পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
১৬৫ নং সরকারি দক্ষিণ-পূর্ব পশারীবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার পশারীবুনিয়া গ্রামের এ বিদ্যালয়ের নামে কোন জমি কিংবা বিদ্যালয়ের নেই কোন অস্তিত্ব। কিন্তু জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ ও নিজস্ব জমি দেখিয়ে এ বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। সরেজমিনে কোন স্কুল না থাকলেও কাগজে-কলমে চলমান রয়েছে। শুধু তাই নয়, বাসায় বসেই নিয়মিত বেতন তুলছেন ৪ শিক্ষক। এ সংক্রান্ত জাল-জালিয়াতির ঘটনায় আদালতে দুটি মামলা হয়েছে। তবে, সরকারি দক্ষিণ-পূর্ব পশারীবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অদৃশ্য শক্তির সহযোগিতায় টিকিয়ে রাখা হয়েছে, যা লাইফ সাপোর্টের শামিল বলে মন্তব্য করেন সেখানকার গ্রামবাসী।
সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, ১৯৯১ সালে প্রথমে মিজানুর রহমান লাল মিয়া মিঞা হাওলাদার বাড়ীর সামনে যেখানে বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। সেখানে বর্তমানে একটি পতিত জমি। বিদ্যালয়টির নামে নিজস্ব জমি বরাদ্দ না থাকার কারণে মৌখিক ভাবে স্কুলটি স্থানান্তর করা হয় স্থানীয় আব্দুস সালাম হাওলাদার এর বাড়ীর পাশের বাগানের জমিতে কিন্তু সেখানে বিদ্যালয়ের কোন সাইনবোর্ড পর্যন্ত নেই, দেখা যায় পরিত্যক্ত একটি কুঁড়ে ঘর। সরেজমিনে কোন স্কুল না থাকলেও কাগজে-কলমে চলমান রয়েছে এ অদৃশ্য বিদ্যালয়টি, এমনই দাবি এলাকাবাসীর।
খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে দেখা যায় অত্র হাওলাদার বাড়ির অদুরেই খালের পাড়ে আব্দুল হালিম ও আবুল হাওলাদারের বাগান বাড়িতে বর্তমানে কাঠ নতুন স্কুলঘর নির্মাণ করা হচ্ছে । অপর দিকে বিদ্যালয়ে ১শ ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী কাগজে কলমে থাকলেও প্রকৃতপক্ষে কজন আছে তা কেউ জানেনা। স্থানীয়রা ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা শুনে হতবাক হন। তারা বলছেন- বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব অথবা ছাত্র-ছাত্রী না থাকলেও ৪ শিক্ষক নিয়মিত বেতন তুলছেন।
অত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম হাওলাদার অসুস্থ থাকায় তার ছেলে আরিফ বিল্লাহ বাদী হয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সীমা রানী গোলদার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার জালাল উদ্দিন খান সহ সহকারী শিক্ষকদের জড়িয়ে ৫ জনের নামে বিজ্ঞ (পিরোজপুর) জেলা স্পেশাল জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৬৫ নং সরকারী দক্ষিণ-পূর্ব পশারীবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে কোন জমি নেই। বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের জন্য ২০১১ সালের ৫ মে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জোগসাজসে ওই বিদ্যালয়ের ৪ জন কথিত শিক্ষক ১৯৯৯ সালে বিদ্যালয়ের নামে একখানা জাল দলিল তৈরি করে। পরে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও জমির মালিক আব্দুস সালাম হাওলাদারের স্বাক্ষর জাল করে যাবতীয় কাগজ পত্র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের জন্য প্রেরন করেন এবং ২০১৪ সালের পহেলা জানুয়ারি বিদ্যালয়টি সভাপতির অজান্তেই জাতীয়করণ হয়ে আসে। এছাড়াও বিদ্যালয়ের নামকরণ নিয়ে রয়েছে রহস্য রয়েছে কখনও উল্লেখ করা হয় ১৬৪ নম্বর এবং কখনও ১৬৫ নম্বর।
মামলা সূত্রে জানা যায় বিদ্যালয়টিতে মাত্র ৬ জন ছাত্র -ছাত্রী রয়েছে কিন্তু শিক্ষকরা অতিরিক্ত ভুয়া ছাত্র-ছাত্রী দেখিয়ে উপবৃত্তি টাকা উত্তোলনসহ প্রতিষ্ঠানের নামে পাওয়া সরকারি বই এনে তা কেজি মূল্যে বিক্রয় করে অর্থ আত্মসাৎ করছেন। এছাড়াও ওই বিদ্যালয়ের ৪ শিক্ষক এককালিন অর্ধকোটি টাকা উত্তোলনসহ নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন।
এদিকে অপর মামলাটি দায়ের করেছেন অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দাবিদার মো. শাহ আলম সিকদার। মামলা সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালিন স্থানীয় সমাজ সেবক খলিলুর রহমান দলিল মূলে ৫০ শতক জমি দান করে তার ওপর একটি স্কুল ঘর নির্মাণ করে পাঠদানের কার্যক্রম শুরু করেন। বেসরকারি দক্ষিণ-পূর্ব পশারীবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টির তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত সভাপতি মিজানুর রহমান লাল মিঞা উপজেলার রাজপাশা গ্রামের শাহ আলম সিকদারকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মিজানুর রহমান, কুদ্দুস সিকদার, মরিয়ম আক্তারকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রদান করলে তারা শিক্ষার্থীকে পাঠদান করতে থাকেন। পরে ১৯৯৪ সালে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলটি রেজিস্ট্রার বিদ্যালয় হিসেবে অনুমোদন পায় এবং পরবর্তিতে অত্র বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হয়। এর পূর্বে উপজেলা শিক্ষা ও জেলা শিক্ষা অফিসারের যোগাযোগে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম এর স্বাক্ষর জ্বাল করে ১৯৯৯ সালের তারিখ দেখিয়ে ভুয়া রেজুলেশন তৈরি করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আলম সিকদার ও সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান,কুদ্দুস সিকদার, মোসা. মরিয়ম আক্তারকে বাদ দিয়ে উপজেলার পশরীবুনিয়া গ্রামের সীমা রানী গোলদার, শাহানাজ আক্তার, শিল্পী আক্তার ও রীনা রানীকে অন্তর্ভুক্ত করে বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত করা হয়। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে নিয়োগ বিধি না মেনে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহনাজ আক্তার ও শিল্পী আক্তারকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ব্যতিরেখে ২০১১ সালের ১৭ এপ্রিল নিয়োগ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য সীমা রানী গোলদার, শাহানাজ আক্তার, শিল্পী আক্তার ও রীনা রানীকে নিয়োগ প্রদানের জন্য ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম হাওলাদার বা ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মাধ্যমে কোন সভায় শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ও নিয়োগের জন্য কোন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি এবং বিদ্যালয়ে যোগদান পত্রও গ্রহণ করা হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দাবিদার মো. শাহ আলম সিকদার ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরে বিদ্যালয়টির একমাত্র টিনের ঘরটি বিধ্বস্ত হয়ে পাঠদান কয়েক মাস বন্ধ থাকার সূযোগে এ কুচক্রিমহল নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেখিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজ পত্র তৈরি বিদ্যালয়টি অবৈধভাবে এমপিওভুক্ত করান।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সীমা রানী গোলদারের কাছে মুঠোফোনে তার বিদ্যালয় কোথায় জানতে চাইলে তিনি তার স্বামীকে ফোন ধরিয়ে দিলে তিনি বলেন, সে ব্যস্ত আছে । পরে আবারও ফোন দিলে প্রধান শিক্ষক সীমা রানী বলেন, আমি একটি সভায় আছি বলে এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো.নাসির উদ্দীন খলিফা জানান, যেহেতু বিদ্যালয়টি নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা বিচারধীন। মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।