Inqilab Logo

রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শৈশব থেকেই হাত ধোয়ার বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে পাঠ্যপুস্তকে ‘হ-তে হাত ধোয়া’, ‘এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং’ অর্ন্তভুক্তির আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০২০, ১১:৫৪ পিএম

ব্যক্তির জীবনাচরণে শৈশবের শিক্ষা ও পাঠ্যপুস্তকের প্রভাব অপরিসীম। তাই পাঠ্যপুস্তকের বর্ণমালা পরিচয়ে জীবনঘনিষ্ঠ অর্থবহ শব্দ অর্ন্তভুক্তির পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানের করোনা মহামারীর প্রেক্ষিতে এবং দীর্ঘমেয়াদে অত্যাবশ্যকীয় সচেতনতা গড়ে তোলার অংশ হিসেবে শিশুদের মধ্যে হাত ধোয়ার অভ্যাস জোরদার করতে পাঠ্যক্রমে “হ-তে হাত ধোয়া”, “এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং” অর্ন্তভুক্তির পরামর্শ দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা।
ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড এর আয়োজনে, “হ-হাত ধোয়া, সুরক্ষিত হাতে সুরক্ষিত দেশ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে আলোচনার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ এই অভিমত দেন/পরামর্শ প্রদান করেন বিশেষজ্ঞরা । দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড এর চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেদার লেলে, ইউনিসেফ বাংলাদেশের ওয়াটার, স্যানিটেশন এন্ড হাইজিন (ওয়াস) বিভাগের প্রধান ডারা জনস্টন, সেভ দ্যা চিলড্রেনের ডিরেক্টর অব প্রোগ্রাম ডেভলপমেন্ট এবং কোয়ালিটি- রিফাত বিন সাত্তার, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ওরলা মারফি, ব্র্যাক এর নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ এবং ওয়াটার এইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান এই ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, “ছোটবেলায় শিশুরা যা শেখে তা জীবনব্যাপী তাদের কাজে দেয়। তাই শরীরের রোগব্যাধী মোকাবেলায় শৈশব থেকেই হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলাটা খুবই জরুরী।”
তিনি বলেন, “হাত ধোয়া এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়টি আমরা সকলেই জানি। কিন্তু এগুলো চর্চার উপরে এখন আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। জরিপে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, আমাদের দেশের প্রায় ৫০% মানুষ এখনো সঠিকভাবে হাত ধোয়ার বিষয়টি সর্ম্পকে যথেষ্ঠ সচেতন নন। বাংলাদেশ বিশ্বের মাঝে নানামূখী উন্নয়ন মূলক কার্মকা-ের জন্য সমাদৃত, যেন খাবার স্যালাইন আবিষ্কারের মাধ্যমে ডায়রিয়া রোধে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই সারাবিশে^ অনন্য এক উদাহরণ তৈরি করেছে। মহামারীর কারণে হাত ধোয়ার গুরুত্বটাও সবাই এখন উপলব্ধি করতে পারছি। তবে শুধু ডায়রিয়া বা করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে নয়, বরং পুষ্টিহীনতা এবং কৃমির মতো শিশুদেও স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে রক্ষা পেতেও হাত ধোয়ার বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।”
আলোচনায় ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড এর চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেদার লেলে বলেন, ”লৈঙ্গিক সমতা, টেকসই উন্নয়নসহ সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ইউনিলিভার বিশ্বাস করে, বাংলাদেশের জন্য যেটা ভালো, সেটি ইউনিলিভারের জন্যও ভালো। এই বিশ্বাস থেকেই বাংলাদেশে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে হাত ধোয়া সংক্রান্ত শিক্ষা ও সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালিয়ে আসছে লাইফবয়।”
ইউনিসেফ বাংলাদেশের ওয়াটার, স্যানিটেশন এন্ড হাইজিন (ওয়াস) বিভাগের প্রধান ডারা জনস্টন বলেন, ”২০১৯ সালের করোনা ভাইরাস আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছে হাত ধোয়া এবং জীবানুমুক্ত থাকাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এবং এই করোনা ভাইরাস যে খুব শীঘ্রই বিদায় নিচ্ছে না, সেটিও স্পষ্ট। এক্ষেত্রে আগামী দিনগুলোতেও আমাদের জীবাণুুমুক্ত রাখতে হাত ধোঁয়ার বিষটিকে গুরুত্ব দিতে হবে।”


সেভ দ্যা চিলড্রেনের ডিরেক্টর অব প্রোগ্রাম ডেভলপমেন্ট এবং কোয়ালিটি, রিফাত বিন সাত্তার বলেন, ”স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জীবাণুমক্ত থাকার শিক্ষাটি শুধু শিশুকেই নয়, তার পরিবারকেও সচেতন করে তুলবে। আসন্ন সময়ে যখন শিশুদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু হবে, তখন শিশুরা যেন জীবাণুুমুক্ত ভাবে স্কুলে আসতে পারেন এবং স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরতে পারেন সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে শিশুদের হাত ধোয়ার মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদেও সবার।”
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ওরলা মারফি বলেন, ”একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুুমুক্ত থাকার বিষয়টি অতিব গুরুত্বপূর্ণ। প্রচলিত পাঠের মাধ্যমে যদি শিশুদের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে একটি সুস্থ প্রজন্ম পাবো আমরা। এই শিশুরা যখন কৈশোর বা তারুণ্যে পা রাখবেন, তখনও তারা এই তথ্যটি বহন করে নিয়ে যাবেন আরেকটি প্রজন্মের কাছে।
ব্র্যাক এর নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ তার বক্তব্যে ভবিষ্যতে সুস্থ্য থাকতে হলে হাতকে জীবাণুুমুক্ত রাখা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, ”শিশুকাল থেকেই হাত ধোয়াসহ স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করা সম্ভব হলে সার্বিকভাবে জাতীয় স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটবে। তাই সুস্থ্য থাকতে হলে অবশ্যই জীবাণুুমুক্ত থাকতে হবে এবং হাত ধুতে হবে। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে এই জীবাণুুমুক্ত থাকার গুরুত্ব অর্ন্তভুক্ত করা প্রয়োজন। যেন একজন শিশু এই তথ্যটি তার প্রতিটি জীবনাচরনে মনে রাখতে পারেন।”
ওয়াটার এইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, শিশুরাই দেশের ভবিষ্যত। তাদের অভ্যাসের মধ্যে পরিবর্তন ছোট বেলা থেকেই আনতে হবে। বর্তমান মহামারির সময়ে সারা দেশেই কাজ করার প্রয়োজন। শিশুদের কারিকুলামে হাত ধোয়ার বিষয়টি যেন উঠে আসে। শুধু ‘হ’ তে হাত ধোয়া বা এইচ ফর হ্যান্ডওয়াস নয়, জীবন ঘনিষ্ট বিষয়গুলো যেন পাঠ্যপুস্তকে থাকে। যেমন, ‘প’ তে পানি, ‘নিরাপদ পানি নিরাপদ জীবন’।
১৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস ২০২০’ উপলক্ষ্যে নতুন একটি আন্দোলন শুরু করছে জীবানু থেকে সুরক্ষিত রাখার সোপ ব্র্যান্ড ‘লাইফবয়’, যার লক্ষ্য- ছোটবেলা থেকেই হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
এই প্রয়াস থেকেই গত ৬ অক্টোবর একটি পিটিশন সাইট চালু করা হয়েছে, যেখানে “এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং”, “হ তে হাত ধোয়া” আন্দোলনকে সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছেন লাইফবয় এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর- ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং ডটকম (hforhandwashing.com) সাইটে ক্লিক করে স্বাক্ষর আবেদনের মাধ্যমে এই আন্দোলনকে সমর্থন করর জন্য গ্রাহকদেরকে উৎসাহিত করা হয়েছে। প্রতিটি স্বাক্ষরের জন্য ৫ জন করে শিশুকে হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম শেখানোর অঙ্গীকার নিয়েছে লাইফবয়। এছাড়া খেলার ছলে মজা করে নিজেদের হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে বাচ্চাদেরকে উৎসাহিত ও জড়িত করার লক্ষ্যে সৃজনশীল একটি জিঙ্গেল ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।
কয়েক বছরব্যাপী ক্যাম্পেইন চালানোর মাধ্যমে “এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং”, “হ তে হাত ধোয়া” আন্দোলনটিকে সচল রাখবে লাইফবয়। এর মূল লক্ষ্য থাকবে- দেশের শিশু-কিশোরদের মাঝে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে ধারাবাহিক একটি শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং এনজিও গুলোর সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে শৈশবকালীন শিক্ষায় স্বাস্থ্যসম্মত ভালো চর্চাগুলোকে অন্তর্ভূক্ত করানো।
এই আন্দোলনকে প্রাণবন্ত করার লক্ষ্যে গ্লোবাল হ্যান্ডওয়াশিং পার্টনারশিপের সহযোগিতায় ‘এইচ ফর হ্যান্ড ওয়াশিং’ রিসোর্স পেইজ চালু করেছে লাইফবয়, যেখানে এনজিও, সরকার, বিদ্যালয়, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য মানুষজন সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ