Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিরপেক্ষ বাস্তবমুখী সাংবাদিকতা চাই

ডিআরইউ’র রজতজয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

সাংবাদিকদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সাংবাদিকতা যেন নীতিহীন না হয়, নিরপেক্ষ বাস্তবমুখী সাংবাদিকতা চাই।

গতকাল রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির রজতজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। সাপ্তাহিক মিল্লাত, দৈনিক ইত্তেহাদ ও দৈনিক ইত্তেফাকের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জড়িত থাকার কথা এবং তার বাংলার বাণী প্রতিষ্ঠা করার কথা তুলে ধরে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার কন্যা হিসেবে নিজেকে আমি সাংবাদিক পরিবারের একজন বলেই মনে করি। সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা নিশ্চয় দায়িত্বশীলতা নিয়ে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে কাজ করবেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রতিবেদন যে সরকারের কাজেও সহায়ক হয়, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিভিন্ন পত্রিকায় অনেক সময় অনেক ঘটনা আসে। সাথে সাথে কিন্তু আমরা সেটা সেই রিপোর্ট দেখে কিন্তু অনেক মানুষকে, অনেক অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই, আবার অনেক অন্যায় ঘটনা ঘটলে তার প্রতিকারও করতে পারি, অনেক দোষীকেও আমরা শাস্তি দিতে পারি এবং দিয়ে থাকি। কাজেই সেই দিক থেকে আপনাদের রিপোর্টগুলো হ্যাঁ অনেক ঝুঁকি নিয়ে আপনারা অনেক সময় রিপোর্ট করেন। সেইজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি এইটুকু অনুরোধ করব যে, আপনারা যেমন ধন্যবাদযোগ্য কাজও করেন, কিন্তু এমন রিপোর্ট করবেন না যেটা মানুষের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে বা মানুষ বিপথে যায়। সেদিকেও আপনাদের বিশেষ করে দৃষ্টি দেবার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি। নীতিহীন সাংবাদিকতা যেন না হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন, নীতিহীন রাজনীতি দেশ ও জাতিকে কিছু দিতে পারে না। তেমনি নীতিহীন সাংবাদিকতা দেশের কোনো কল্যাণ করতে পারে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। গণতন্ত্রের একটা নীতিমালা আছে। সাংবাদিকতার একটা নীতিমালা আছে। এই দুটো মনে রাখলে আমরা অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারব। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সেই নীতিমালা মেনে চলতে সংবাদকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সরকার সাংবাদিকদের কোনো ধরনের বাধা দেয় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা সাংবাদিকদের সেই সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তিনি (বঙ্গবন্ধু) যখন কলকাতায় পড়াশোনা করতেন, তখন যেই পত্রিকা একবার একটা পত্রিকা বের করা হয়েছিল সাপ্তাহিক মিল্লাত, তার সঙ্গে উনি জড়িত ছিলেন। সেটা বেশি দিন চলেনি। এরপর ইত্তেহাদ নামে একটি পত্রিকা বের হয়। সেই পত্রিকার সাথে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। এরপরে পাকিস্তান হওয়ার পর যখন সবাই বাংলাদেশে চলে আসে, তখন ইত্তেফাক বের করা হয়। সেখানেও কিন্তু বঙ্গবন্ধু ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। আবার আওয়ামী লীগের জন্য আরেকটি পত্রিকা তিনি বের করেছিলেন নতুন দিন নামে। তার পরবর্তীতে তিনি সাপ্তাহিক বাংলার বাণী বের করেন। ১৯৫৮ সালে মার্শাল ল’ এর পর তিনি যখন গ্রেপ্তার হন, এরপর উনি যখন মুক্তি পান, সেই ১৯৬১ সালের দিকে, তখন থেকেই কিন্তু এই সাপ্তাহিক বাংলার বাণী বের করেন। শেখ হাসিনা বলেন, সেইদিক থেকে আমি অন্তত দাবি করতে পারি, আমিও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সন্তান হিসেবে সাংবাদিক পরিবারেরই কিন্তু একজন সদস্য। কাজেই সেভাবে আমি আপনাদেরকে দেখি। সংবাদপত্রকে সমাজের দর্পণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে যেন অন্তত মানুষের চিন্তা চেতনাটা তারা যেন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়। তাদের ভেতর মানবতাবোধটা যেন থাকে, তারা যেন মানুষের কল্যাণে কাজ করে। শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে স্বাধীনতার পর দেশ গঠনে তার নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা অনুষ্ঠানে বলেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতার সুফলটা যেন মানুষ পায় সেই লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা যে সংবিধান দিয়ে গেছেন, সেই সংবিধানের ৪৫ অনুচ্ছেদে চিন্তা, বিবেক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই স্বাধীনতাটা ভোগ করতে গেলে সাথে সাথে অপরের প্রতি যে দায়িত্ববোধ, দেশের প্রতি যে দায়িত্ববোধ, রাষ্ট্রের প্রতি যে দায়িত্ববোধ, সেই দায়িত্ববোধটাও কিন্তু থাকতে হবে। আমার অধিকার কিন্তু অপরের প্রতি দায়িত্ববোধ, আবার অপরের অধিকার আমার দায়িত্ব। এটা কিন্তু সবাইকে মনে রাখতে হবে। সমালোচনা সবাই করুক, তাতে আপত্তি নেই, কারণ সমালোচনার মধ্য দিয়ে অনেক কিছু জানা যায়।

সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের জন্য সরকারে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করে, তখন অনেকগুলো পত্রিকার কার্যালয় তারা পুড়িয়ে দিয়েছিল, বহু সংবাদপত্র অফিসে তারা হামলা চালিয়েছিল, সেসব ঘটনার কথাও তিনি অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন। স্বাধীনতার পর এমন একটা অবস্থা হয় এই সমস্ত সংবাদপত্র চালানো তাদের পক্ষে খুব কঠিন হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই কিন্তু উদ্যোগ নিয়ে সাংবাদিকদের সরকারি চাকরি দিয়েছিলেন, সরকারি বেতন সবাই পেত, সরকারি চাকরির মর্যাদা দিয়েছিলেন। সেটাকে অন্যভাবে দেখা হয়েছে। উনি সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছেন, সেটাকে কুক্ষিগত ঘটনা কিন্তু তা নয়। কারণ তখন কারও বেতন দেওয়ার মত বা সংবাদপত্র চালানোর মত কোনো ক্ষমতা ছিল না, আর্থিক সেই অবস্থাটা ছিল না। সেই দায়িত্বটা তিনিই নিয়েছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্য হল, আমার নিজের দেখা, যারা সরকারি চাকরি পেয়েছিল, তারাই বেশি সমালোচনা করত। সে কারণে আমি ১৯৯৬ সালে যখন সরকারে আসি, তখন দুটি পত্রিকা সরকারি ছিল, আমি সেগুলো যখন বেসরকারি করে দিতে যাই, বা বন্ধ করে দিতে যাই, যে সরকারি কোনো পত্রিকা থাকবে না, তখন এক সময়কার সমালোচকরা, তারা যেহেতু সরকারি বেতন টেতন পেতেন, তারা আন্দোলনও করেন, অনশনও করেন যে কেন সেটা আমরা বন্ধ করব। তো আমি বললাম আমার বাবা নাকি রাষ্ট্রীয়করণ করেছে বলে আপনারা আন্দোলন করেছেন, সমালোচনা এখনো করে যান, তাহলে রাষ্ট্রীয়করণ করে সংবাদপত্র রাখব না।

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তার মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। অন্যদিকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে মূল অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সভাপতি এবং রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান শাহজাহান সরদার। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উদযাপন কমিটির কো- চেয়ারম্যান ও ডিআরইউর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা ফিরোজ, উদযাপন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ডিআরইউর সহ-সভাপতি নজরুল কবীর, ডিআরইউর সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী। রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ডিআরইউ সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী। ডিআরইউর সাংগঠনিক সম্পাদক হাবীবুর রহমান অনুষ্ঠানে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন।



 

Show all comments
  • Rasel Ahammed ২৬ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪২ এএম says : 0
    পৃথিবীতে নিরপেক্ষ বলতে কোন শব্দ নেই, তার কোন অর্থ নেই ,কোন সংজ্ঞা নেই। সবারই একটি পক্ষ থাকে ,কেউ সত্যের পক্ষে কেউ মিথ্যার পক্ষে।
    Total Reply(0) Reply
  • শাখাওয়াত হোসেন ২৬ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৩ এএম says : 0
    ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
    Total Reply(0) Reply
  • Ronju Nuruzzaman ২৬ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৪ এএম says : 0
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, সুস্থ রাখুন, সুসাস্হ ও দীর্ঘ জীবন দান করুন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kaisar ২৬ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৪ এএম says : 0
    ডাক্তার, পুলিশ প্রশাসন, বিমান বাহিনী সহ সকল পেশা জিবিদের উন্নত মানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক
    Total Reply(0) Reply
  • Aktaruz Zaman ২৬ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৪ এএম says : 0
    জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু মাননীয় প্রধান মন্তী পারে দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Khan Mostak ২৬ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করন করলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Kazi Emran ২৬ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
    মানবতার জননী আপনি জানেন একমাত্র মানুষের খবর । ধন্যবাদ নৈত্রী।
    Total Reply(0) Reply
  • সত্য বলবো ২৬ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
    আপনার কথাগুলো অনেক ভালো লাগলো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ