Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ভয়াবহ দুর্ঘটনার শঙ্কা

গ্যাস লাইনের লিকেজ

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৫ এএম

মেয়াদোত্তীর্ণ পাইপলাইনেই চলছে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সরবরাহ। ঢাকায় ৪০-৪৫ বছরের বেশি সময়ের পুরনো গ্যাস বিতরণ লাইনও রয়েছে। সংযোগ লাইনে হচ্ছে লিকেজ, ঘটছে দুর্ঘটনা। লিকেজ মেরামত ও সংস্কারের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছে তিতাসের কর্মকর্তারা। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত মসজিদের বিস্ফোরণে ৩৪ জন নিহত হয়েছে। এই বিস্ফোরণ ও আগুনের জন্য দায়ী তিতাসের গ্যাস পাইপলাইনের লিকেজ। একটি লিকেজ থেকে এত মানুষের প্রাণহানির পর তিতাসের বিতরণ এলাকার মানুষ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পাইপলাইনের লিকেজ নিয়ে।
জানতে চাইলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, গ্যাসের লিকেজ মেরামত ও সংস্কারে নামে লুটপাট করা হচ্ছে। আসল কাজ হচ্ছে না। পুরনো পাইপলাইনগুলো নতুন করে করা না হলে নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত মসজিদের মতো দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থেকেই যাবে।
তিতাস থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের বিতরণ এলাকায় এক হাজার ৬২২টি লিকেজ রয়েছে। এর মধ্যে সংস্কার করে ঠিক করা হয়েছে ৭৮১টি। এখনও অরক্ষিত রয়েছে ৮১৪টি। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতো এখন গ্যাস পাইপলাইনের লিকেজের কারণেও দুর্ঘটনা বাড়ছে। এসব লিকেজ থেকে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাইপলাইনের লিকেজ থেকে ফের নিমতলী-চুড়িহাট্টার-নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত মসজিদের মতো বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। দীর্ঘদিন ধরেই ওই এলাকার বিভিন্ন গ্যাস লাইনে লিকেজের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগিরা। এক মাসের মধ্যে গ্যাসের লিকেজ মেরামত কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হয়নি।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে এবার পুরনো পাইপলাইন সরিয়ে নতুন করে পাইপ স্থাপনে বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের মতো আর যেন বড় ধরনের ঘটনা না ঘটে সে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নিশ্চিত হবে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ।
জানা গেছে, ১৯৬৭ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা জেলা শহরে গ্যাস সরবরাহের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬৭-৬৮ সালে ডেমরা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত ১২ ইঞ্চি এবং ডেমরা থেকে পোস্তগোলা ১৪ ইঞ্চি ও ১০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়। চাপ প্রশমন করে ২ ইঞ্চি থেকে ৬ ইঞ্চি ব্যাসের বিতরণ নেটওয়ার্ক স্থাপন করে গ্রাহকদের গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। এরপর থেকে নব্বই দশকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত ঢাকা শহরের বিভিন্ন অংশে ৫০ পিএসআই (প্রতি বর্গফুটে গ্যাসের চাপ) চাপের বিভিন্ন ব্যাসের বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়। সেই নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ঢাকা শহর এলাকা ক্রমান্বয়ে বর্ধিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্কও স¤প্রসারণ করা হয়। ৫০ পিএসআই চাপের বিভিন্ন ব্যাসের বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়। এই পাইপলাইনগুলোর মেয়াদকাল ছিল ৩০ বছর। কিন্তু এখনও সেই পাইপলাইন ব্যবহার হচ্ছে। বেশির ভাগ পাইপলাইনেরই মেয়াদ ফুরিয়েছে অনেক আগে। এসব পাইপলাইন একবার বসানোর পর নিয়মিত দেখভালেরও অভাব রয়েছে। গ্রাহক লিকেজ খুঁজে পেলে তিতাসকে ফোনে জানালে তিতাস ব্যবস্থা নেয়। অন্তত নারায়ণগঞ্জে দুর্ঘটনার পর তিতাস প্রমাণ করে দিয়েছে পাইপলাইনের লিকেজ খুঁজে বের করার দায় গ্রাহকের। গ্রাহক জানার পরও তিতাসকে না জানানোটাই তাদের অপরাধ। আর তিতাসের জানাশোনার বাইরে দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তিতাসের কোনও দায় নেই।
নারায়ণগঞ্জ মসজিদে দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল ওহাব স¤প্রতি জানান, তিতাস চার লাখ রাইজার অনুসন্ধান করে ৭ শতাংশে লিকেজ পেয়েছে। অর্থাৎ তিতাসের কাছে আগে থেকেই লিকেজের খবর রয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা সংস্কার করা হয় না। তবে এই দুর্ঘটনা ঘটার পর তিতাস কিছুটা হলেও নড়েচড়ে বসেছে। এদিকে তিতাসের পক্ষ থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, তাতে প্রত্যেক বিভাগের জন্য আলাদা টেলিফোন নম্বর দিয়ে লিকেজের তথ্য জানাতে গ্রাহককে অনুরোধ করা হয়েছে। তিতাসের হাতে থাকা লিকেজগুলো দুই মাসের মধ্যে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে এসব লিকেজ থেকে এর মধ্যে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে গ্রাহকদের কাছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাসের কর্মকর্তা বলেন, নারায়ণগঞ্জে হয়তো বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে গ্যাসের কারণে অগ্নিকান্ড ঘটেই চলেছে।
তিতাসের পরিচালক (অপারেশন) রানা আকবর হায়দারি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে লিকেজের তালিকা করেছি। তালিকা অনুযায়ী জোন ভাগ করে সেই জোনের ডিএমডি এবং জিএমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে আমরা বেশিরভাগ লিকেজ মেরামত করতে পারব বলে আশা করছি। যেসব লিকেজ মেরামতের ক্ষেত্রে অনেক টাকার প্রয়োজন, সেগুলা বাছাই করে হেড অফিসে পাঠাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কাজ শুরু করে দিতে বলা হয়েছে। যাতে করে যা বিল আসে তা বোর্ডে পাস করে দ্রুত ছাড় দেয়া যায়। ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের ডিএমডি এবং ঢাকা নর্থ আর সাউথের জিএমকে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে তাদের এলাকার লিকেজের হিসাব আমাদের দিয়েছেন।
আমরা জোন ভাগ করে তালিকা ধরে ধরে একটা একটা করে লিকেজ মেরামত করতে বলেছি। এর মধ্যে বেশিরভাগ লিকেজ সারাতে দুই সপ্তাহের বেশি সময় লাগার কথা নয়। তবে কিছু আছে জটিল। যেমন হাইওয়ের নিচে অথবা নদী বা খালের নিচের, সেগুলোও এখন বের করে মেরামত করতে বলা হয়েছে। এইগুলো মেরামত করতে মাসখানেক সময় লাগতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ