হাইকোর্টের স্বপ্রণোদিত আদেশ

থানা-আদালতে পুলিশের টানাহেচড়া আর দু’দিনের বন্দি জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাবা-মায়ের কোলে ফিরল বরিশালের বাকেরগঞ্জের চার শিশু। আদালতের নির্দেশে বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাধবী রায় গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় তাদের বাড়িতে গিয়ে বাবা-মায়ের কাছে এসব শিশুদের হস্তান্তর করেন।
বাকেরগঞ্জের রঙ্গশ্রী গ্রামে ৫ বছরের এক কন্যা শিশু ধর্ষণ মামলায় গত মঙ্গলবার গভীর রাতে গ্রেফতার করা হয়েছিল একই বাড়ির ওই চার শিশুকে। মামলার এজাহারে তাদের বয়স দেখানো হয়েছে ১০-১২ বছর। তবে শিশুদের অভিভাবক ও গ্রামবাসীদের দাবি, ওই শিশুদের বয়স ৭-৯ বছরের মধ্যে। শারীরিক কারণেই তাদের পক্ষে ধর্ষণ করা সম্ভব না।

যে কারণে ওই মামলার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। গণমাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে ভার্চুয়াল আদালত স্থাপন করেন। বিচারপতি মো. মজিবুর মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের আদালত গতকাল সকাল ৮টার মধ্যে শিশুদের তাদের বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বরিশাল শিশু আদালতকে (প্রথম অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত) নির্দেশ দেন।
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, হাইকোর্টের সকল নির্দেশনা বরিশালের শিশু আদালতের বিচারক, জেলা প্রশাসক, যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ, বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সংশ্লিষ্ট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও বাকেরগঞ্জের ওসিকে বৃহস্পতিবার রাতেই টেলিফোনে অবগত করা হয়। ওই আদেশ পেয়ে বরিশালের শিশু আদালত রাতেই ওই চার শিশুকে জামিন দেন।

মোহাম্মদ সাইফুর রহমান আরও জানান, চার শিশুকে তাদের অভিভাবকের কাছে হস্তান্তারের পাশাপাশি ঘটনার ব্যখ্যা দিতে সংশ্লিষ্ট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও বাকেরগঞ্জ থানার ওসি এবং চার শিশুকে অভিভাবকসহ আগামীকাল বেলা ১১টায় সশরীরে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

বাকেরগঞ্জের ইউএনও মাধবী রায় জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশে চার শিশু মুক্তি পাওয়ায় গতকাল সকালে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার আগে বরিশাল কারাগারের ব্যবস্থাপনায় বিশেষ মাইক্রোবাসে চার শিশুকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে ধর্ষণ মামলা দায়েরের পর পুলিশ চার শিশুকে গ্রেফতার করে বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে। বিচারক মো. এনায়েতউল্লাহ চার শিশুকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, গত রোববার বিকালে খেলার কথা বলে ৫ বছরের শিশুকে বাগানে নিযে ধর্ষণের অভিযোগে চার শিশুর বিরুদ্ধে বাকেরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয় গত মঙ্গলবার রাতে। অভিযোগ অনুযায়ী, এক শিশু ধর্ষণ করেছে এবং অপর তিন শিশু পাহাড়া দিয়েছে। রোববার ধর্র্ষণের ঘটনা ঘটলেও সোমবার শিশুটি অসুস্থ হলে তাকে প্রথমে বাকেরগঞ্জ হাসপাতালে এবং পরদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।