Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেহরক্ষীসহ ফের রিমান্ডে ইরফান

হাজী সেলিম পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

নৌবাহিীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধরের পর ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ বেরিয়ে আসছে। এছাড়াও অতীতের সব আলোচিত-সমালোচিত ঘটনা নিয়ে দেশবাসীর সামনে ফের আলোচনায় উঠে আসেন দাপুটে সংসদ সদস্য হাজী সেলিম। শুধু তাই নয়, হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে জমি দখল, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র ঠেকিয়ে ভয় দেখানোর মতো নানান অভিযোগও গণমাধ্যমে উঠে আসছে। এ ঘটনায় ইরফান সেলিম গ্রেফতার হলে হাজী সেলিম কেন গ্রেফতার হবেন না?- এমন প্রশ্নই ঘুরপাক জনমনে।

অন্যদিকে, নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধর ও হত্যাচেষ্টার মামলায় প্রধান আসামি ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদকে ফের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমান এ আদেশ দেন। তিন দিনের রিমান্ড শেষে ধানমন্ডি থানার হত্যাচেষ্টা মামলায় ফের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই মবিনুল হক। এদিন আসামিপক্ষের আইনজীবী শ্রী প্রাণনাথ রিমান্ড বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যার পর রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় হাজী সেলিমের গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২৬ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ওয়াসিফ। মামলায় হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম, প্রোটোকল অফিসার এ বি সিদ্দিক দিপু, মোহাম্মদ জাহিদ ও মিজানুর রহমানের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও তিন জনকে আসামি করা হয়।

মামলা দায়ের পর রাজধানীর চকবাজারের ২৬, দেবীদাস ঘাট লেনে হাজী সেলিমের চাঁন সরদার দাদা বাড়ীতে অভিযান চালান র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত। অভিযান শেষে অবৈধ ওয়াকিটকি ও মাদক রাখার দায়ে ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী মো. জাহিদকে এক বছর করে কারাদন্ডাদেশ দেন ভ্রাম্যমান আদালত। এরপর ওই দিন রাতেই দুজনকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২৯ অক্টোবর ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদকে তিন দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূরের আদালত। এছাড়া ওই মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছেও হস্তান্তর করা হয়। প্রথমে ধানমন্ডি থানা পুলিশ ইরফান ও জাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও পরবর্তীতে ডিবি পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তিন দিনের রিমান্ড শেষে ধানমন্ডি থানার হত্যাচেষ্টা মামলায় ফের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

এদিকে, হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমকে গ্রেফতারের পর আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটাই আলোচনা-ইরফান সেলিম যে কারণে গ্রেফতার হয়েছে, সে অপরাধের দায় এড়াতে পারেন না তার বাবা সংসদ সদস্য হাজী সেলিমও। অর্থাৎ ইরফান সেলিমকে অপরাধ জগতের প্রশ্রয়দাতা হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে হাজী সেলিমকে।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গণমাধ্যমে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসলেও প্রকৃতপক্ষে এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট থানায় কোনো মামলা কিংবা লিখিত অভিযোগ নেই। আবার ইরফান সেলিম যে কারণে গ্রেফতার হয়েছে সে ঘটনায় হাজি সেলিম জড়িত থাকার মতো এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণও মেলেনি। তবে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে এবং তা তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের।
হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা রয়েছে কি-না?- জানতে চাইলে চকবাজার থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার বলেন, তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা লিখিত অভিযোগ নেই। তবে ম্যাডামের (হাজী সেলিমের স্ত্রী) বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত একটা অভিযোগ রয়েছে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংসদ সদস্য হিসেবে হাজী সেলিমের ভবনে অপরাধের যে সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে সে দায় তার ওপরও বর্তায়। আর এজন্য ফৌজদারি অপরাধে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারে। এ জন্য আইনেরর কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাজী সেলিম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ