Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শৃঙ্খলা ফেরায় সউদীগামী যাত্রীদের মাঝে স্বস্তি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০২০, ৭:৩৮ পিএম

# দ্বারে দ্বারে ঘুরছে থার্ড ক্যারিয়ারের যাত্রীরা
# ৬ মাসে ফিরেছে ১৭০৫৭৩ জন প্রবাসী
ফিরতি টিকিট বিতরণে শৃঙ্খলা ফিরে আসায় সউদীগামী যাত্রীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। মতিঝিল বিমান অফিসের গেইটে আজ সোমবার বিকেল চার টায় হ্যান্ড মাইকে একজন কর্মকর্তা ঘোষণা দিচ্ছেন কেউ আছেন সউদীর টিকিট নেয়ার? যদি থাকেন এখনই অফিসের ভেতরে প্রবেশ করুন। টিকিট ও টোকেন দেয়া হবে। হুড়হুড় করে অপেক্ষমান সউদীগামী যাত্রীরা বিমান অফিসে ঢুকে পড়েন।
ঘোষণায় আরো বলা হয়, থার্ড ক্যারিয়া যোগে যেসব যাত্রী ছুটিতে এসে আটকা পড়েছেন তাদের নতুন টিকিট ইস্যু করার বিষয়টি এখনো ওপর মহল থেকে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। নেত্রকোণার মো.ফারুক, কুমিল্লার সাইফুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও এর আব্দুর রাজ্জাক, জয়পুর হাটের আবুল কালাম আজাদ কুয়েত এয়ার, কাতার এয়ার ও এমিরেটস এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে দেশে এসে আটকা পড়েছেন। এসব ফ্লাইট চালু না হওয়ায় তারা ঐ এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। তারা বিমান ও সাউদিয়ার অফিসে ধরণা দিয়েও কোন টিকিট ক্রয়ের সুযোগ পাচ্ছে না। বি-বাড়িয়ার গ্রিস প্রবাসী মো. ইব্রাহিম, ঢাকার সাইদুল, সিলেটের রাফিসহ চার শতাধিক যাত্রী গ্রিসে যাওয়ার টিকিট না পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।
বিএমইটির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, করোনা মহামারিতে কাজ না থাকায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে প্রবাসী কর্মীদের ফেরার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত ১ এপ্রিল থেকে গত ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ১ লাখ ৭০ হাজার ৫৭৩ জন নারী পুরুষ কর্মী দেশে ফিরছে। এর মধ্যে ১৭ হাজার ১৮২ জন নারী গৃহকর্মী রয়েছে। সূত্র মতে, আউটপাসের মাধ্যমে ফিরেছে ৩০ হাজার ৫৪৩ জন আর বৈধ পাসপোর্টের মাধ্যমে ফিরেছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৩০ জন। সবচেয়ে বেশি ফিরেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। দেশটি থেকে চাকরি হারিয়ে ফিরেছে ৪৬ হাজার ৪৩ জন। সউদী আরব থেকে ফিরেছে ৪০ হাজার ৪৯৪ জন। কাতার থেকে ফিরেছে ১৫ হাজার ৭৮৭ জন। ওমান থেকে ফিরেছে ১০ হাজার ৯০৩ জন। কুয়েত থেকে ফিরেছে ১০ হাজার ৮৫ জন এবং মালদ্বীপ থেকে ফিরেছে ১০ হাজার ৫৮৩ জন।
এদিকে, সাউদিয়া এয়ারলাইন্স গত রোববার থেকে বিশজনের যৌথ ফরম পূরণ করে ফিরতি টিকিট ইস্যু শুরু করেছে। আজও সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের অফিসে সউদীগামী শত শত যাত্রী ফরম পূরণ করে জমা দিয়েছে। এতে যেসব কর্মীর ভিসা ও ইকামার মেয়াদ দশ দিন আছে তাদেরকেই আগেভাগে টিকিট ইস্যু করা হবে। মতিঝিলস্থ বিমান অফিসেও যাদের ভিসা আগে শেষ হচ্ছে তাদেরকে আগে টিকিট দেয়া হচ্ছে।
রিয়াদে ১৬ বছর যাবত চাকরি করে সুনাম অর্জন করেছেন নরসিংদী জেলার রমজান আলী। সউদী কফিল খালিদ জাহিবান আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত তার ভিসা ও ইকামার মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রবাসী রমজান আলী, শাহাদাত হোসেন, বাবুল মিয়া, আবুল হোসেন ও আব্দুল মোমেন আজ একত্রে ফিরতি টিকিটের জন্য সাউদিয়ার অফিসে ফরম জমা দিতে পাড়ায় তাদের মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। প্রবাসী রমজান আলী বলেন, টিকিটের জন্য ফরম জমা দিতে পারায় প্রবাসীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আগামী ১৮ ও ১৯ অক্টোবর ভিসা ও ইকামার মেয়াদ শেষ হবে লক্ষ্মীপুরের জহির আলম,নারায়ণগঞ্জের মদনের শফিকুল ইসলাম ও বি-বাড়িয়ার মো. জাফর আলীর। গত এক সপ্তাহ সাউদিয়ার অফিসের বাইরে রাতদিন ঘুরাঘুরি করেও ফিরতি টিকিটের টোকেন পাননি। সাউদিয়ার নতুন সিদ্ধান্তে গতকাল ফরম পূরণ করে জমা দিতে পাড়ায় মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। নোয়াখালীর রিয়াদ হোসেন, যশোরের আব্দুল হান্নান ও ঢাকার নবাবগঞ্জের আক্তার কয়েক দিন ফুটপাতে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে আজ সাউদিয়া অফিসে টিকিটের জন্য ফরম জমা দিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, তের বছর যাবত সউদীতে চাকরি করে বিমানের টিকিটের জন্য এমন হয়রানির শিকার হতে হবে ভাবতেও পারিনি।
পটুয়াখালীর সউদী প্রবাসী হারুন ও চাঁদপুরের আবুল খায়ের কাওরান বাজারস্থ সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের সউদী কফিল ভিসা ও ইকামার মেয়াদ আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ জন্য সউদী কফিলের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ফেনীর সউদী প্রবাসী জয়নাল আবেদীন গত বার দিন যাবত ঘুরেও সাউদিয়ার ফিরতি টিকিট ভাগ্যে জোটেনি। রিয়াদস্থ ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরসের পাকিস্তানী ম্যানেজার তার ফিরতি টিকিটের টাকা তুলে নিয়ে গেছে। ফলে তার ফিরতি টিকিট রি-ইস্যু করতে পারছে না সাউদিয়া কর্তৃপক্ষ। আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত তার ইকামার মেয়াদ রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে তাকে রিয়াদ যেতে হবে না হলে তার চাকরি হারাতে হবে। ঝালকাঠীর সউদী প্রবাসী মো. জাহাঙ্গীর আলম কয়েক দিন যাবত ঘুরেও সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের টিকিট পাচ্ছে না। তার ভিসা ও ইকামার মেয়াদ আগামী ১৫ অক্টোবর শেষ হয়ে যাবে।
ভিসার মেয়াদ থাকতেই সউদী যাওয়ার জন্য অপেক্ষমান কর্মীদের অনেকেই ফিরতি টিকিট রি-ইস্যু করতে না পেরে চড়া দামে নতুন টিকিট কেটে যাচ্ছে। এমন সঙ্কটময় পরিস্থিতিতেও সক্রিয় টিকিট সিন্ডিকেট চক্র। এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তা ও ট্রাভেল এজেন্সির যোগসাজশে চলছে টিকিট বাণিজ্য। বিভিন্ন ট্রাভেলস এজেন্সি ঢাকা-সউদী রুটে নতুন টিকিটি জাজিরা এয়ারওয়েজে ৯০ হাজার, এমিরেটসে ১ লাখ ৫ হাজার, সাউদিয়া এয়ারলাইন্সে ১ লাখ ২৮ হাজার এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় অফার করছে বলে প্রবাসী কর্মীরা জানায়। এত চড়া দামের নতুন টিকিট কিনতে না পেরে অপেক্ষমান কর্মীরা এজেন্সিগুলো থেকে ফিরে যাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ