পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে নিপীড়ন-নির্যাতনে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় স্থাপিত শিবিরে অবস্থান করছে। এতে সংশ্লিষ্ট উপজেলার জনসংখ্যা দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যায়। এতে সেখানকার বিদ্যমান অবকাঠামো, যেমন- রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট, ড্রেন, সুপেয় পানি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর চরম চাপ সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অগ্নিদুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও তারা অতিমাত্রায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
সেজন্য বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অনুদানে মোট এক হাজার ৫৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ‘জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মাল্টি-সেক্টর প্রকল্প’টির অনুমোদন দেওয়া হয়।
সময়ের প্রয়োজনে এই প্রকল্পের ব্যাপ্তি ও সময় বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটিতে প্রথম সংশোধনী এনে গত ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় আবারও অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। এর ফলে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি কক্সবাজার জেলার আট উপজেলার উন্নয়ন হবে। তাতে উপকৃত হবেন আট উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দারাও। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শুধু রোহিঙ্গারাই নয়, স্থানীয় জনগোষ্ঠীও উপকৃত হবে। আগে দুটি উপজেলায় বাস্তবায়িত হলেও সংশোধনী প্রকল্পে আরও ছয়টি উপজেলাকে সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে কক্সবাজার জেলার মোট আট উপজেলার জনসাধারণ উপকৃত হবেন। এসব কারণেই প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়ানো হয়েছে।
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হবে ৫০টি সাইক্লোন শেল্টার। প্রাকৃতিক দুর্যোগে রোহিঙ্গাদের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি ও ঝুঁকির পরিমাণ কমাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই ৫০টি সাইক্লোন শেল্টারে স্থানীয়রাও সুযোগ পাবেন। এর বাইরেও ওই এলাকার সড়ক উন্নয়ন, সেতু নির্মাণ, কালভার্ট, মাল্টিপারপাস কমিউনিটি সেন্টার, সড়ক প্রশস্ত ও মজবুতকরণ, এফএসসিডি’র বিদ্যমান ফেসিলিটি উন্নয়ন, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি, পরিচালন ও মিনি পাইপে পানি সরবরাহ, পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ কমিউনিটি ল্যাট্রিন, রক্ষণাবেক্ষণসহ বায়োগ্যাস ল্যাট্রিন, ওয়াটার অপশন স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণসহ পয়ঃনিষ্কাশন ও কঠিন ময়লা নিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন, বিদ্যমান টয়লেট সংস্কারসহ বাসাবাড়িতে বায়োফিল টয়লেট স্থাপন করা হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরকে (ডিপিএইচই)।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমানো, সামাজিক সেবা প্রদান ব্যবস্থার উন্নতি সাধন, সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি সাধন, অগ্নিজনিত দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমানো, শিক্ষার উন্নত সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে মিয়ানমার থেকে আসা আশ্রিতদের লিঙ্গভিত্তিক বলপ্রয়োগ প্রতিরোধ ও প্রতিকার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণই হচ্ছে প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য।
চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার উখিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, রামু, চকোরিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও পেকুয়া এই আটটি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্প ব্যয় এক হাজার ৫৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সংশোধিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯৮৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২০ কোটি ৩৬ লাখ এবং প্রকল্প অনুদান বাবদ বিশ্বব্যাংক ও কেএফডবিøউ থেকে পাওয়া যাবে এক হাজার ৯৬৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের এডিপিতে মোট ২০৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা (এরমধ্যে জিওবি প্রকল্প সাহায্য বাবদ ২০৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা) বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত আছে।
প্রকল্প প্রস্তাবনা সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ হবে ৫০টি। ২২২ দশমিক ৯৭ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন করা হবে। সেতু নির্মাণ করা হবে ৩৭১ মিটার। কালভার্ট নির্মাণ করা হবে ৪৬৭ দশমিক ৫০ মিটার। মাল্টিপারপাস কমিউনিটি সেন্টার নির্মিত হবে ৩৪টি। সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতকরণ করা হবে ৪২ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণসহ মিনি পাইপে পানি সরবরাহ লাইন ৬৬টি। পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণসহ কমিউনিটি ল্যাট্রিন নির্মাণ করা হবে ৯০টি। পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণসহ বায়ো গ্যাস ল্যাট্রিন নির্মাণ করা হবে ৩০টি। ওয়াটার অপশন স্থাপন করা হবে দুই হাজার ৫০০টি। বিদ্যমান টয়লেট সংস্কারসহ বাসাবাড়িতে টয়লেট স্থাপন ১৪ হাজার ৮০০টি। বাসাবাড়িতে বায়োফিল টয়লেট স্থাপন করা হবে দুই হাজার ৫০০টি।
পরিকল্পনা কমিশন মনে করে, রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমানো, সামাজিক সেবা প্রদান ব্যবস্থার উন্নতি সাধন, সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি, অগ্নিজনিত দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমানো ও শিক্ষার উন্নত সুযোগ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির সংশোধন প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব দিক বিবেচনা করে ২০২৪ সালের ৩০ জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদন পেয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।