Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিতে কোভ্যাক্সে যোগ দিলো চীন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০২ এএম


করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পাওয়া গেলে সেটা যাতে গরীব দেশগুলোর জন্যও নিশ্চিত করা যায় সে লক্ষ্যে জাতিসংঘের নেতৃত্বে ধনী দেশগুলো নিয়ে গঠিত কোভ্যাক্স জোটে আনুষ্ঠানিকভাবে সই করেছে চীন। বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং টুইটারে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে জানান, তারা জোটের সহযোগী সংগঠন গ্যাভির সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন।

কোভ্যাক্সে এখন পর্যন্ত সই করা দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক দিক থেকে চীন সবচেয়ে শক্তিশালী। এই উদ্যোগে বিশ্বের অনেক দেশ সমর্থন জানালেও তাতে নাম লেখায়নি দুই ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। এর আগে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ জোটে যোগদানের সময়সীমা নির্ধারণ করা হলেও, প্রাথমিকভাবে এতে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল চীন। হুয়া চুনিং বলেন, ‘ভ্যাকসিনের ন্যায়সংগত বণ্টন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা এ দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছি, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য। আশা করছি সামর্থ্যবান আরও কিছু দেশ কোভ্যাক্স জোটে যোগ দেবে এবং এতে সমর্থন করবে।’

তবে চুক্তির শর্ত এবং চীন কীভাবে এ জোটে অবদান রাখবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর আগে বলেছিলেন যে চীন এ ভ্যাকসিনকে বিশ্বের জনসাধারণের জন্য সহজলভ্য করবে। বিশ্বে ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটানো করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিস্কারে চেষ্টার কমতি নেই বিজ্ঞানীদের। এর মধ্যে তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে আছে চীনের তিনটি ভ্যাকসিন। সূত্র : এপি।

করোনা সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে পারে ভারত
ইনকিলাব ডেস্ক
৫ পাঁচ দিন আগে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রত্যন্ত গ্রাম মাসলির একটি বাড়ির সদস্য অমিত দেবের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়লে তার পরিবারের সদস্যদের পরীক্ষা করতে স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি দল সেখানে পৌঁছায়। সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রত্যাখ্যান করে তারা বলেন, ‘আমরা পৃথকীকরণের সামর্থ্য রাখি না।’ যদি তার পরিবারের অন্য কোনও ব্যক্তির সংক্রমণ ধরা পড়ে, তবে তাদের সবাইকে বাড়ির ভিতরে অবস্থান করার আদেশ দেয়া হবে, যার অর্থ আরও কয়েক সপ্তাহ কাজ না করা, যা পরিবারটিকে অভাবের দিকে ঠেলে দেবে। একই কারণে চিকিৎসক দলটি পাশের বাড়িগুলো থেকেও প্রত্যাখ্যাত হতে থাকে।

এভাবে করোনাভাইরাস নিয়মের লঙ্ঘন পুরো ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চল জুড়েই প্রতিফলিত হচ্ছে এবং এর ফলে দেশটির করোনা সংক্রমণের হার বিশ্বের ১ নম্বর স্থানের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ১শ’ ৩০ কোটি মানুষের দেশ ভারতের প্রতিটি কোণে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এটিকে ‘দ্য রুরাল সার্জ’ বা গ্রামীণ ধাক্কা হিসাবে অভিহিত করেছে। বেশিরভাগ গ্রামে কেউ মাস্ক পরে না, কোনও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা হয় না। গ্রামবাসীরা করোনা পরীক্ষা করতে অস্বীকার করছে এবং তারা তাদের অসুস্থতাকে গোপন করছে। হাসাপাতালগুলোতেও করোনা রোগীর স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না। প্রাক্তন এক সরকারি কর্মকর্তার তোলা ছবিতে দেখা গেছে, দেশটির ত্রিপুরা রাজ্যের একটি হাসপাতালের করোনাভাইরাস ওয়ার্ডের লাশগুলোতে পোকামাকড় ছেয়ে গেছে।
এ পরিস্থিতি যদি ঠোকানো না যায়, তবে ভারতে করোনার হার বিশ^ব্যাপী সংক্রমণ তালিকার এক নম্বরে থাকা যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করে যেতে পারে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ৭.৬ মিলিয়ন এবং ভারতের ৬.৮ মিলিয়ন, যা প্রায় কাছাকাছি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সংক্রমণগুলোর তুলনায় ভারতে প্রতিদিন ৩০ হাজার বা তার বেশি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে, যা আগামী সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি করেছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গেল বসন্তে ৪ ঘণ্টার নোটিশ দিয়ে দেশটিতে লকডাউন জারি করেছিলেন। তবে সেই কঠোর লকডাউনের ফলে দেশটির অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা কয়েক মিলিয়ন অভিবাসী শ্রমিক অর্থাভাবে নিজ নিজ গ্রামাঞ্চলে ফিরতে বাধ্য হয়। ফলে, তাদের মাধ্যমে ভারতের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে, করোনা মহামারি সামাল দেয়ার ক্ষেত্রে ভারতের গ্রামাঞ্চলগুলো ভাল অবস্থানে নেই। দেশটির সমস্ত হাসপাতাল বেডের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শহরাঞ্চলে রয়েছে, যেখানে রয়েছে সমগ্র জনসংখ্যার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ নেই। শহর এবং গ্রামাঞ্চলে উভয় স্থানেই সংক্রমিতদের জন্য হাসপাতালের বিছানাও অপ্রতুল।

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি বিশেষজ্ঞ ড. ভ্রমর মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘ভারতের পরিবারগুলো ভয়, শোক, বেদনা, হতাশা, উদ্বেগ এবং খাদ্যের নিরাপত্তাহীনতায় জীবনযাপন করছে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সেবা নিতে বিলম্ব করছে।’ তিনি বলেন, ‘এটি একটি মর্মান্তিক সময়।’ ড. মুখোপাধ্যায় ভারতে করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণ হিসাবে ‘মানিয়ে নেয়া, অসংবেদনশীলতা, অদৃষ্টে বিশ^াস, হতাশা ও অস্বীকার প্রবণতাকে দায়ী করেছেন। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন বিষয়ে কাজ করা নয়াদিল্লিভিত্তিক একটি অলাভজনক জনসংখ্যা কাউন্সিলের গবেষণা সহযোগী রাজিব আচার্য বলেছেন, ‘আমরা এখনও প্রথম ধাক্কাতেই রয়েছি। আমি গ্রামাঞ্চলের জন্য কোনও নতুন কৌশল দেখছি না।’ সূত্র : দ্য নিউ উয়র্ক টাইম্স।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ