পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পাঁচ দিনের দুর্গোৎসব প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। মর্ত্যলোক ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন মা। ভক্তরা অশ্রুসজল চোখে বিসর্জন দিয়েছেন দুর্গা প্রতিমাকে। দশমীর ভক্তরা মত্ত হয়ে থাকেন সিঁদুর খেলায়। তবে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার সিঁদুর খেলা হয়নি। মন্ডপে মন্ডপে এখন বিষাদের ছাপ।
আজ সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দশমীবিহিত পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন দেয়া হয়। এরপর থেকে সারাদেশে স্থানীয় আয়োজন ও সুবিধামতো সময়ে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে এবার বিজয়া শোভাযাত্রা হয়নি। সব মন্ডপ ও মন্দিরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিমা বিসর্জনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। বিসর্জন শেষে ভক্তরা শান্তিজল গ্রহণ করেন। ভক্তরা বলেন, গতকাল মায়ের বিদায় হয়েছে। মায়ের বিসর্জনের মধ্যদিয়ে করোনা মহামারি দূর হয়ে আমরা যেন ফের নতুন করে আগের ন্যায় সুখে বসবাস করতে পারি এমন কামনা করছি।
পুরাণ বলে, ‘দুর্গম’ নামে এক অসুর ছিল। তার কাজ ছিল জীবজগতের জন্য দুর্গতি সৃষ্টি করা। যে দেবী সেই দুর্গম অসুরকে বধ করে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত দেবতাদের হারানো রাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং জীবজগৎকে চিরকাল দুর্গতির হাত থেকে রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা। ভারতবর্ষের বাঙালি হিন্দু মানসে দুর্গা প্রতিবাদের দেবী, প্রতিরোধের দেবী। একই সঙ্গে তিনি ‘মাতৃরূপেণ’ ও ‘শক্তিরূপেণ’। এ উৎসব শরৎকালে উদ্যাপিত হয় বলে এটিকে শারদীয় দুর্গোৎসবও বলা হয়।
পুরাণ মতে, এ তিথিতে দেবী দুর্গার আশীর্বাদ নিয়ে লঙ্কার রাজা রাবণকে বধ করেছিলেন দশরথ পুত্র শ্রীরামচন্দ্র। এছাড়া ১০৮টি নীলপদ্ম দিয়ে দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন রামচন্দ্র। তাই এ মহানবমীতে ষোড়শ উপাচারের সঙ্গে ১০৮টি নীলপদ্মে পূজিত হয়েছেন দেবী দুর্গা। নবমী সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হয়েছে সন্ধিপূজা। মহিষাসুর বধের সময় দেবী দুর্গা প্রচন্ড ক্রোধে কৃষ্ণবর্ণ রূপ ধারণ করেছিলেন। তাই পূজার এ আচারের সময় দেবীকে চামুন্ডা রূপে পূজা করা হয়েছে। শাস্ত্রে আছে, নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলে সম্পদলাভ হয়। শাস্ত্র অনুযায়ী, শাপলা, শালুক ও বলিদানের মাধ্যমে রোববার দশভুজা দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নীল অপরাজিতা ফুল নবমী পূজার বিশেষ অনুষঙ্গ। নবমী পূজায় যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহুতি দেয়া হয়। ১০৮টি বেলপাতা, আম কাঠ ও ঘি দিয়ে এ যজ্ঞ করা হয়। পূজা শেষে যথারীতি অঞ্জলি।
সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) এসেছেন দোলায় (পালকি) চড়ে। যার ফল হচ্ছে মড়ক। আর দেবী সপরিবারে স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন গজে (হাতি) চড়ে। যার ফল হচ্ছে শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা। বিজয়া দশমী উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। জাতীয় দৈনিকগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করছে। নবমীর দিনে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী রোববার ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেন এবং পুণার্থীদের সঙ্গে পূজার নানা আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেন। এ সময় পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)।
এদিকে জীবানুমুক্তভাবে নিশ্চিন্তে পূজা করতে ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, বনানী মাঠ পূজামন্ডপ, জয়কালী মন্দিরসহ অন্যান্য পূজামন্ডপে হ্যান্ড স্যানিটাইজিং স্ট্যান্ড স্থাপন করা হয়েছে। মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি কিশোর রঞ্জন মন্ডল বলেন, ‘সিঁদুর খেলা এবার হচ্ছে না। আমরা তো সব ধরনের আনন্দ উৎসব আগেই বর্জন করেছি। এবার সিঁদুর বরণ হবে। নারীরা মায়ের পায়ে সিঁদুর লাগিয়ে বাকিটা নিজেদের কপালে স্পর্শ করবেন, শুধু এইটুকু হবে। সিঁদুর খেলা হবে না।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী এবার দুর্গা পুজায় শোভাযাত্রার মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জন হয়নি। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা সারাদেশে পূজা উদযাপন কমিটির কাছে পাঠিয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, বিসর্জনের জন্য একটি ট্রাকে একসঙ্গে অনেক মানুষ গেলেও এবার একটি ট্রাকে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য শুধুমাত্র ১০ জন গিয়েছিল। মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির পক্ষ থেকে মনিটরিং সেল করা হয়েছে, যারা সার্বক্ষণিক নজরদারি রেখেছেন। বিসর্জনের সবচেয়ে বড় জায়গা হচ্ছে সদরঘাটের ওয়াইজ ঘাট এলাকা। এছাড়া বালু, তুরাগ নদ, মোহাম্মদপুরে বসিলা ব্রিজের কাছে ও ফরাশগঞ্জসহ সারাদেশে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।