন, উন্নয়নের বৃহৎ প্রকল্পগুলোর কাজ এগিয়ে চলছে। আমাদের স্বপ্নের ও গর্বের পদ্মাসেতুর সবগুলো স্প্যান বসানো শেষ। ঢাকায় মেট্রোরেলের কাজ আবার পুর্ণদ্দোমে শুরু হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ এই মহামারিতে একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলির নদীর তলদেশে ট্যানেল নির্মাণের কাজ দ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের মহাসড়কগুলো চার-লেনে উন্নয়নের কাজও পুরোদমে এগিয়ে চলছে।

করোনাকালের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বছর আমাদের বিজয় দিবস উদ্যাপন করতে হচ্ছে। করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে দৈনন্দিন কার্যপ্রণালীতে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে, জনসমাগম এড়িয়ে আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম সম্পন্ন করতে হচ্ছে। চলতি বছর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা উদ্যাপন করছি। আগামি বছর স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি। করেনাভাইরাসের এই মহামারি না থাকলে আমরা যথাযথ উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উদযাপন করবো, ইনশাআল্লাহ। #



 

Show all comments
  • মোঃ দুলাল মিয়া ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
    নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে জনগণকে এই কথাগুলি বললে খুশী হবে । যে খানে আমরা নাগরিক হিসাবে ভোট দিতে পারি নাই পারলাম না। ...................
    Total Reply(0) Reply
  • টুটুল ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:২২ এএম says : 0
    আমাদের সকলের উচিত ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা
    Total Reply(0) Reply
  • Salim Chowdhury ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৫৮ এএম says : 1
    স্যালুট মমতাময়ী নেত্রী, মা মাটি ও দেশের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুুত অাছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Shafiqul Islam Muqul ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৫৮ এএম says : 0
    হে মহান আল্লাহ্ তুমিই রহমানির রাহিম দয়াময় তুমিই জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু দান কর।
    Total Reply(0) Reply
  • Sukh Ranjan Chakrobarty ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:০০ এএম says : 1
    জয়তু দেশরত্ন জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের মধ্যে দল সৃষ্টি করে এক শ্রেনীর সুবিধা বাদী রাজনৈতিক নেতা ত্যাগী নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আপনি সতর্ক হোন। মহান বিজয় দিবসে আপনাকে জানাই অভিনন্দন ও শুভকামনা। জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
    Total Reply(0) Reply
  • Monika Hira ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:০৪ এএম says : 1
    জনগন এখন সচেতন হয়েছে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেত্রীত্বে চলমান উন্নয়নের গতিকে আর কোন চক্রান্তই বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।এই চক্রান্তকারীদের স্বরুপটা ও উদ্দেশ্য জনগন এখন বুঝতে পেরেছে।তাদের এখন শূন্য মাঠে গোল দেওয়া ছাড়া আর কোন কাজ নাই। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। হাসিনা ম‍্যাজিক হয়নি শেষ।
    Total Reply(0) Reply
  • jesmin anowara ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:৫২ এএম says : 0
    As a Muslim from personal life to state life you have to follow Quran and hadith .; Are you doing that Answer is not. whenever Islamic scholar say anything from Quran and hadith. some criminal and inhumane from your party use disrespectful language to aleem and olema. and you say nothing because you need these animal to stay in power for ever, these animal from your party also ﯭcriticize with Quran and hadith,
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৫:২১ এএম says : 0
    ... ইসলাম ধর্ম রাজনীতি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ