Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জমি দলিলের ৮ দিনের মধ্যেই নামজারি

উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানা সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ শেখ হাসিনার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

জমির রেজিস্ট্রেশন করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার নামজারি ও রেকর্ড সংশোধন প্রক্রিয়ায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে উত্তরাধীকার সূত্রে জমির মালিকানার বিষয়টিও এই সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত এবং হিজড়া জনগোষ্ঠিরাও যেন জমির মালিকানা থেকে বঞ্চিত না হন তা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে রেজিস্ট্রেশন স্বচ্ছ হবে, নামজারি এবং রেকর্ড সংশোধন অটোমেটিক হবে। এছাড়া উত্তরাধীকার সূত্রে জমির মালিকানার বিষয়টিও এই সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং এসিল্যান্ডকে বাধ্যতামূলকভাবে সেই জমির রেকর্ড সংশোধন করতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী। দেশের মানুষ, সর্বসাধারণ, ইনভেস্টরদের একটা বড় রকমের রিলিফ দেবে, নতুন একটা অধ্যায় সৃষ্টি হবে এবং ধারণা যে মামলা- মোকদ্দমা অনেক কমে যাবে। তিনি বলেন, অনেক দিন থেকে কার্যক্রম চলছিল। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন জমির রেজিস্ট্রেশন ও নিউট্রেশন কীভাবে আরও কমফোর্টলি করা যায়, মানুষের হয়রানি না হয়, সময় যাতে কম লাগে। ভ‚মি রেজিস্ট্রেশন আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন সাব- রেজিস্ট্রার অফিস করে। আর ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের অধীন উপজেলা অফিস বা সার্কেল ভ‚মি অফিস জমির নামজারির কাজ করে।
আনোয়ারুল বলেন, দুটি ভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করা হয় বলে সমন্বয় করা কষ্টসাধ্য ছিল, এজন্য দীর্ঘসূত্রিতা ছিল। রেজিস্ট্রেশনে কিছুটা অস্পষ্টতা ছিল, যে কোনো জমি যে কেউ গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে পারত। আবার মিউট্রেশনের ক্ষেত্রের ঝামেলা হত, দলিল পাওয়া যেত না, এলটি নোটিশ বোঝা যেত না, এ কারণে দীর্ঘদিন এগুলো পড়ে থাকত। এখন থেকে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস এবং এসিল্যান্ডের অফিসের মধ্যে ইন্টার অপারেটবল সফটওয়্যার থাকবে। বাংলাদেশের সব এসিল্যান্ড অফিসের চার কোটি ৩০ লাখ রেকর্ডস অফ রাইটস অনলাইনে চলে এসেছে। এখন থেকে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস এবং এসিল্যান্ড অফিসের একজন আরেকজনের ডাটাবেইজে ঢুকতে পারবে। যখন কেউ জমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য যাবে, সাব-রেজিস্ট্রার আগের মত সাথে সাথে রেজিস্ট্রি করে দেবে না, অনলাইনে এসিল্যান্ডের অফিস থেকে রেকর্ড অব রাইটস-এর স্ট্যাটাস জানবেন। রেসপন্সিভ সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেই তথ্য জানানো হবে। তখন এসিল্যান্ডও জানবেন এই তথ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এলটি নোটিশ এমনভাবে লেখা ছিল যে অনেক সময় বোঝা যেত না। এখন ছোট ফরম করে দিয়েছি, সেটা পূরণ করলে সাথে সাথে এসিল্যান্ডের কাছে চলে যাবে। জমি মিউট্রেশন করতে গেলে দলিল লাগে। এতদিন বিধি যেটা ছিল দুটি দলিল করা হত, যিনি দলিল করতে যান তিনি একটা পান, আরেকটা থাকে সাব- রেজিস্ট্রারের কাছে। মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত দিয়েছে এখন থেকে তিনটি দলিল করতে হবে। একটা সাব-রেজিস্ট্রার, একটা এনকামমেন্ট এবং আরেকটি এলটি নোটিশের পাশাপাশি এসিল্যান্ডের কাছে চলে যাবে। যেহেতু এসিল্যান্ড দলিল ও এলটি নোটিশ অনলাইনে পেয়ে যাচ্ছেন, এই জমি তার কাছ থেকেই ভেরিফিকেশন করে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে সুতরাং এসিল্যান্ডের আর কিছুই লাগবে না, ওই সফটওয়্যার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে সে মিউট্রেশন সম্পন্ন করে ফেলবে। কাউকে ডাকতে হবে, পরবর্তীতে নোটিশ দেবেন বা সেও যদি এসে দরখাস্ত দেয় তবে সর্বোচ্চ আট দিনের মধ্যে এসিল্যান্ড মিউট্রেশন করে দেবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দেশের সব জমির রেজিস্ট্রেশন আর্কাইভ করার জন্য সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দুই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। ১৭টি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমরা দেখেছি এটা খুব ভালোভাবে কাজ করছে। নামজারির জন্য আলাদা কোনো আবেদন করতে হবে না। আট দিনের মধ্যে নামজারি হয়ে যাবে। এসবের ম্যানুয়াল কপিও দেয়া হবে। আমরা দেখছি জমির রেজিস্ট্রেশন করলেও অনেকে নামজারি করেন না। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে পুরো দেশে এই কার্যক্রম শুরু করা হবে।
তিনি বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে হাতে লেখা যেসব তথ্য সেগুলো খ্বু পরিষ্কার ছিল না। সাব-রেজিস্ট্রার নিজেও রেকর্ড অব রাইটস নিয়ে ক্লিয়ার থাকতেন না। আপনি যে কোনো দলিল নিয়ে রেজিস্ট্রশন করতে চাইলেই করে দিতেন কিন্তু এখন আর সে পারবে না। রেকর্ডস অব রাইটস দেখে তারপর তফসিলটা সফটওয়্যারের ইনপুট দিতে হবে। আগে ভেরিফিকেশনের কোনো সিস্টেম না থাকায় যে কোনো জমি রেজিস্ট্রেশন করে দিতে পারত। অনেকে রেজিস্ট্রেশন করে নামজারি করলেও রেকর্ড সংশোধন করেন না। এখন এসিল্যান্ডের দায়িত্ব থাকবে মাসিক প্রতিবেদন দেবে এসিডি রেভিনিউ এবং ইউএনওর কাছে কতটি নামজারি হল এবং কতটি রেকর্ড সংশোধন হল। রেকর্ড সংশোধন করাটা এসিল্যান্ডের দায়িত্ব হলেও অনেক ক্ষেত্রে তারা করতেন না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন লালকালি দিয়ে এসিল্যান্ডকে রেকর্ড সংশোধন করতে হবে। আগে দলিল পেত না বলে অনেক সময় নামজারি না করেও বেঁচে যেতেন এখন আর সেটা হবে না। এতদিন নামজারি করলেও ৫০-৬০ শতাংশই রেকর্ড সংশোধন করতেন না। উত্তরাধীকার সূত্রে জমির কে কতটুকু অংশ পাবে সেটাও এই সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া হয়েছে। হিজরা জনগোষ্ঠির মানুষরা যাতে বাবা-মায়ের জমি থেকে বঞ্চিত না নয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দিষ্ট সময় পর পর তহসিলদারদের রিপোর্ট দিতে হবে তার এলাকায় কোন লোক মারা গেছেন। পয়সা ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কোনো কাজ হয় না বলে প্রচলিত আছে, এমন তথ্য জানানোর পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন সেই স্কোপ নেই। রেকর্ড কারেকশন পর্যন্ত কোনো স্কোপ নেই। করাপশনটা কমিয়ে নিয়ে আসব। বেচাকেনা যেখানে যে মাত্র সাব-রেজিস্ট্রার এসিল্যান্ডের কাছে এন্ট্রি দিয়ে দেবেন এই জমির রেকর্ড অব রাইটস-এর স্ট্যাটাস কি, তখন তো আর দেরি করতে পারবেন না। কারণ জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে রিপোর্ট দেবে। এসিল্যান্ডও দেরি করতে পারবেন না। ধরা পড়ে যাবেন। ৭৫ শতাংশ দুর্নীতি স্টেটওয়েতে কমে যাবে।
তিনি বলেন, আমাদের হিসাব হল, জমিকে কেন্দ্র করেই ৭৫ শতাংশ মামলা হয়। এটা হয়ে গেলে ৫০ শতাংশ মামলা কমে যাবে। মানুষের জীবনযাত্রাও অনেকটা কমফোর্ট হয়ে যাবে, জমিজমা নিয়ে যে একটা টেনশন বা আনক্লিয়ার একটা সিনারিও এটা থেকে তারা মুক্তি পাবেন। তহসিলদারের কোনো সম্পৃকতা আর থাকছে না।



 

Show all comments
  • রিপন ১০ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৫৪ এএম says : 0
    খুব ভালো নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
    Total Reply(0) Reply
  • Md Islam ১০ নভেম্বর, ২০২০, ২:২৬ এএম says : 0
    Excellent news
    Total Reply(0) Reply
  • Rafiqul Islam Robin ১০ নভেম্বর, ২০২০, ৮:১২ এএম says : 0
    It's a great decision.
    Total Reply(0) Reply
  • Bilash Maitra ১০ নভেম্বর, ২০২০, ৮:২৭ এএম says : 0
    Good initiative is taken by the government
    Total Reply(0) Reply
  • Ferdus Jahan ১০ নভেম্বর, ২০২০, ৮:২৮ এএম says : 0
    এটা বাস্তবতা পাবে। না স্বপ্ন থেকে যাবে, ভুমি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাথা নষ্ট হ'য়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Pankaj Sikder ১০ নভেম্বর, ২০২০, ৮:২৮ এএম says : 0
    We want quick implementation
    Total Reply(0) Reply
  • সাদ্দাম ১০ নভেম্বর, ২০২০, ৮:২৯ এএম says : 0
    গরিব অসহায় মানুষের জীবনে নিরাপত্তা ফিরে আসবে। গ্ৰামের টাউট বাটপারদের উৎপাত , জমি সংক্রান্ত বিরোধ হানাহানি মারামারি মামলা দুরিভুত হবে।সস্তি শান্তি ফিরে আসবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Yousuf Rari ১০ নভেম্বর, ২০২০, ৮:৩০ এএম says : 0
    সরকারের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। অনেক অনেক ধন্যবাদ।এরফলে একদল চোর থেকে অন্তত জনগন রক্ষা পেল। জমি দলিল হওয়ার পরে নামজারী করার দায়িত্ত সরকারের কিন্তু তৌশিলদার তা করতেছেন অনেক টাকার বিনিময়ে আবার দালাল সেট করা থাকে ওকে ছাড়া করা যাবেনা
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Nurul Islam ১০ নভেম্বর, ২০২০, ৮:৩১ এএম says : 0
    সরকারের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। অনেক অনেক ধন্যবাদ।এরফলে একদল চোর থেকে অন্তত জনগন রক্ষা পেল।
    Total Reply(0) Reply
  • Shafayat Ullah ১০ নভেম্বর, ২০২০, ৮:৩১ এএম says : 0
    ধন্যবাদ। হয়রানি থেকে বাচার একটি উপায় হলো।
    Total Reply(0) Reply
  • Timir Dey ১০ নভেম্বর, ২০২০, ৮:৩১ এএম says : 0
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের যুগান্তকারী একটা সিন্ধান্ত। ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • মো মনছুর আলম ১০ নভেম্বর, ২০২০, ১:৩৪ পিএম says : 0
    সরকারের এই সিদান্ত, জনসাধারনের জন্য, অনেক লাভবান হয়েচে, হয়রানি ও ঘুস থেকে রেহাই পেয়েচে,এটা হল জনগনের সরকার মাননীয় প্রধানমনএি,শেখ হাসিনা,
    Total Reply(0) Reply
  • জুলহাস ১১ নভেম্বর, ২০২০, ১১:৪৯ পিএম says : 0
    সরকারের এই সিদান্ত, জনসাধারনের জন্য, অনেক লাভবান হয়েচে, হয়রানি ও ঘুস থেকে রেহাই পেয়েচে,এটা হল জনগনের সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
    Total Reply(0) Reply
  • Md.monirul Islam ১৬ নভেম্বর, ২০২০, ৭:৩১ পিএম says : 0
    নামজারি করতে গেলে নাইবের কাছ থেকে একটি সিগনেচার নীতি 3 মাস লাগে মুখে বলা হয় নাম দেন করতে এগারোশো 75 টাকা লাগে কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় নামজারি করতে গেলে এর তিন চার গুন টাকার অধিক লাগে তাহলে এই ঘুষখোর নায়েব এবং ভূমি কর্মকর্তাদের কি হবে তাদের বেতন যাইহোক দেখা যায় কারো সতলা 9 তলা বাড়ি গাড়ি বিলাসবহুল জীবন যাত্রা তাদের এমন অলসতা এসে গেছে লাথি মারলো নড়ে না তাদের দিয়ে কিভাবে এই বড় প্রজেক্টটা চালানো যাবে আমার ব্যক্তিগত মতামত একজন সুস্থ মানুষ কখনোই ভূমি অফিসে যাবে না কারণ খাজনা যদি হয় তিন টাকা গুনতে হয় 9 টাকা এটাই আমাদের বাংলাদেশ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ