Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

জিয়া-এরশাদ-খালেদা সীমান্তচুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি

বিজিবির এয়ার উইং উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্থলসীমানা চুক্তি করেছেন। আইনও তিনি পাস করে যান। কিন্তু ভারত তখনো করেনি। পঁচাত্তরের পর জিয়াউর রহমান, এরশাদ বা খালেদা জিয়া যারাই ক্ষমতায় এসেছেন তারা কেউই এই সীমান্তচুক্তি বাস্তবায়ন অথবা সীমান্ত নির্দিষ্ট করতে কখনো উদ্যাগ গ্রহণ করেননি।

গতকাল বিজিবি এয়ার উইংয়ের জন্য ক্রয়কৃত দুটি এমআই-৭১ই হেলিকপ্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিজিবি এয়ার উইং-এর দুটি অত্যাধুনিক এমআই ১৭১-ই হেলিকপ্টার ‘বীর শ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ’ এবং ‘বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফ’-এর উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, আমি প্রথমবার যখন ক্ষমতায় আসি তখন থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করি এবং ভারতের পার্লামেন্টে সব দল মিলে তা পাস করে দিয়েছে। এখন আমাদের সীমান্ত সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ করা হয়েছে। সীমান্তগুলো সুরক্ষার জন্য এখন আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। এর মাধ্যমে রাশিয়ার তৈরি দুটি অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার দিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এয়ার উইংয়ের যাত্রা শুরু হয়েছে।

হেলিকপ্টার দুটি উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সীমান্ত সুরক্ষায় নিয়োজিত এই বাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে ঘোষণা করেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিজিবি এখন অন্যান্য বাহিনীর মতো ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে উন্নীত হয়েছে। আজকে থেকে বিজিবি ত্রিমাত্রিক বাহিনী। বিজিবিতে হেলিকপ্টার সংযোজনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজিবি এয়ার উইংয়ের এই যাত্রা বিজিবির সার্বিক কর্মকান্ডকে আরও গতিশীল করবে বলে আমার বিশ্বাস। পিলখানায় ২০০৯ সালের অনাকাঙ্খিত ঘটনা, দেশ ও বাহিনীর ক্ষতি করেছে। এটি যেন আর না ঘটে, সেজন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে ৫৩৯ কিলোমিটার এলাকায় নতুন ৬৫টি বিওপি নির্মাণের মাধ্যমে ৪০১ দশমিক ৫ কিলোমিটারে সীমান্তে ইতোমধ্যে নজরদারিতে আনা হয়েছে। অবশিষ্ট ১৩৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত এলাকাতেও আরও বিওপি স্থাপন করা হবে।

বিজিবির জনবল বাড়াতে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাহিনীতে আরও ১৫ হাজার জনবল বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়েছে। যা তিনটি ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম ধাপে চার হাজার ২৮২ জন জনবলের সমন্বয়ে একটি রিজিয়ন সদর দফতর, একটি সেক্টর সদর দফতর এবং চারটি ব্যাটালিয়ন, একটি কে-নাইন ইউনিট, একটি রিজিয়ন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো, একটি স্টেশন সদর দফতর, একটি গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সৃজনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা ২০২২ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে। দ্বিতীয় ধাপে মোট ৫ হাজার ৭৮২ জন জনবলের সমন্বয়ে একটি সেক্টর, ৫টি ব্যাটালিয়ন, একটি রিজার্ভ ব্যাটালিয়ন, একটি কে-নাইন ইউনিট অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার এবং ৫টি বর্ডার গার্ড হাসপাতালের জনবল বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব বিবেচনাধীন রয়েছে। বিজিবির প্রশিক্ষণের জন্য সাতকানিয়ায় বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় আরেকটি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করার পরিকল্পনার কথা জানান শেখ হাসিনা

সীমান্ত এলাকা নিয়ে সরকারের বিশেষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সীমান্ত এলাকা নির্বাচন করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৩২৮ কিলোমিটার সীমান্তে স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্যাল রেসপন্স সিস্টেম স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরাসরি নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল মোবাইল রেডিও (ডিএমআর) নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে বিজিবি সদর দফতর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত বিওপি এবং বিওপি পরিচালিত টহলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে বিজিবির অপারেশনাল সক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। যেকোনও সময় যেকোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে। চোরাচালান প্রতিরোধে টহল কার্যক্রম গতিশীল করতে ইতোমধ্যে ১২০টি অল ট্যারেইন ভেহিক্যাল ক্রয় এবং সীমান্তের সার্বিক সুরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় বিজিবির সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ১২টি আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) এবং ১০টি রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল ক্রয় করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

মাদক কারবারিদের ধরতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবির বহরে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ১২টি হাইস্পিড বোট এবং দুইটি পন্টুন সংযুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া বিজিবির জন্য অত্যাধুনিক দুইটি ফাস্ট ক্রাফট, সমুদ্রগামী সাতটি অত্যাধুনিক হাইস্পিড বোট, দুইটি মেরিনা এবং দুইটি ট্রেইলার ক্রয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সুন্দরবন সংলগ্ন নৌসীমায় কার্যকরী টহল পরিচালনার পাশাপাশি মিয়ানমার সীমান্তে এসব উন্নত নৌযান মোতায়েন করে নাফনদী ও সাগর উপক‚লে ইয়াবা পাচার ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি অধিক কার্যকরী ভ‚মিকা রাখতে সক্ষম হবে। সীমান্তের সার্বিক সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখার জন্য বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত অতি পুরাতন ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্রের পরিবর্তে আধুনিক, যুগোপযোগী ও কার্যকরী ট্যাংক বিধ্বংসী মিসাইল ক্রয় করা হচ্ছে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে ৫৩৯ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় নতুন ৬২টি বিওপি নির্মাণের মাধ্যমে ৪০১ দশমিক ৫ কিলোমিটার সীমান্ত ইতোমধ্যে নজরদারিতে আনা হয়েছে। অবশিষ্ট ১৩৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় আরও বিওপি স্থাপন করা হবে বলে জানান সরকার প্রধান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার বিজিবিকে বিশ্বমানের আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়তে চায়। এজন্য ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১’ এর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের মে মাসে বিজিবি এয়ার উইংয়ের কার্যক্রম শুরু হয় এবং ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে বিজিবি রুশ প্রজাতন্ত্র থেকে দুটি অত্যাধুনিক এমআই-১৭১-ই হেলিকপ্টার কিনে। আজ থেকে বিজিবি দেশ মাতৃকার সীমান্ত এবং সার্বভৌম রক্ষার পাশাপাশি অর্পিত দায়িত্ব পালনে নৌ, স্থল ও আকাশপথে বিচরণ করবে। দুর্গম পার্বত্য এলাকার সীমান্তে নিয়োজিত বিজিবি সদস্যদের সবধরনের অপারেশনাল কার্যক্রম, রসদ সরবরাহ ও প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালনায় এই হেলিকপ্টার দুটি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। পর্যায়ক্রমে আরও সরঞ্জামাদি কেনা হবে।

অনুষ্ঠানে পিলখানায় বিজিবি সদর দফতর প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম।



 

Show all comments
  • Aslam Hossain ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৩৯ এএম says : 0
    সময় উপযোগী দেশকে নিরাপত্তার চাদরে আচ্ছাদন বাংলাদেশে নেত্রী আপনি প্রথম বাঙালী জাতিকে জাতির জনক বঙ্গ বন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ আজ বাস্তবতা ও উন্নয়নের রোল মডেল।আপা, আপনার সুন্থ্যতার সহিত সুদীর্ঘ নেক হায়াৎ কামনা করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Afzal Hossain ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪০ এএম says : 0
    বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশ রত্ন শেখ হাসিনার অবদান জয় বাংলা
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ali ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪০ এএম says : 0
    বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে অনেক বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন , অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তাকে দিয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণ করা বেন ,এই বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়েছে মানুষের মনে যে এই বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad A K Sujon ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪১ এএম says : 0
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার সুস্বাস্থ্যে ও দীর্ঘ আইয়ু কামনা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • MdAziz Hooque ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪১ এএম says : 0
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সুযগ্য কন্যা শেখ হাসিনা আজকের এই ডিজিটাল বাংলাদেশ উপহার দেওয়া জন্য ধন্যবাদ জানাই। যুব লীগ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইউনিট
    Total Reply(0) Reply
  • Imam Farazi ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪২ এএম says : 0
    উন্নত বাংলাদেশের রুপকার, সর্ব কালের সর্ব শ্রেষ্ট বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা দেশ রত্ন শেখ হাসিনা, শুভ কামনা অবিরাম।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Fookrul Islam ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪২ এএম says : 0
    জননেত্রী আপনিই আমাদের প্রেরণা। দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ায় হোক আমাদের অঙ্গীকার। জানি খুব কঠিন কাজ কিন্তু আপনার দারাই সম্ভব বলে মনে করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Rejaul Karim ৯ নভেম্বর, ২০২০, ৭:১৪ এএম says : 0
    দুনিয়াতে সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে নিজেকে সংশোধন করা আর সবচেয়ে সহজ কাজ হচ্ছে অন্যের সমালোচনা করা।।।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ