Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘ধর্ষণ-যৌন অবমাননা সমাধানে সরকার ব্যর্থ’

বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০০ এএম

একজন নারীর ওপর হামলা, তাকে বিবস্ত্র করে যৌন নির্যাতনের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর প্রতিবাদে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশে। এসব বিক্ষোভ থেকে নারী ও কন্যা শিশুর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা উদ্বেগজন বৃদ্ধির বিষয় সমাধানে সরকারের ব্যর্থতার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। নিউইয়র্ক থেকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গতকাল এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে।

এ সংগঠনের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষি গাঙ্গুলি বলেছেন, বার বার ধর্ষণ ও যৌন অবমাননা সমাধানে সরকার ভয়াবহ ব্যর্থ। তিনি আরো বলেন, সারশূন্য প্রতিশ্রুতি পূরণ করা প্রয়োজন সরকারের এবং অধিকারকর্মীরা যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে যেসব অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে, নির্যাতিতাদের সমর্থন দিতে আহ্বান জানিয়েছেন- তা পুরণ করা উচিত।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত অনুযায়ী গত বছর অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ওই নারীকে একজন বেশ কয়েকবার ধর্ষণ করেছে বলে ভিডিওতে মনে হয়। এতে ওই ধর্ষক ও হামলাকারীদেরও দেখা যায়। কমিশনের তদন্ত বিষয়ক পরিচালক আল মাহমুদ ফয়জুল কবির বলেছেন, ওই নারী প্রতিবাদ করলে বা তাদের কুপ্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর পুরো দল মিলে তাকে গণধর্ষণের হুমকি দেয়।

ওই নারী মিডিয়ায় বলেছেন, এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করে এক মাস ধরে তা প্রকাশ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল তারা। এর মাধ্যমে তার কাছ থেকে তারা অর্থ আদায়ের চেষ্টা করেছে। একই সঙ্গে তাদের যৌন চাহিদা মেটানোর আহ্বান জানিয়েছিল। এ দাবি তিনি প্রত্যাখ্যান করার পর তারা ওই ভিডিও প্রকাশ করে দেয়।

যদিও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশন (বিটিআরসি) ইন্টারনেট থেকে ওই ভিডিও প্রত্যাহার করে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে, তবুও তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে ওই নির্যাতিতা মিডিয়াকে বলেছেন, আমার জীবন এরই মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন আমার সন্তানদের, বিশেষ করে আমার মেয়েকে নিয়ে উদ্বিগ্ন আমি।

এ ঘটনায় গ্রেপতার করা হয়েছে ৮ জনকে। কিন্তু দেশে যৌন সহিংসতার সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে চূড়ান্তভাবে পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহŸান জানাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্রের মতে, এ বছর প্রথম ৯ মাসে দেশে ধর্ষিত হয়েছেন ৯০৭ জন নারী। এর মধ্যে দুই শতাধিক ঘটনা হলো গণধর্ষণের। যেহেতু এসব তথ্য মিডিয়ার রিপোর্ট নির্ভর এবং বেশিরভাগ নির্যাতিতা এ নিয়ে রিপোর্ট করেন না, তাই যে সংখ্যাটি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা প্রকৃত নির্যাতিতার সংখ্যার মাত্র একক্ষুদ্রাংশ।

এ বছর ঢাকায় একটি ঘটনায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। এর ফলে হতাশাজনক যৌন সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে সমাধান খুঁজতে গত জানুয়ারিতে ৩০ দিনের মধ্যে একটি কমিশন গঠনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এতে জুনের মধ্যে সুপারিশ উপস্থাপনের কথা বলা হয়েছিল। ওই আদেশের ৯ মাসেরও বেশি সময় পরেও ওই কমিশন কার্যকর কি-না, এমনকি তারা কোনো সুপারিশ উপস্থাপন করেছেন কি-না তাও স্পষ্ট নয়। এর মধ্যে দীর্ঘ প্রতিশ্রæত যৌন হয়রানি ও সাক্ষী সুরক্ষা আইন পাস করতে পারেনি সরকার। নির্যাতন থেকে বেঁচে থাকা নারীরা অব্যাহতভাবে কলঙ্কিত হচ্ছেন এবং যখন তাদের সহায়তা প্রয়োজন তখন তারা পর্যাপ্ত মানসিক সেবা পাচ্ছেন না।

এসব ঘটনার অপরাধীদের খুব কমই বিচারের মুখোমুখি করা হয়। বাংলাদেশে ধর্ষণে অভিযুক্তের শতকরা হার এক ভাগেরও নিচে। ২০১৩ সালে জাতিসংঘের বহুদেশভিত্তিক এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে যারা ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে সেইসব পুরুষের মধ্যে গ্রামের শতকরা ৮৮ ভাগ এবং শহরের শতকরা ৯৫ ভাগ বলেছে, তারা কোনো আইনি পরিণতির মুখোমুখি হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ