Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনার টিকা ক্রয়ে চুক্তি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে

তিন কোটি ডোজ পাবে দেড় কোটি মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তৈরি তিন কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা পেতে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের উপস্থিতিতে গতকাল সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে।

সমঝোতা অনুযায়ী, সিরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালসকে অক্সফোর্ডের তৈরি সার্স-কভ-২ এজেডডি ১২২২ (অক্সফোর্ড/এস্ট্রাজেনিকা ভ্যাকসিন) সরবরাহ করবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ভ্যাকসিন তৈরি হলে প্রথম দফাতেই তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেবে সিরাম ইনস্টিটিউট। এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশে নিয়ে আসবে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস। যখনই এটা তৈরি হবে তখনই বাংলাদেশকে প্রথম সুবিধামতো সময়ে দেবে। বেক্সিমকো এই ভ্যাকসিন আনার ব্যবস্থা নেবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ডিপোতে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি বলেন, আমরা দেড় কোটি মানুষকে এই ভ্যাকসিন দিতে পারবো। কারণ, একজন মানুষের দুই ডোজ করে ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হবে। একটি ডোজের ২৮ দিন পর আরেকটি ডোজ দিতে হবে। প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে ডোজ দিতে পারবে বলে তারা জানিয়েছেন। এখানে স্টোরেজের ব্যবস্থা উনারাও করবে, আমরাও করবো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন নিতে হবে বলে সমঝোতায় বলা আছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার এই টিকা কিনবে। সøাপাইয়ারের কাছ থেকে আনার খরচসহ প্রতি ডোজের দাম পড়বে ৫ ডলার।

কারা এই টিকা পাবে এমন প্রশ্নে জাহিদ মালেক বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী এসব টিকা বিতরণ করা হবে। স্বাস্থ্যকর্মী, বয়স্কসহ যারা ফ্রন্টলাইনে কাজ করেন তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সবাইকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সাংবাদিকেরাও ফ্রন্টলাইনার হিসেবে অগ্রাধীকার পাবেন।

জাহিদ মালেক বলেন, বেক্সিমকো সিরাম ইনস্টিউটের অথরাইজ এজেন্ট। তারা এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। ওখান থেকে আনার দায়-দায়িত্ব বেক্সিমকোর। তারা আমাদের কাছে পৌঁছায় দেবে। যারা প্রাইভেটলি দিতে চায় তাদেরও বেক্সিমকো দেবে, তবে দাম সম্ভবত আলাদা হবে। আগামী জানুয়ারিতে এই টিকা আসতে পারে বলে ধারণা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমরা মনে করি এই ভ্যাকসিনটি নিরাপদ হবে। বিভিন্ন দেশে ট্রায়াল হয়েছে, কার্যকরি প্রমাণিত হয়েছে। এটার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। আমাদের তাড়াতাড়ি পাওয়াটাও একটা বিরাট বিষয়, এটা আমরা পাবো। জনসংখ্যার দিকে আমরা ছয় নম্বরে আছি কিন্তু, করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর হারের দিক থেকে আমরা ৩১ নম্বরে, অনেক পেছনে আছি। আমাদের সুস্থতার হারও ভালো।

ভ্যাকসিন কখন কার্যকর হবে তা সময় দেবে বলে। আপনারা নিজেকে নিরাপদে রাখতে চাইলে মাস্ক ব্যবহার, নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।

সমঝোতা স্মারকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল এবং সিরাম ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত পরিচালক সন্দীপ মলায় এবং বেক্সিমকোর চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ও বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আলী নুর ও ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।

নাজমুল হাসান পাপন বলেন, আমরা সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের যোগসূত্র করে দিয়েছি। যখনই বাজারে আসবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে তখনই নিয়ে আসা হবে। সবচেয়ে কম দামে তারা আমাদের ভ্যাকসিন দেবে। তিনি বলেন, করোনা মহামারির শুরু থেকেই আমরা কাজ করছি, আমাদের কমিটমেন্ট ছিল সরকারের পাশে দাঁড়ানোর।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, গত মার্চ মাস থেকে নয় মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণা ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর গাইডলাইনে কাজ করেছি এবং তার সুফল পাচ্ছি। সারা দুনিয়ায় যেভাবে সংক্রমণ হচ্ছে বাংলাদেশে মাত্র ছয় হাজার মৃত্যুবরণ করেছে, যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশে ঊর্ধমুখী।

বিশ্বের ভ্যাকসিন নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব বলেন, কোভিডের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য ১৬৬টি কোম্পানি কাজ করছে। এরমধ্যে ২৮টি কোম্পানি হিউম্যান ট্রায়াল স্টেজে চলে গেছে। মাত্র নয়টি কোম্পানি থার্ড ট্রায়াল করতে ক্যাপাবিলিটি ডেভলপ করেছে। ভ্যাকসিন গবেষণা এবং উৎপাদনকারী ছয়টি কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশ শুরু থেকে যেগাযোগ করছে। এরমধ্যে সবচেয়ে আশার আলো নিয়ে এসেছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন মানবদেহে সাফল্যজনক প্রয়োগ করানোতে আমরা আশাবাদী হয়ে উঠেছি।

তিনি বলেন, সিরাম ইনস্টিটিউট ভারতের সবচেয়ে বড় সিরাম (ভ্যাকসিন) উৎপাদনকারী কোম্পানি, তাদের সঙ্গে অক্সফোর্ডের যে চুক্তি হয়েছে এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো চুক্তি করেছে। আমরা দ্রæত সময়ে ভ্যাকসিন পাবো বলে আভাস পাচ্ছি এবং কাছাকাছি চলে যাচ্ছি। এই চুক্তির ফলে সারা দেশের ১৮ কোটি মানুষ আশার আলো দেখবে এবং আশ্বস্ত হবে যে বেঁচে থাকার একটা অবলম্বন।

ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, সিরাম ইনস্টিটিউট বিশ্বে পরিচিত ও বৃহৎ একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের বেক্সিমকো সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে তাতে খুব সহজেই ভ্যাকসিন পাবে।

 

 

 



 

Show all comments
  • Mahmud Sheikh ৬ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১৫ এএম says : 0
    বাহ্ পাচাটা আর কমাতে পারলোনা
    Total Reply(0) Reply
  • Abdullah AL Mamun Amran ৬ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১৫ এএম says : 0
    আর দেশ খুঁজে পাইনি। এরা নিজেরাই তো টিকা খুঁজছে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ সিরাজ ৬ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১৫ এএম says : 0
    মনে হয় সব গরুর মুত্র দিয়ে বানায়ছে বেক্সিন
    Total Reply(0) Reply
  • Rofi Ahmed ৬ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১৫ এএম says : 0
    যাহা ভাবিয়া ছিলাম তাহাই হইতেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Nazmul Hawladar ৬ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১৬ এএম says : 0
    গরুর মুত দিয়া টিকা বানাইছে, সে্ই টিকা এখন আমাদের নিতে হবে। !!!
    Total Reply(0) Reply
  • Aminur Chowdhry ৬ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১৬ এএম says : 0
    এতদিন শুনলাম ভারত ব্যতিত পৃথিবীর অন্য দেশ থেকে ভেকসিন আনা হবে, যা সবই ছিল আই ওয়াশ। ভারত থেকে ভেকসিন আনা মানেই আরেক ধাপ টপ টু বটম মহাসাগর চুরি।ভারতের ভেকসিন বাংলাদেশ এর ৯৫ শতাংশ মানুষ বয়কট করিবে ইনশাআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • MD Hadayatul Islam ৬ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১৭ এএম says : 0
    ইন্ডিয়াই ভাত পায়না আবার বাংলাদেশের দিব পোলাও।
    Total Reply(0) Reply
  • Motiur Rahman ৬ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১৭ এএম says : 0
    গোমূত্র কি বাংলাদেশে নেই?
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Jahid Hasan Kallal ৬ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১৭ এএম says : 0
    কি কয়!!! ভারতের করোনা পরিস্থিতি কারো অজানা আছে কি?! মনে হয় ভারত ট্রায়াল দিচ্ছে আর বাংলাদেশ কিনে নিচ্ছে!!! বিষয় টি বুঝতে হবে.......
    Total Reply(0) Reply
  • Jubaid Khan ৬ নভেম্বর, ২০২০, ৬:২৭ এএম says : 0
    ভারতীয় নিম্নমানের ভ্যাকসিনে এমন কিছু উপাদান থাকবে যা বাংলাদেশী তরুন ও আগামী প্রজন্মকে বিকলাঙ্গ করতে পারে। বিগত সময়েও ভারত এ চেষ্টা চালিয়েছে বহু শিশু মারাও গেছে, পত্রিকায় খুঁজলে সহজে পাবেন। আমার পরিবার ইনশাআল্লাহ এ ভ্যাকসিন কখনো নেবেনা।।।আপনারাও বয়কট করুন,, আমরা ইউরোপীয়ান, আমিরিকান বা রাশিয়ান উন্নতমানের ভ্যাকসিন চাই। বাংলাদেশীদের ধ্বংস চায় এমন কোন দেশ হতে নয়।।।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Alam ৬ নভেম্বর, ২০২০, ৮:১৮ এএম says : 0
    ভারতীয় তাবেদার মন্ত্রীরা তাই করবে। জনগণের মতামত তারা কোন সময় মূল্যায়ন করেনি এবং করবো না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ