আগামীকাল রোববার রীতি অনুযায়ী মহানবমী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে আজ কুমারী পূজা ছাড়াই মহাঅষ্টমী পূজা হয়েছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ভক্তদের অধিকাংশই বাসায় বসেই অঞ্জলি দিয়েছেন। তবে করোনা পরিস্থিতি ও বৃষ্টির কারণে আগের দু’দিনের তুলনায় অষ্টমী পূজায় ভিড় কিছুটা বেশি ছিল। মহাঅষ্টমীর ঐতিহ্য কুমারী পূজার আয়োজন না থাকায় এবার রাজধানীর রামকৃষ্ণ মন্দির দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা যায়নি। তবে মহাঅষ্টমীর দিন আজ শনিবার সকালে ষোড়শ উপাচারে অনুষ্ঠিত হয় দেবীর পূজা। ১০৮ পদ্ম এবং প্রদীপ দিয়ে দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয়। সকাল ৫টা ১৬ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর মহাষ্টম্যাদি বিহিত পূজা ও মহাঅষ্টমীর ব্রতোবাস শুরু হয়। এরপর সকাল ৬টা ৩৫ মিনিট থেকে ৭টা ২৩ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা। পূজার আনুষ্ঠানিকতার পর ভক্তরা অঞ্জলি দেন। তবে বাসায় থেকে অঞ্জলি দেয়ার জন্য বিভিন্ন টেলিভিশনে ও ফেসবুকে সরাসরি অঞ্জলি প্রদান অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। করোনার সংক্রমণ ও বৃষ্টির কারণে পূজা অর্চনাকারীদের জন্য এবার পরিবেশটা বেশ প্রতিকূল। তারপরও থেমে নেই মা দুর্গার ভক্তরা। অন্যান্যবারের মতো উৎসবে ভাটা দেখা গেলেও বৃষ্টি উপেক্ষা করে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অঞ্জলি দিতে পূজামন্ডেপে গিয়েছিলেন কেউ কেউ। আগের দু’দিনের তুলনায় আজ শনিবার ভিড় কিছুটা বেশি দেখা গেছে রাজধানীর পূজা মন্ডপগুলোতে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মাঝে রাজধানীর কলাবাগান মাঠের মন্ডপে অনেক ভক্ত অঞ্জলি দিয়েছেন। তবে ভক্তদের ভিড় করতে দেখা যায়নি। ভিড় না করতে পূজা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকেও নজরদারি রাখা হয়েছে। ওই মন্ডপে উপস্থিতি এক ভক্ত জানান, সরাসরি মন্ডপে এসে অঞ্জলি দেয়ার মর্যাদা আলাদা। তাই মা দুর্গাকে অঞ্জলি জানাতে মন্ডপে এসেছি। ভক্তদের প্রার্থনায় মা দুর্গা দ্রুত পুরো পৃথিবীকে করোনামুক্ত করবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন। অনেকটা একই চিত্র দেখা গেছে, জয়কালী মন্দির, বরদেশ্বরী কালিমাতা মন্দির, রমনা কালীমন্দির, শ্যামবাজার শিবমন্দির, খামার বাড়ি মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির ও স্বামীবাগ ইসকন মন্দিরসহ নগরীর অন্যান্য মন্ডপগুলোতে। তবে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ভিড় ছিল বেশি। সন্ধ্যার পর এই ভিড় কমতে শুরু করে। আগামীকাল মহানবমীর দিনে ভিড় আরো বাড়বে বলে আয়োজকরা মনে করেন। পঞ্জিকা অনুযায়ী, আগামীকাল রোববার ভোর ৫টা ১৭ মিনিট থেকে সকাল ৭টার মধ্যে দুর্গাদেবীর মহানবমী কল্পারম্ব ও বিহিত পূজা। অনেকের বিশ্বাস মহানবমীর দিন হচ্ছে, দেবী দুর্গাকে প্রাণ ভরে দেখে নেয়ার দিন। এইদিন অগ্নিকে প্রতীক করে সব দেবদেবীকে আহুতি দেয়া হয়। অগ্নি সব দেবতার যজ্ঞভাগ বহন করে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। এই দিনই দুর্গাপূজার অন্তিম দিন। পরদিন কেবল বিজয়া ও বিসর্জনের পর্ব। নবমী নিশিথে উৎসবের রাত শেষ হয়। নবমী রাত তাই বিদায়ের অমোঘ পরোয়ানা নিয়ে হাজির হয়। এসব বিবেচনায় অনেকেই মনে করেন নবমীর দিন আধ্যাত্মিকতার চেয়েও অনেক বেশি লোকায়ত ভাবনায় ভাবিত থাকে মন। এ কারণে মন্ডপে ভিড়ও বাড়ে। ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার জানান, করোনা সতর্কতা ও বৃষ্টির কারণে অনেকেই মন্ডপে প্রদর্শনে আসেননি। তবে নবমীর দিনে তারা আসবেন। এ কারণে মন্ডপগুলোতে ভিড় কিছু বাড়বে। সেটা বিবেচনায় রেখে ভক্ত-দর্শনার্থীদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধির দিকে খেয়াল রেখে পূজায় প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আগামী সোমবার সকালে দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে পাঁচ দিনের দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।