পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্র নির্মাণে প্রথম মেগা প্রকল্প। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানি কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। বহু আলোচিত সমালোচিত এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ সরবরাহের সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ শেষ না করেই বাংলাদেশ ছেড়েছে ভারতীয় কোম্পানি ইএমসি। ব্যাংকে জমা থাকা পারফরমেন্স গ্যারান্টির টাকাও তুলে নিয়েছে তারা। এজন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ দুই বছরেরও বেশি সময় পিছিয়ে গেছে। হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার রামপাল বিদ্যুকেন্দ্র থেকে বিদ্যুত্ সরবরাহে সরকার যে কয়টি লাইন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে, তার মধ্যে একটি মোংলা-খুলনা ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট ট্রান্সমিশন লাইন। ভারতীয় কোম্পানি ইএমসির নেতৃত্বাধীন ইএমসি-টিবিইএ যৌথ উদ্যোগকে (জেভি) এ কাজের জন্য নির্বাচিত করে সরকারি সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।
এ জন্য ইএমসিটিবিইএর সঙ্গে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং মার্কিন মুদ্রায় ৮৫ লাখ ১৬ হাজার মার্কিন ডলার দেওয়ার চুক্তি করে পিজিসিবি। চুক্তির আওতায় সঞ্চালন লাইনটির মালপত্র সরবরাহ, প্রয়োজনীয় খনন ও পরীক্ষণ এবং বাস্তবায়নের কাজ করার কথা ভারতীয় কোম্পানি ইএমসি ও চীনা কোম্পানি টিবিইএর।পিজিসিবি ও প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে পিজিসিবি ও ইএমসি-টিবিইএর মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী পরবর্তী ১৮ মাস, অর্থাত্ ২০১৭ সালের জুনে সঞ্চালন লাইনটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। কেন্দ্র থেকে খুলনার হরিনটানা সাবস্টেশন পর্যন্ত লাইনটির দৈর্ঘ্য ২৪ কিলোমিটার। দুই দফা সময়সীমা বাড়িয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ না করে ঐ বছরের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যায় নির্মাণকাজের নেতৃত্বে থাকা ইএমসি। পিজিসিবিকে না জানিয়ে ইএমসি তাদের ঢাকা ও খুলনা অফিস বন্ধ করে দেয় এবং তাদের সব কর্মকর্তা প্রতিনিধি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকে নির্মাণাধীন প্রকল্পটির কাজ।
এই যৌথ উদ্যোগের নেতৃত্ব দেয় ইএমসি। কাজ এগোচ্ছিল না বলে কয়েক দফা তাদের তাগাদা দেয় পিজিসিবি। কিন্তু কাজ কাঙ্ক্ষিত গতিতে সম্পন্ন হয়নি। নিজেদের পাওনা পিজিসিবির কাছ থেকে বুঝে নিলেও স্থানীয় সরবরাহকারী-ঠিকাদারদের পুরো পাওনা বুঝিয়ে দেয়নি। এদিকে প্রকল্প শুরুর দিকে পারফরমেন্স গ্যারান্টি এবং ইএআর ইনসিওরেন্স হিসেবে ব্যাংকে জমা দেওয়া চুক্তিমূল্যের ১০ শতাংশ (৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা এবং ৮ লাখ ৫১ হাজার মার্কিন ডলার) অর্থও তারা তুলে নিয়ে গেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে ইএমসির সাড়া না পেয়ে ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর চীনা কোম্পানি টিবিইএকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ সরকারের কোম্পানি পিজিসিবি। চিঠিতে পিজিসিবি বলে, প্রকল্পের পারফরমেন্স গ্যারান্টি (পিজি) এবং ইএআর (ইরেকশন অল রিস্কস) ইনসিওরেন্সের মেয়াদ যথাক্রমে গত ২৬ আগস্ট ও ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হয়ে গেছে। এই পিজি ও ইএআর ইনসিওরেন্সের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য ইএমসিকে দুবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইএমসি তাতে সাড়া দেয়নি। প্রকল্প এলাকায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না। পুরো কাজের ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। ২৫ শতাংশ বাকি। ঐ সময় পর্যন্ত ৯০ শতাংশ যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে এবং এসংক্রান্ত সব পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। চিঠিতে আরো বলা হয়, এটি পরিষ্কার যে ইএমসি লিমিটেড ইন্ডিয়া প্রকল্প কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি হিসেবে বাকি কাজ সম্পন্ন করে কাজটি সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া টিবিইএর দায়িত্ব। এই চিঠি এবং যোগাযোগের পর কেটে যায় প্রায় এক বছর। এর মধ্যে বিদ্যুত্ খাতের আরো দুটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পায় টিবিইএ। অন্যদিকে ভারতে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয় ইএমসিকে। পিজিসিবির এক কর্মকর্তা জানান, মোংলা-খুলনা ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট ট্রান্সমিশন লাইনের বাকি কাজ শেষ না করলে টিবিইএকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে এবং দেশের অন্য কাজগুলোও বাতিল করা হবে এমন বার্তা দেওয়ার পর টিবিইএ বাকি কাজ করে দিতে রাজি হয়। পরে গত বছরের নভেম্বরের শেষ দিকে তারা প্রকল্পের অসম্পন্ন কাজ শেষ করতে কাজ শুরু করে। এ জন্য নতুন করে ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তিও করে। কিন্তু আগের দেশীয় ঠিকাদারদের পাওনা এখনো মেটায়নি। এর ফলে দেশীয় উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। অর্থাত্, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা, তা দুই বছর দুই মাস পর শেষ হচ্ছে। যে কোম্পানি ইএমসির কারণে এই দেরি হলো তার বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিদ্যুত্ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ইএমসি কাজ অসম্পন্ন রেখে যেভাবে বাংলাদেশ ছেড়েছে, তা অশোভনীয় ও অন্যায়। একই সঙ্গে ব্যাবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকেও অনৈতিক। তাদের সঙ্গে পিজিসিবির করা পিজি এবং ইএআর ইনসিওরেন্সের মেয়াদ যখন শেষ হয়ে যায়, পিজিসিবির কর্মকর্তাদের তখনই উচিত ছিল ব্যাংককে জানানো। প্রকল্প শেষ হয়নি তাই ব্যাংকে রাখা টাকা যেন ইএমসি ওঠাতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক করতে পারত পিজিসিবি। কিন্তু তারা সেটি করেনি। এ জন্য কারা দায়ী তা খুঁজে বের করা দরকার।
এ প্রসঙ্গে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া বলেন, এ নিয়ে তদন্ত হয়েছে। এ নিয়ে হওয়া অনিয়ম ও গাফিলতি সম্পর্কে পিজিসিবির পরিচালকদের বোর্ড অবহিত আছে। বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী এখন কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আর ইএমসি এখন দেউলিয়া হয়ে গেছে। তার পার্টনার টিবিইএর মাধ্যমে কাজ শেষ করানোর ব্যাপারেই আমরা মনোযোগী। তিনি বলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি নাগাদ এ সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাবে। ইএমসির বাকি কাজ অংশীদার হিসেবে টিবিইএ এখন সম্পন্ন করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।