পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেন তার নিজের জীবনের ঘটনাগুলো লিখে রাখেন, সেজন্য তার সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সব সময় উৎসাহ দিতেন বলে জানিয়েছেন তাদের সন্তান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ব্রেইল সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বইটির ব্রেইল সংস্করণ প্রকাশের উদ্যোগ নেয়ার জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী যে ডায়েরি, সেটা ব্রেইলে প্রকাশ করা হয়েছে যাতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরাও পড়তে পারে এবং তার সম্পর্কে জানতে পারে। এটা একটা মহৎ উদ্যোগ। ২০১২ সালের জুনে অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রথম প্রকাশিত হয়। এরপর ইংরেজি, উর্দু, জাপানি, চীনা, আরবি, ফরাসি, হিন্দি, তুর্কি, নেপালি, স্প্যানিশ, অসমীয়া ও রুশ ভাষায় বইটি অনূদিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই বইতে জাতির পিতার জীবনের কথা যেমন আছে, পাশপাশি তার সংগ্রামের অনেক কথা আছে এবং ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলন, সেই আন্দোলনের অনেক তথ্য এখানে রয়েছে। বইটি ইতোমধ্যে ১৪টি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে সারাবিশ্বে। আরো কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করার জন্য আমাদের কাছে অনুমতি চেয়েছে।
জাতির পিতাকে নিজের জীবন নিয়ে লিখতে তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কীভাবে উৎসাহ দিতেন, সেই স্মৃতি স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার মা সব সময় অনুপ্রেরণা দিতেন তিনি যেন তার জীবনীটা লিখে রাখেন। সেই থেকেই তিনি লিখতে শুরু করেন এবং যতবার কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পেতেন, তখন মা জেলগেইটে উপস্থিত থেকে আর কিছু না হোক লেখার খাতাগুলো তিনি সংগ্রহ করে রাখতেন। বঙ্গবন্ধুর সেইসব লেখার খাতা ১৯৭১ সালে প্রায় হারাতে বসেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু সেই সময় আমরা সেটা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিলাম। যদিও আমাদের ধানমন্ডির বাসায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী লুটপাট করে। সেখানে সবকিছু লুটপাট করলেও এগুলো যেহেতু একটা লাইনটানা রুলখাতা, এগুলো ওদের নজরে পড়েনি। ওদের কাছে এগুলোর কোনো মূল্য ছিল না। এক সময় সেটা আমি উদ্ধার করে নিয়ে আসি। সেটার বিস্তারিত আমি অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটাতে লিখেছি। শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতার আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে হত্যার ঘটনাও এ অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পরও খুনিরা ধানমন্ডির বাসায় লুটপাট চালিয়েছিল। ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালে তিনি যখন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দেশে ফিরলেন, তৎকালীন সামরিক শাসক তাকে ওই বাসায় প্রবেশ করতে দেয়নি। সেদিন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে খুনিদেরকে বিচারের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। দেশে ফিরে আসার পর ওই বাড়িতে আমার ঢোকা নিষেধ ছিল, ঢুকতে পারিনি। সিলগালা করে দেয়া ছিল। তখন হঠাৎ করে ১২ জুন তাদের কাছে মনে হল বাসাটা খুলে দেবে। তখন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে প্রবেশ করে জাতির পিতার লেখার খাতাগুলো সংগ্রহ করি। কিন্তু অসমাপ্ত আত্মজীবনীর লেখাগুলো সেদিন পাওয়া যায়নি। তবে টাইপ করা পোকায় কাটা কতগুলো কাগজ সেদিন পাওয়ার কথা জানান শেখ হাসিনা।
দীর্ঘদিন পর ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধুর এক ভাগ্নে অতি পুরানো-জীর্ণপ্রায় এবং অস্পষ্ট লেখার চারটি খাতা শেখ হাসিনাকে এনে দেন। তিনি ওই খাতা চারটি বঙ্গবন্ধুর আরেক ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণির অফিসের টেবিলের ড্রয়ার থেকে সংগ্রহ করেন। ওই লেখাগুলোই ছিল বঙ্গবন্ধুর হারিয়ে যাওয়া আত্মজীবনীর অংশ। ধারণা করা হয়, শেখ মণিকে টাইপ করার জন্য খাতাগুলো দেয়া হয়েছিল। পরে সেগুলো বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার দেয়া অসমাপ্ত আত্মজীবনী নামে বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের সম্পাদনায় গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা হয় ২০১২ সালের জুনে। সেই সঙ্গে বইটি ইংরেজিতেও প্রকাশ করা হয়, যার ভাষান্তর করেন ড. ফকরুল আলম।
অনুষ্ঠানের গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চাষি পুরস্কৃত, প্রতিবন্ধী নারীর দায়িত্ব নিলেন প্রধানমন্ত্রী : নিজে গরিব হওয়া সত্তে¡ও চাষি আমজাদ আলী শারীরিকভাবে অসুস্থ গর্ভবতী এক প্রতিবন্ধী নারীকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেন। সংবাদপত্রের মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পেরে মানবিক চাষি আমজাদ আলীকে পুরস্কৃত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নিলেন ওই প্রতিবন্ধী নারীর।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কোলাবাজারের ২২-২৩ বছরের জনৈক মানসিক প্রতিবন্ধী নারীর শারীরিক অসুস্থতা এবং তার গর্ভের সন্তানের কথা চিন্তা করে মানবিক কারণে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান মায়াধরপুর গ্রামের প্রান্তিক চাষি আমজাদ আলী। আমজাদ নিজেই গরিব মানুষ। তার কোনো চাষযোগ্য জমি নেই। সারাবছর পরের খেতে কামলার কাজ করে সংসার চালান। আমজাদ আলীর দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। কিন্তু সে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ৬ মাস ধরে শয্যাশায়ী। ফলে এখন শুধু আমজাদের একার রোজগারে সংসার চালাতে হচ্ছে। নিজের অভাবের মধ্যেও তিনি অনন্য মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদপত্রের মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পারেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গর্ভবতী প্রতিবন্ধী নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২ অক্টোবর দুপুরে কালীগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে এ নারী একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। মা ও মেয়ে উভয়েই সুস্থ আছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমজাদ আলীর ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে একটি মোটরচালিত রিকশাভ্যান দেয়া হয়েছে। প্রতিবন্ধী নারীটিকে করে দেয়া হয়েছে প্রতিবন্ধী কার্ড। এছাড়া প্রতিবন্ধী ওই নারী এবং তার সদ্যপ্রসূত শিশু কন্যার দেখভালের জন্য নগদ ৫৫ হাজার টাকাও আমজাদকে দেয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।