পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, বর্তমান কমিশনের মাত্র ৪ মাস সময় হলেও এরই মধ্যে বেশ কিছু পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে। যার ফলাফল আপনারা ইতিমধ্যে দেখতে শুরু করেছেন। পুনর্গঠনের সকল কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন হলে বর্তমান কমিশনের মেয়াদের দুই বছরের মধ্যেই একটি আধুনিক পুঁজিবাজার দেখা যাবে।
মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) বিনিয়োগকারী সপ্তাহ-২০২০ উপলক্ষ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড ডিজিটাল প্লাটফর্মে ‘ডিলিং উইথ ইনভেস্টরস’ শীর্ষক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের বিএসইসি’র চেয়ারম্যান প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএসই’র চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বাজারে ত্রুটি থাকলে বিএসইসি সেটা ধরে সংশোধনের কাজ করতে পারে। বাজারে বিভিন্ন সেক্টরের দাম বৃদ্ধি পাওয়া ও কমার বিষয় নিয়ে অনেকেই আমাদের ফোন করেন, ফেসবুকে লেখেন, ই-মেইল করেন, চিঠি লেখেন। জানতে চান, এই সেক্টর কেন বাড়ছে, ওই সেক্টর কেন কমছে। সত্যিকার অর্থে আমরা যদি কেনা-বেচার দিকে নজর দিতে যাই তাহলে বাজারে বিনিয়োগ করে শান্তি পাওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর মাত্র ৪ মাস গেছে। বর্তমানে বাজারে এক হাজার কোটি টাকার আশেপাশে লেনদেন হচ্ছে। এ বছরের মধ্যেই লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত উত্তীর্ণ হবে বলে আশা করছি। কমিশন এ লক্ষ্যে কাজ করছে। তিন বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ একটি বাজার আমরা উপহার দেবো।
প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজার টিকে থাকে বিনিয়োগকারীদের জন্য। তারা এখানে বিনিয়োগ করেন বলেই বিভিন্ন কোম্পানি এখান থেকে অর্থ সংগ্রহের সুযোগ পায়। এবং সেই অর্থ দিয়ে শিল্পায়ন হয়। এতে কোম্পানি যেমন লাভবান হচ্ছে তেমনি বিনিয়োগকারীরা লাভবান হচ্ছে। সর্বোপরি দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ দরকার। যারা আমাদের উপর আস্থা রেখে এখানে বিনিয়োগ করছেন তাদের সুরক্ষা দেয়া আমাদের দায়িত্ব। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, এ অনুষ্ঠান খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। যারা বিনিয়োগকারী তারা ব্যবসার ভাষায় কাস্টমার, বিনিয়োগকারীদের সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে। কাস্টমারের কথা এমনভাবে মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে যেন তারা বুঝতে পারে আপনি তাদের কথা শুনছেন। যখন মনে হবে যে কোন ভুল হয়েছে তখন কাস্টমারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। তাদের প্রয়োজনটা বুঝতে হবে এবং সমাধান দিতে হবে, কাস্টমার যখন দুঃখ কষ্ট নিয়ে আসবে, তাদের দুঃখ কষ্ট বুঝতে হবে।
২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগের মাধ্যমেই উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। বিএসইসি, স্টক এক্সচেঞ্জ, ট্রেকহোল্ডার সবারই দায়িত্ব আছে। সবাইকে বিনিয়োগকারীদের প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে। কাস্টমার/বিনিয়োগকারীদের সন্তুষ্টি অত্যন্ত জরুরী। বাংলাদেশ ব্যাংক, ফাইন্যান্সিয়াল ডিভিশনের সাথে সমন্বয় করে কমিটি নতুন করে তৈরী করা যেতে পারে। প্রতি মাসে সেই কমিটি একবার বৈঠক করতে পারে। বিদেশি কোম্পানি দেশে ব্যবসা করতে আসলে স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত হতে হবে। এরকম একটা উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
ইউনুসুর রহমান বলেন, বাজার ভালো করার জন্য শতভাগের ৫০ ভাগই গভর্নেন্স এর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। খারাপ কাজ করলে তার শাস্তি পেতে হবে। ভালো কাজ করলে তার জন্য ধন্যবাদ পেলেই বাজার ভালো হবে।
তিনি বলেন, বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিদেশি কোম্পানি বাজারে আসতে চাইলে তাদেরকে সুযোগ সুবিধা দিয়ে বাজারে বিনিয়োগ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বে আমি স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেখছি। এর আগে ৪০ বছর শুধু স্বপ্নই দেখেছি। এই কমিশনের নেতৃত্বে আমি অভিভূত। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ বাজারের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হক বলেন, বিনিয়োগকারী শিক্ষা ও সুরক্ষার গুরুত্ব এবং বিনিয়োগকারী সচেতনতা ও শিক্ষা বিষয়ে সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রকদের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগকে তুলে ধরার মাধ্যমে বিনিয়োগ শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করাই ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২০’ এর মূল উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, কার্যকরি বিনিয়োগ শিক্ষা তুলে ধরার মাধ্যমে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সাথে ঝুঁকির মাত্রার উপর জোর দেয়া হয়েছে।
আলোচনায় অংশগ্রহন করেন বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ রেজাউল করিম, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট শরীফ আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলী লিস্টেড কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াদ মাহমুদ, মেট্রোপলিট্রন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রেসিডেন্ট নিহাদ কবির এবং ডিএসই’র পরিচালক মো. শাকিল রিজভী। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন ডিএসই’র প্রধান পরিচালক কর্মকর্তা এম. সাইফুর রহমান মজুমদার এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসই’র প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আব্দুল মতিন পাটওয়ারী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।