পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ জাতীয় সংসদের ৬১ শতাংশ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী। বাকি ৩৯ শতাংশের মধ্যে আইনজীবী ১৩ শতাংশ, রাজনীতিক ৫ শতাংশ ও অন্যান্য (শিক্ষক, চিকিৎসক, কৃষক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তা, গৃহিণী ও পরামর্শক ইত্যাদি) পেশার ২১ শতাংশ সদস্য রয়েছেন। গতকাল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রকাশিত ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ : একাদশ জাতীয় সংসদ (১ম থেকে ৫ম অধিবেশন)’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সংসদের চিত্র তুলে ধরে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জমান বলেন, দেশে ‘শান্তিপূর্ণ এবং স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায়’ ক্ষমতা বদলের সম্ভাবনা ‘দূরীভ‚ত হয়েছে’। ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে ওয়েবিনারে তিনি আরো বলেন, অষ্টম ও নবম সংসদে সমস্যার মূল যে জায়গা সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি অগ্রহণযোগ্য ছিল। সেটি বন্ধ হয়েছে চড়া দামে। এত বেশি চড়া দামে যে মাথা ব্যথার জন্য তা কেটে ফেলার মত হয়েছে।
প্রতিবেদন উপস্থাপন শেষে ইফতেখারুজ্জমান বলেন, প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত নির্বাচনের সংস্কৃতি আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। শান্তিপূর্ণ এবং স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা রদবদলের সম্ভানা দূরীভ‚ত হয়েছে। তারই প্রভাব দেখতে পারছি জাতীয় সংসদের মধ্যে। এরই ধারাবাহিকতায় একাদশ সংসদে একদলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে সংসদীয় কার্যক্রমে একচ্ছত্র ক্ষমতার সুযোগ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। ফলে সংসদের মৌলিক দায়িত্ব আইন প্রণয়ন, সরকারের জবাবদিহিতা এবং জনপ্রতিনিধিত্ব এই তিনটি ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত ভ‚মিকা দেখতে পারছি না।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর সংসদের প্রথম বৈঠক বসে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি। দশম সংসদ বর্জন করা বিএনপি এই নির্বাচনে যোগ দেয়ার পর ঘটে নানা নাটকীয়তা। ৩০ ডিসেম্বর ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাত্র ৬টি আসনে জয় পায় বিএনপি। আর গণফোরামের দুটি মিলিয়ে তাদের জোট ঐক্যফ্রন্ট পায় মোট ৮টি আসন।
ওয়েবিনারে এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংসদে যাদের প্রধান বিরোধী দল বলা হয়েছে তারা কিন্তু বিরোধী দলে বসবেন সেই প্রত্যাশা নিয়ে নির্বাচন করেননি। তারা ক্ষমতাসীন জোটের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। কিন্তু তাদের বসানো হয়েছে। বাস্তবে প্রধান বিরোধী দল বলতে যা বোঝায় সেটি কিন্তু অনুপস্থিত।
প্রতিবেদনে টিআইবি বলেছে, প্রশ্নবিদ্ধ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের ফলে সংসদীয় কার্যক্রমে বিশেষত আইন প্রণয়ন, বাজেট প্রণয়ন এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চা জোরদার হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনকালীন মহাজোটের একটি দল নিয়ম রক্ষার প্রধান বিরোধী দল হওয়ায় সরকারের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় তাদের জোরালো ভ‚মিকার ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। সংসদীয় কার্যক্রমে আইন প্রণয়ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলেও আইন প্রণয়নের আলোচনায় সংসদ সদস্যদের ‘কম অংশগ্রহণ, অনাগ্রহ ও দক্ষতার ঘাটতি’ রয়েছে।
টিআইবির প্রতিবেদনে একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে বলেছে, ৬১ শতাংশ সদস্য ব্যবসায়ী, আইনজীবী প্রায় ১৩ শতাংশ, রাজনীতিক মাত্র ৫ শতাংশ এবং অন্যান্য পেশার সদস্য রয়েছেন ২১ শতাংশ। অন্যান্য পেশার মধ্যে শিক্ষক, চিকিৎসক, কৃষক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তা, গৃহিনী, পরামর্শক ইত্যাদি পেশা উল্লেখযোগ্য। আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের ৫৯ শতাংশ এবং জাতীয় পার্টির ৫৬ শতাংশ সদস্য ব্যবসায়ী।
ভারতের পার্লামেন্টের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবেশী দেশটির সপ্তদশ লোকসভায় সংসদ সদস্যদের মধ্যে রাজনীতিক ৩৯ শতাংশ, ব্যবসায়ী ২৩ শতাংশ, আইনজীবী ৪ শতাংশ এবং অন্যান্য পেশার সদস্য রয়েছেন ৩৮ শতাংশ।
টিআইবি গত কয়েকটি সংসদের সদস্যদের প্রধান পেশা বিশ্লেষণ করে বলছে, প্রথম সংসদে আইনজীবীদের হার ছিল ৩১ শতাংশ, যা ক্রমাগত কমে একাদশ সংসদে ১৩ শতাংশে পৌঁছেছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের হার প্রথম সংসদে ১৮ শতাংশ ছিল, যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে একাদশ সংসদে ৬১ শতাংশে পৌঁছেছে।
একাদশ সংসদে কোরাম সঙ্কটের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, ২০১৯ সালের পাঁচটি অধিবেশনে মোট ১৯ ঘণ্টা ২৬ মিনিট কোরাম সঙ্কট ছিল। যা ৫টি অধিবেশনের প্রকৃত মোট ব্যয়িত সময়ের ১৭.৩ শতাংশ। এতে পাঁচটি অধিবেশনে প্রতি কার্যদিবসে গড় কোরাম সঙ্কট ছিল ১৯ মিনিট। প্রথম থেকে পঞ্চম অধিবেশন পর্যন্ত কোরাম সঙ্কটে ব্যয় হয়েছে ২২ কোটি ২৮ লাখ ৬৩ হাজার ৬২৭ টাকা।
আইন প্রণয়নে সময় ব্যয় হয়েছে মাত্র ৯% তুলে ধরে টিআইবি বলছে, একাদশ সংসদের পাঁচটি অধিবেশনে আইন প্রণয়ন কার্যক্রমে ৯ শতাংশ সময় ব্যয় হয়েছে। অথচ ২০১৯ সালে ভারতের লোকসভায় এই হার ছিল ৪৫ শতাংশ। বিল উত্থাপন এবং বিলের ওপর সদস্যদের আলোচনা ও মন্ত্রীর বক্তব্যসহ একটি বিল পাস করতে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে গড়ে প্রায় ৩২ মিনিট সময় ব্যয় হয়েছে। যেখানে ভারতের লোকসভায় প্রতিটি বিল পাসে গড়ে প্রায় ১৮৬ মিনিট ব্যয় হয়েছে।
টিআইবি বলছে, অধিকাংশ সংসদীয় কমিটিতে বিলের ওপর আলোচনায় ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। আইন প্রণয়ন কার্যক্রমে প্রধান বিরোধী দল ৬৭ শতাংশ, অন্যান্য বিরোধী সদস্য ১৭ শতাংশ, সরকারি দল ১৬ শতাংশ (বিল উত্থাপনকারী মন্ত্রীরা) সময় ব্যয় করেছেন।
৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে মাত্র ১৪ জন সদস্য (৪ শতাংশ) বিলের ওপর নোটিশ দিয়ে আলোচনা করেছেন। যাদের মধ্যে ৮ জন সদস্য বিলের ওপর সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। বাকি সদস্যদের ভ‚মিকা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল বলে তথ্য দিয়েছে টিআইবি।
প্রতিবেদনে টিআইবি কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে। সেগুলো হচ্ছে এক. জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাস্তবিক অর্থে অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে। দুই. সদস্যদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের জন্য সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে। যেখানে স্বীয় দলের বিরুদ্ধে অনাস্থার ভোট এবং বাজেট ব্যতীত অন্য সকল ক্ষেত্রে সদস্যদের নিজ বিবেচনা অনুযায়ী ভোট দেয়ার সুযোগ থাকবে। তিন. ‘সংসদ সদস্য আচরণ আইন’ প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে সংসদ সদস্যদের সংসদের ভেতরে এবং বাইরের আচরণ ও কার্যক্রম সম্পর্কে আন্তর্জাতিক চর্চা অনুসারে নির্দেশনা থাকবে। চার. সংসদীয় কার্যক্রম এমন হবে যেখানে সরকারি দলের একচ্ছত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার পরিবর্তে কার্যকর বিরোধী দলের অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।