Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ফিনিশ প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব

এফবিসিসিআই-ফিনচ্যাম বিজনেস ইভেন্ট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ৭:৩৭ পিএম

বাংলাদেশ ও ফিনল্যান্ডের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সম্ভাবনার সর্বোচ্চ সদ্বব্যহারে ব্যবাসায়ী পর্যায়ে যৌথ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি ফিনিশ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও তাদের কারখানা গড়ে তুলে স্থানীয় বাজারে সরবরাহের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও তাদের পণ্য রফতানি করতে পারে।

বুধবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলের এফবিসিসিআই-আইকন টাওয়ারে ‘ফিনল্যান্ড বাংলাদেশ বিজনেস ইভেন্ট অন বাইল্যাটেরাল ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ ইন দ্য অনগোয়িং গ্লোবাল প্যানডেমিক অ্যান্ড বিয়ন্ড’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে আলোচকরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) ও ফিনিশ চেম্বার অফ কমার্সের (ফিনচ্যাম) যৌথ উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি ছিলেন ফিনল্যান্ডের ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন অ্যান্ড ফরেন ট্রেড বিষয়ক মন্ত্রী ভিলে স্কিনারি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম। এফবিসিসিআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ মাহফুজুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ফিনচ্যামের প্রেসিডেন্ট ও সিইও জুহো রমাকাম্মেয়ি, সিনিয়র অ্যাডভাইজার জেনি আইসোলা, এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা সোনিয়া বশির কবির, প্রফেসর ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার, মেকালিফটের সিইও জেনি কালিওমাকি এবং ওয়ার্টসিলার প্রেসিডেন্ট ও সিইও জাকো এস্কোলা। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন ফিনচ্যামের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট টিমো ভিওরি।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, যেসব ইউরোপীয় বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল, তার মধ্যে ফিনল্যান্ড অন্যতম। বাংলাদেশ ও ফিনল্যান্ডের বাণিজ্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে। বাংলাদেশী রফতানিকারকরা ফিনল্যান্ডে আরো পণ্য রফতানি সুযোগ নিতে আগ্রহী।

করোনার কারণে পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হওয়ার কাঁচামাল আমদানি যেমন কমেছে, তেমনি শিল্প উৎপাদনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে বাণিজ্য আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এ বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে মোকাবেলা করা উচিত।

ফিনল্যান্ডের ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন অ্যান্ড ফরেন ট্রেড বিষয়ক মন্ত্রী ভিল স্কিনারি বলেন, করোনার আগে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য ধীর হলেও বাড়ছিল। আমরা আশা করি দ্রুত পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারব।

তিনি বলেন, ফিনল্যান্ডে বাংলাদেশে পণ্য রফতানির ভাল সুযোগ রয়েছে। আমরা সম্মিলিতভাবে আরো ভাল কিছু করতে পারি।

চলতি বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনের কথা স্মরণ করে এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, তার গড়ে দেয়া ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত দেশ হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ও ফিনল্যান্ডের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাইল্যাটেরাল ভ্যালু চেইন ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে ফিনল্যান্ডের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দক্ষতা উন্নয়ন, এডিআর, ফলিত গবেষণাসহ বিভিন্ন খাত এবং বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা বাড়ানোর সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখার মাধ্যমে আমরা বাণিজ্য পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিতে পারি। আমরা এফবিসিসিআইয়ের এডিআরের বিচারক প্যানেলে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করতে ফিনল্যান্ডের সহযোগিতা চাই।

তিনি বলেন, ওয়ার্টসিলার মতো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের ধীরে ধীরে কারখানা স্থাপন করে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি ও সংযোজনের সুযোগ নিতে পারে, যা তারা এখান থেকে স্থানীয় বাজারে সরবরাহের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও তাদের পণ্য রফতানি করতে পারবে।

প্রশ্নোত্তর পর্বে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফিনল্যান্ড থেকে যেসব পণ্য বাংলাদেশে আসে, তারা সেগুলো ধীরে ধীরে বাংলাদেশে তৈরি করা শুরু করতে পারে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয়, সেগুলো বাংলাদেশে তৈরি করে এখানেই ব্যবহার করতে পারে। পাশাপাশি আশেপাশের বাজারে রফতানি করতে পারে। শুরুতে বড় আকারে না হলেও ছোট আকারে তারা এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে। একইভাবে বাংলাদেশের কৃষিখাত, ফিনটেক, স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নেও ফিনল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসতে পারে।

ফিনচ্যামের প্রেসিডেন্ট ও সিইও জুহো রমাকাম্মেয়ি বলেন, ফিনিশ কোম্পানিগুলোও এমন এক সময়ে বাংলাদেশে নতুন নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগের খোঁজ চালাচ্ছে, যখন দেশটি নিজেই নিজের অর্থনীতিকে আরো আধুনিক করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশে প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপ নিয়ে আগ্রহী। আন্তর্জাতিক অর্থায়ন প্রকল্প এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্টের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারে আমাদের নিজেদেরই উপায় বের করতে হবে। তিনি বলেন, আমারা দু’দেশের ব্যবসায়িক পর্যায়ে সম্পর্ক জোরদারের নতুন উপায় খুঁজে দেখছি। এজন্য আমরা উভয় দেশের ব্যবসায়ী নিয়ে বাইল্যাটেরাল বিজনেস কাউন্সিল তৈরিতে প্রস্তুত আছি।

ফিনচ্যামের সিনিয়র অ্যাডভাইজার জেনি আইসোলা বলেন, বাংলাদেশ ফিনল্যান্ড যখন বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের পদক্ষেপে নিচ্ছে তখন, এ ধরনের আয়োজনে শামিল হতে পেরে আমরা আনন্দিত। তিনি বলেন, আমরা দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে অভিন্ন ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক স্থাপন নিয়ে আলোচনায় করতে আগ্রহী।

ওয়ার্টসিলার প্রেসিডেন্ট ও সিইও জাকো এস্কোলা বলেন, ৯০ দশকের শুরুর দিকে আমরা বাংলাদেশ কার্যক্রম শুরু করি। ধীরে ধীরে আমরা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের যন্ত্রপাতির সরবরাহে নেতৃত্ব স্থানীয় অবস্থানে আছি। ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার জন্য আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে আরো বেশি নজর দিতে হবে।আমরা এক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

সোনিয়া বশির কবির বলেন, কোভিডের একটি ভাল দিক হলো ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন। আশা করি, আমরা এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারব।

মেকালিফটের সিইও জেনি কালিওমাকি বলেন, বাংলাদেশ খুব দ্রুত উন্নতি করেছ। এ দেশটি আমাদের জন্য সম্ভাবনায় বাজার। বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দরেও মেকালিফটের সরঞ্জাম ব্যবহার হচ্ছে।এক্ষেত্রে ফিনল্যান্ড সহযোগিতা করতে পারে।

প্রফেসর ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার, বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল দেশ হওয়ার সুবাদে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। ফিনচ্যামের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট টিমো ভিওরি বলেন, এ সময়ে আমাদের সবাইকে এই নিউনরমালে কিভাবে সবকিছু স্বাভাবিক রাখা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফিনল্যান্ডের সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ নিতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ