Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈমানের অভাবেই চারিত্রিক অবক্ষয় : খুৎবা পূর্ব-বয়ানঈমানের চারিত্রিক অবক্ষয় : খুৎবা পূর্ব-বয়ান

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০২ এএম

বিশুদ্ধ ঈমানের অভাবেই সামাজে চারিত্রিক অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে। বিশুদ্ধ ঈমান ছাড়া চারিত্রিক অধঃপতন থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। যে দিকেই তাকাই সেদিকেই হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণ মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে ইমাম-খতিবরা এসব কথা বলেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদগুলোতে উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। নগরীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিববুল্লাহিল বাকী নদভী বলেন, বিশুদ্ধ ঈমানের অভাবেই মুসলমানের মধ্যে অস্থিরতা চারিত্রিক অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে। অধিকাংশ মুসলানের ঈমান আছে তবে তা’বিশুদ্ধ না হওয়ার কারণে চারিত্রিক অধঃপতন দিন দিন বাড়ছে। যে দিকে তাকাই সে দিকেই হত্যা, লুন্ঠন,ধর্ষণ মিথ্যা ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না।

পেশ ইমাম বলেন, বর্তমান মুসলমানরা সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো ও মিথ্যার বিরুদ্ধে অবস্থানের শক্তিও হারিয়ে ফেলছে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে বিজয় অর্জন হয়েছিল ঈমানের বলে বলীয়ান হওয়ার কারণেই। নগদ লাভের আশায় অধিকাংশ মুসলমান ঈমান হারিয়ে কাপুরুষ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে পারে মানুষকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে না। একমাত্র ঈমানই চরিত্র গঠনের মাধ্যমে মানুষকে সত্যিকারের মানুষ রূপে গড়ে তুলতে পারে। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমীন!

ঢাকার ডেমরার দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদ ইমাম ও খতিব মাওলানা মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেছেন, জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়’(সূরা আর-রা‘দ: ২৮)। আজ আমরা নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত। আমাদের অন্তরে শান্তি নেই। কিন্তু কীভাবে অন্তরে শান্তি অর্জিত হবে তা আল্লাহ তা’য়ালা নিজেই কুরআনে বর্ণনা করেছেন।
বান্দার মসিবতে একমাত্র সাহায্যকারী আল্লাহ তা’য়ালাই। তাই বান্দাকে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে। তবেই বান্দা সকল বালা-মসিবত থেকে মুক্তি পাবে। বিপদে পড়ে বান্দা আল্লাকে ডাকলে অবশ্যই আল্লাহ তা’য়ালা তার ডাকে সারা দেন। আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেছেন,

‘আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে আমার বিষয়ে জিজ্ঞেস করে, তখন বলে দাও যে, আমি তাদের অতীব নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর আহবানে সাড়া দিয়ে থাকি, যখন সে আমাকে আহবান করে। অতএব তারা যেন আমার আদেশ সমূহ পালন করে এবং আমার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে। যাতে তারা সুপথ প্রাপ্ত হয়। (বাক্বারাহ ২/১৮৬)।

পেশ ইমাম বলেন, বর্তমানে যে ফেৎনাটি সবচে বড় আকারে দেখা দিয়েছে তা হলো ধর্ষণ। মানুষ এর পরকালীন ক্ষতি জানে না পার্থিব ক্ষতিও জানে না। আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেছেন, তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় তা’ অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পথ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ব্যভিচারকারী যখন ব্যভিচারে লিপ্ত থাকে তখন তার ঈমান থাকে না। একজন ব্যক্ত ঈমানদার হওয়ার পর তাকে হত্যা করা হারাম। তিনটি করণে হত্যা করা যায়, তার একটি হলো ব্যভিচার। এটা এতটাই জঘন্য। বেপর্দা, অশ্লীল সিনেমা, যেনাকারীকে শাস্তি না দেয়ার কারণে মূলত এগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রাজধানীর চকবাজার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব শাইখুল হাদীস মাওলানা মন্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জুমার বক্তব্যে বলেছেন, করোনার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই চারিত্রিক মহামারি ধর্ষণ ও নারীর সম্ভ্রমহানির খবরা খবরে আমরা আজ দিশেহারা। বিবেকবান প্রত্যেকই বর্তমান পরিস্থিতিতে চরম আতঙ্কিত। প্রশ্ন হলো এহেন পরিস্থিতি কেন তৈরি হলো এবং পরিত্রাণের উপায়টা কী? উত্তরটা স্পষ্ট। আমরা অনেকই ইসলাম ধর্মটাকে শুধু নামাজ রোজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। পরিপূর্ণরূপে নয় বরং আংশিকভাবে ইসলামী বিধি বিধান মান্য করতে ভালবাসি। অথচ মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রæ’। (সূরা বাক্বারা,আয়াত-২০৮) কুরআনের কিছু অংশে বিশ্বাস থাকবে আর কিছু অংশে অবিশ্বাস! এভাবে তো আর মুমিন হওয়া যাবে না। ইসলামী বিধি নিষেধ পূর্ণাঙ্গরূপে না মানাটাই হচ্ছে এ অবক্ষয়ের প্রধানতম কারণ এবং পূর্ণাঙ্গরূপে মানাটাই হচ্ছে এর প্রতিকার। মাওলানা আফেন্দী বলেন, বর্তমান পৃথিবীতে অশান্তি, নিরাপত্তাহীনতা, ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মতো মহামারিগুলো মূলত পর্দার বিধানকে উপেক্ষা করা এবং শরয়ী আইন কার্যকর না করার কুফল।
এক হাদীসে এমনও বলা হয়েছে যে, লজ্জা ও ঈমান একটা অপরটার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, এ দুয়ের কোন একটি চলে গেলে অন্যটিও চলে যায়। সুতরাং পরিত্রাণ চাইলে নির্লজ্জতা, অশ্লীলতা ও উলঙ্গপনার আমেজ তৈরি হয় এমন সকল আয়োজনও বন্ধ করতে হবে।

 



 

Show all comments
  • Jack Ali ১০ অক্টোবর, ২০২০, ১১:৪৯ এএম says : 0
    Only you people just talk.. You don't sacrifice you life in order to establish the Law of Allah.. O'Alem come under one Banner of Islam and establish the Law of Allah. If you Alem don't establish the Law of Allah then wait for the punishment of Allah in this world and hereafter.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ