পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাজী সেলিমের দখল সাম্রাজ্য রাজধানীর বাইরেও বিস্তৃত। ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জায়গা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি, ভবন, মার্কেট- যেখানে যেভাবে পেরেছেন দখলের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় ছেলে ইরফান সেলিম গ্রেফতার হওয়ার পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে ঢাকা-৭ আসনের দাপুটে এই সংসদ সদস্যের ‘দখলকাহিনী’। বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) হাজী সেলিম পরিবারের অবৈধ সম্পদের খোঁজে নেমেছে। এলাকাবাসী মনে করছে, হাজী সেলিমের দখল করা সম্পদ-স্থাপনা উদ্ধারের এখনই উপযুক্ত সময়।
অন্যদিকে হাজী মোহাম্মদ সেলিমের বেদখল করা শত কোটি টাকার জমি উদ্ধার করে এক সপ্তাহও রাখতে পারেনি সরকারি মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক। ব্যাংকের নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে জমিতে হাজী সেলিমের স্ত্রীর মালিকানা দাবির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সীমানা প্রাচীরের ফটকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে তালা। এদিকে ব্যাংকের কর্মকর্তারা ভয়ে সেই জমিতে যাচ্ছেন না। ব্যাংকটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিজেদের দখল ফিরে পেয়ে অগ্রণী ব্যাংক স্থাপনা নির্মাণের জন্য যেসব নির্মাণসামগ্রী রেখেছিল, সেগুলোও সরিয়ে নিয়েছেন হাজী সেলিমের লোকজন। এ ঘটনার পর গত ৫ নভেম্বর চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে র্যাবকেও চিঠি দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই জমিটি সে সময়ের হাবিব ব্যাংকের ছিল। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর হাবিব ব্যাংক ও কমার্স ব্যাংক একীভূত করে গঠন করা হয় অগ্রণী ব্যাংক। আর সেখানেই করা হয় ব্যাংকটির শাখা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই শাখার উদ্বোধন করেন। সেখানে তার একটি ব্যাংক হিসাবও ছিল। ওই জমিতে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় পরে ব্যাংকটির শাখা পাশের একটি ভবনে সরিয়ে নেওয়া হয়। আর এই জমিতে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। উদ্ধারের পর ঝুলানো হয়েছে সাইনবোর্ড। চলতি বছরের মার্চে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর ব্যাংকের কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে। এই সুযোগে হাজী সেলিমের লোকজন জায়গাটি দখল করে নেয়। তারা বুলডোজার দিয়ে পুরনো ভবন গুঁড়িয়ে দিয়ে সীমানা প্রাচীর তুলে দেয়।
একটি সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, যাদের জায়গা বেহাত হয়েছে, তারা কেউই মুখ খুলতে চান না। তাদের শঙ্কা, পরিস্থিতি অনুকূলে এলে তারা হাজী সেলিম পরিবারের রোষানলে পড়তে পারেন।
একাধিক সূত্র জানায়, শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনের জন্য স্কুল ভবন ও বধির কমপ্লেক্স নির্মাণে ২০০৫ সালে লালবাগের কামালবাগ এলাকায় এক একর জমি বরাদ্দ দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। জমিটি সরকারের অকৃষি খাসজমি। শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য দেশের একমাত্র সরকারি এ উচ্চ বিদ্যালয়টি বাংলাদেশ জাতীয় বধির সংস্থার প্রধান প্রকল্প। বধির স্কুলের পক্ষে বরাদ্দের নথি থেকে জানা গেছে, ২০০৫ সালে পাঁচ লাখ টাকা প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ দেওয়া হয় জমিটি। বধির স্কুল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বরাদ্দ পাওয়ার পর তিন বছর জমিটি তাদের দখলে ছিল। ২০০৮ সালে হাজী সেলিমের লোকজন জমির সীমানা খুঁটি উপড়ে ফেলে, লোকজনকে মেরে তাড়িয়ে দিয়ে জমির দখল নেয়। এখন সেখানে হাজী সেলিমের ফিলিং স্টেশন । জমি ফিরে পেতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। পালন করা হয়েছে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনের মতো কর্মসূচি। সবশেষ গত ২৭ অক্টোবর জমি উদ্ধারে সহযোগিতা চেয়ে র্যাবের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় বধির সংস্থা। জায়গার মালিকানা দাবি করে হাজী সেলিম ২০০৯ সালে আদালতে মামলা করেছিলেন। মামলার রায় স্কুল কর্তৃপক্ষের পক্ষে গেলেও হাজী সেলিমের দখল থেকে জমিটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
কামরাঙ্গীরচরের ঝাউচরে বিআইডব্লিউটিএর এক একর জমি দখল করে স্থাপনা বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন হাজী সেলিম। সেসব স্থাপনা উচ্ছেদও করা হয়েছিল, কিন্তু ধরে রাখা যায়নি।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেন, উদ্ধার করে আসার পরপরই ওই জমি দখলে নিয়েছেন হাজী সেলিম। উনি একই কাজ বারবার করছেন। চকবাজারের ছোট কাটরায় হাজী সেলিমের বাবার নামে করা চাঁন সরদার কোল্ড স্টোরেজের জায়গাটিও জোর করে দখলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। হাজী সেলিমের দখল থেকে তিব্বত হল উদ্ধারের দাবিতে মানবববন্ধনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাহাজী সেলিমের দখল থেকে তিব্বত হল উদ্ধারের দাবিতে মানবববন্ধনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাচকবাজার এলাকার নলগোলা সর্দার হার্ডওয়্যার মার্কেটের মালিক হাজী সেলিম। সর্দার হার্ডওয়্যার যেখানে বানানো হয়েছে সেটি ভাওয়াল এস্টেটের সম্পত্তি। এই সম্পত্তি নিয়ে ভাওয়াল এস্টেটের সঙ্গে মামলা চলছে। গত ঈদুল ফিতরের আগের রাতে চকবাজারের বশির মার্কেট ভেঙে ফেলেন হাজি সেলিম। রাতারাতি দখলে নিয়ে নেন এই মার্কেটটি। চকবাজারের মদিনা আশিক টাওয়ারও হাজী সেলিম কৌশলে দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত দুই যুগে হাজী সেলিমের লোকজন শত শত মানুষের জমি দখলে নিয়েছে। পাকা ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে। অনেক পরিবারকে উচ্ছেদ করেছে। হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত জমি দখলের পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন, নবাব পরিবারের সম্পত্তি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে। সেলিম বাহিনীর দলবাজি চললেও কেউ কিছুই করতে পারেনি। এমনকি তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ যাওয়ার পর জায়গা ছেড়ে দিতে প্রশাসন থেকে বারবার বলা হলেও কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করেননি হাজী সেলিম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।