Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অথনীতির বর্তমান উত্তরণের সাথে সামঞ্জস্যহীন-অর্থমন্ত্রী

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০২০, ৭:১৬ পিএম | আপডেট : ৭:১৭ পিএম, ৯ অক্টোবর, ২০২০

বিশ্বব্যাংক একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তারা যখন কোন দেশ সম্পর্কে বা কোন বিষয় নিয়ে তথ্য উপস্থাপন করে, সঙ্গত কারনেই এটি সবাইকে প্রভাবিত করতে পারে। গতকাল বৃহষ্পতিবার বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি হার (জিডিপি) নিয়ে বিশ্বব্যাংক যে পূর্বাভাস দিয়েছে তা বাংলাদেশের অথনীতির বর্তমান উত্তরণের সাথে সামঞ্জস্যহীন। বাংলাদেশের জিডিপি সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক এবার যে নাম্বারগুলো বলেছে সেগুলো করোনার প্রভাবে অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি শ্লথ হওয়ার শুরু থেকেই বলে আসছে এবং সেই একই জায়গাতেই তারা এখনো আছে। আমাদের অর্থবছরের তিন মাস পার হয়েছে, এখনও নয় মাস সময় রয়েছে। করোনার প্রভাবে যে শ্লথ গতি অর্থনীতিতে তৈরী হয়েছিল সেটি অনেকটা স্বাভাবিক। স্বাস্থ্য ও মহামারি পরিচালন ব্যবস্থার ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সত্ত্বেও সরকারের উপযুক্ত অর্থনৈতিক প্রণোদনা ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা অর্থনীতিকে সুসংহত করেছে, দরিদ্র ও দুর্বলদের জন্য মৌলিক সেবা ও পণ্যাদি নিশ্চিত করেছে। অভ্যন্তরীণ বেসরকারি ও সরকারি ব্যয়, বিনিয়োগ, রফতানি এবং রেমিট্যান্সসহ অর্থনীতির প্রায় সকল খাত বেশ সক্ষম অবস্থানে রয়েছে। গতকাল বৃহষ্পতিবার প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের ‘দক্ষিণ এশিয়া ইকনোমিক ফোকাস ফল- ২০২০’ রিপোর্টের প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া ইকনোমিক ফোকাস রিপোর্টে বাংলাদেশের জিডিপিতে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। করোনা মহামারির প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়া নজিরবিহীন অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা সকলেই জানি তাদের প্রক্ষেপনের বৈশিষ্ট্যই হলো অত্যন্ত রক্ষণশীল পদ্ধতি। বিশ্ব ব্যাংকের এ যাবৎকালের সকল প্রক্ষেপণ যদি কেউ একটি তালিকা করে তাহলে দেখা যাবে, প্রক্ষেপণগুলো বাস্তবতা হতে অনেক দুরে! আমরা বিশ্বাস করি তারা এবারো সেই গতানুতিক ধারার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। আমাদের সক্ষমতার নিরিখে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করি এবং তা অর্জন করি। অর্জন করে বার বার প্রমাণ করতে হয় আমরা সঠিক। এবারও আমরা কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করে প্রমাণ করব আমাদের লক্ষ্যমাত্রাই সঠিক। সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স বাড়লেও এটি সাময়িক মনে করছে অনেকে। বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণ উৎসাহিত করার জন্য আমরা যখন প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছি তখন অনেকেই বলেছিল রেমিট্যান্সে এর কোন প্রভাব পড়বে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো প্রণোদনার ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।

তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, প্রবাসী আয় বেড়েছে, কারন করোনার কারনে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমার ভাই-বোনেরা ফিরে আসছেন, তাদের সব কিছু বিক্রি করে চলে এসেছেন কাজেই এই প্রবৃদ্ধি। কিন্তু তারা হয়তো ভুলে গেছেন, ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা এবং রেমিট্যান্স পাঠানোর নিয়ম-কানুন সহজ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তের কথা। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠানোর পরিমাণ বাড়িয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা করোনা আসার আগে থেকেই।

২০১৯-২০ অর্থবছরে শুরু থেকেই, যখন করোনা ছিল না, রেমিট্যান্স প্রবাহে ছিল উর্দ্ধগতি তাই আগামীতে এ ধারা অব্যাহত নাও থাকতে পারে এমন ভাবনা যৌক্তিক নয়। ২০১১ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্ভোধনী অন্ষ্ঠুানে বিতর্কের মধ্যেই আহবান জানিয়েছিলাম ‘ও পৃথিবী এবার এসে বাংলাদেশ নাও চিনে। ও পৃথিবী তোমায় জানাই, স্বাগতম এই দিনে।’ বাংলাদেশের সক্ষমতা ও অর্জন নিয়ে বিদ্যমান বিতর্ক দেখে এখনও আবার সংশ্লিষ্টদের বলতে ইচ্ছে করেÑ আসুন চিনে নিন এক অন্যরকম নতুন বাংলাদেশ।

দেশের সকল মানুষকে উদ্দেশ্য করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বার বার আমরা বলেছি এদেশের মানুষ এদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি, তারাই আবার প্রমাণ করবে যে বিশ্বব্যাংক যে প্রক্ষেপণ করেছে তা সামঞ্জস্যহীন। সাহসী বাঙ্গালী জাতি অতীতেও বার বার প্রমাণ করেছেন, এবারেও পারবেন। আমরা সকলেই অবগত, সকল বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরী করছি। প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে বিশ্বাস করে দেশের মানুষের জন্য তিনি বাজেটে প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপন বা রূপরেখা দিয়েছেন, আমরা বিশ্বাস করি সকলে মিলে আমরা তা অর্জন করতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ। গত ১০ বছর বাংলাদেশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সকলের উপরে ছিল, আমরা আত্মপ্রত্যয়ী যে ভবিষ্যতেও সে ধারা বজায় থাকবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ