পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ-ভুটান পিটিএ পারস্পরিক স্বার্থের দিক দিয়ে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুসংহত করবে। উভয় পক্ষের স্বাক্ষরিত অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) আমাদের দু’দেশের সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করতে ভুমিকা রাখবে। সেক্ষেত্রে পরবর্তী ৫০ বছর আমাদের অঞ্চলের নাগরিকদের টেকসই উন্নয়ন এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ প্রত্যক্ষ করবে, বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
গতকাল গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম পিটিএ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে একথা বলেন। এর আগে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি ও ভুটানের অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী লোকনাথ শর্মা চুক্তি সই করেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং সে দেশের রাজধানী থিম্পু থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন সময় এসেছে আমরা পারস্পরিক সুবিধার জন্য এবং উভয় দেশের নাগরিকদের সামগ্রিক উন্নতি ও কল্যাণের জন্য আমাদের অসাধারণ সম্পর্ককে আরও বেশি অর্থবহ করে তুলি।
তিনি বলেন, এই চেতনায় আমরা আজ ভুটানের সঙ্গে পিটিএতে স্বাক্ষর করেছি। এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ এবং ভুটান থেকে বিস্তৃত পণ্য একে অপরের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। চুক্তিতে পারস্পরিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত তালিকা অন্তর্ভুক্ত করারও বিধান রয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, কেননা আমরা বিশ্বের কোন দেশের সঙ্গে আমাদের প্রথম পিটিএ স্বাক্ষর করছি। আর ভুটানই প্রথম দেশ একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভোম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া ভুটানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির এই দিনটিকেই শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা স¤প্রসারণের লক্ষ্যে দুই দেশ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের দিন হিসেবে বেছে নেয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টান্ডি দরজি এবং অর্থমন্ত্রী লিয়নপো লোকনাথ শর্মা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প এবং বিনিযোগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম, বাংলাদেশে ভুটানের রাষ্ট্রদূত কুসাব রিনচেন কিউয়েনটিল এবং ভুটানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত একেএম শহিদুল করিম থিম্পু প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-ভুটান সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী একযোগে একটি লোগো উম্মোচন করেন এবং পৃথক কেক কাটেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, কেননা আমরা বিশ্বের যে কোনও দেশের সাথে আমাদের প্রথম পিটিএ স্বাক্ষর করছি। আর ভুটানই প্রথম দেশ যা একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পরে একটি সার্বভৌম এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, এই দিনে আমরা ভুটানের কাছ স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি লাভের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভুটান সম্পর্ক উদযাপন করতে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভুটানের ৩য় রাজা এবং জনগণের অবদানের কথা স্মরণ করেন। ১৯৭১ সালের এই দিনে ভুটানের স্বীকৃতি প্রদানের ঘটনার স্মৃতিরোমন্থন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা তখন রাজধানীর একটি একতলা বাড়িতে তিন মাসের শিশু সজিব ওয়াজেদ জয় এবং শিশু রাসেলসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে বন্দি, বাবা বন্দি পাকিস্তানে। শেখ কামাল এবং শেখ জামাল পালিয়ে তখন মুক্তিযুদ্ধে চলে গেছে। এমন অবস্থায় সেদিন মেঝেতে বসে ছিলেন তখনই এই সংবাদটি তারা পান। শেখ হাসিনা বলেন, মুহূর্তেই আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট ভুলে গেলাম, আমরা চিৎকার- চেচাঁমেচি, হুল্লোড় এবং কান্না জুড়ে দিলাম। যা আমি কখনও ভুলতে পারবো, না।
বাংলাদেশ ও ভুটানের যোগসূত্রকে ‘অত্যন্ত প্রাচীন’ বলে আখ্যা দেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশ্বাস করি এই চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরে বাংলাদেশের জনগণ ভুটানের তরতাজা আপেল, কমলালেবুসহ অন্যান্য তাজা ফলমূল ও শাকসবজি গ্রহণের সুযোগ পাবে এবং ভুটানের ফ্যাশন সচেতন মানুষ বাংলাদেশ থেকে আরও মানসম্মত পোশাক নিতে পারবেন। বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্পগুলো ভুটানের পাথর ব্যবহারে লাভবান হতে পারে এবং বাংলাদেশে ওষুধগুলো ভুটানের স্বাস্থ্যখাতে অবদান রাখতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশের চিলমারী বন্দরের উন্নয়ন করছি, নারায়ণগঞ্জের পানগাঁও ভুটানের জন্য উন্মুক্ত। শুধু তাই নয়, আমাদের তিনটি বন্দর চট্টগ্রাম, মংলা, পায়রা ভুটান চাইলে ব্যবহার করতে পারবে। আমাদের সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে অঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে এর উন্নয়ন করা হচ্ছে, যা ভুটানের জন্য উন্মুক্ত।
প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং তার ভাষণে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ এবং বঙ্গবন্ধৃ শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে(বিএসএমএমইউ) প্রায় ১০ বছর অধ্যয়নকালীন বাংলাদেশে অবস্থানের কথা স্মরণ করে বাংলাদেশকে তার ‘সেকেন্ড হোম’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
গতকাল সকালেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপে তার প্রতি মাতৃত্বসুলভ দৃষ্টিভঙ্গির জন্য কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ভুটানের স্বীকৃতির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমরা আজ একত্রিত হয়েছি। তিনি এ উপলক্ষ্যে উভয় দেশের জনগণকে অভিন্দন জানানোর পাশাপাশি কোভিড-১৯ কে সফলভাবে মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও অভিনন্দন জানান। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, নানা প্রতিক‚লতা সত্বেও বাংলাদেশ সব সময়ই ভুটানের পাশে থেকেছে। আর এই চুক্তি স্বাক্ষরই ভুটানকে অধিক গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণে বাংলাদেশের স্বীকৃতি। বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ট্রান্সশিপমেন্ট এবং এই সংক্রান্ত এসওপি ইতোমধ্যে সই করা হয়েছে। পিটিএ দুই দেশের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।
ভুটানে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া ১০০ টি পণ্য
বাংলাদেশের পণ্যের মধ্যে রয়েছে- তৈরি পোশাক শিল্প, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী যেমন- জুস, কনডেন্সড মিল্ক, বিস্কিট, মিনারেল ওয়াটার, পাউরুটি, কৃষিজাত পণ্য যেমন- আলু, প্রসাধনী সামগ্রী, টয়লেট্রিজ পণ্য যেমন- সাবান ও শ্যাম্পু, শুঁটকি মাছ, সিমেন্ট, চা, ফ্লাইউড, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যসহ অন্যান্য পণ্য।
এ ছাড়া পুরুষদের জ্যাকেট, বেøজার, ট্রাউজার, আন্ডারওয়্যার, বাচ্চাদের পোশাক, চকলেট, বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক পণ্য ও গুডস, চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য, গার্মেন্টস পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, অ্যালোমিনিয়াম ডোর, কাঠের তৈরি পণ্য, ইলেকট্রনিকস পণ্য, ফুটওয়্যার, ক্যাবলস, ঘড়ি, বেল্ট, মেটাল ও প্লাস্টিক ফার্নিচার ইত্যাদি শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছে। আর ভুটান থেকে বোল্ডার, জিপসাম, ডোলোমাইট, ফল ও জুস, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য যেমন জ্যাম ও জেলি, মসলা, ফার্নিচারসহ অন্যান্য পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।