পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বৈশ্বিক মহামারি করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্ব। থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতিসহ উন্নয়নের চাকা। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন প্রকল্পেও পড়েছে এর প্রভাব। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো অনেকটা গতি হারিয়েছে। তবে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) আশা করছে, চলতি অর্থবছরে চীনের সঙ্গে হওয়া ঋণ চুক্তির ফলে চারটি প্রকল্প খুব দ্রুতই আবার গতি ফিরে পাবে। ইআরডি সূত্র জানায়, ঢাকা ও আশুলিয়াকে সংযুক্ত করতে একটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণসহ চারটি প্রকল্পের জন্য দুই দশমিক চার বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য আলোচনা চলছে চীনের সঙ্গে।
২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশে আসেন। সে সময় ২৭টি প্রকল্পের জন্য ২০ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি। এই ২৭টি প্রকল্পের মধ্যে চারটি নিয়ে বর্তমানে আলোচনা চলছে চীনের সঙ্গে।
এখন পর্যন্ত এই চুক্তির সাতটি প্রকল্পের জন্য ছয় দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন হয়েছে, যার মধ্যে ঋণ বিতরণ হয়েছে এক দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।
সর্বশেষ দুটি প্রকল্পের বিষয়ে ঋণ চুক্তি সই হয়েছে গত অর্থবছরে। ইআরডির সই করা এই চুক্তি দুটির মধ্যে একটি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ‘বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা নেটওয়ার্কের স¤প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের জন্য। এর জন্য নেওয়া হয়েছে এক হাজার ৪০২ দশমিক ৯৩ মিলিয়ন ডলার।
অপরটি বাংলাদেশের পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির অধীনে ৯৭০ দশমিক শূণ্য দুই মিলিয়ন ডলার খরচে ‘পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের জন্য।
ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল গত অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে। কিন্তু চীনে করোনা মহামারি শুরু হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন ইআরডি কর্মকর্তারা।
বর্তমানে প্রস্তাবনায় থাকা চারটি প্রকল্প সম্পর্কে ইআরডির এশিয়া উইংয়ের যুগ্মসচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী জানান, এক্সপ্রেসওয়ের জন্য ঋণ প্রস্তাব চীনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে। লিখিতভাবে অনুমোদন পাওয়ার পর পরীক্ষা ও চূড়ান্ত আলোচনাসহ আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে।
এ ধরনের প্রস্তাবনা অনুমোদন হতে সাধারণত দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হয়। এই ঋণ আবেদনটি চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর পাঠানো হয়েছিল বলে তিনি জানান।
জানা গেছে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি সংযুক্ত করবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে। বিমানবন্দরের উল্টোদিকের ঢাকা এলিভেটেডের স্টার্টিং পয়েন্ট (কাওলা) থেকে আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। কাওলার থেকে রেললাইনের ওপর দিয়ে আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল-আশুলিয়া হয়ে সাভার ইপিজেডে গিয়ে শেষ হবে এ প্রকল্প। সাভার ইপিজেড থেকে যে কেউ আশুলিয়া এলিভেটেডে উঠে কাওলা এসে ঢাকা এলিভেটেড হয়ে কুতুবখালী পর্যন্ত গিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যুক্ত হতে পারবেন। এছাড়া চলাচলকারীরা এর মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানের র্যাম্প ব্যবহার করে সাভার, আশুলিয়া, পূবাইল, আবদুল্লাপুর বা ঢাকা এলিভেটেডের (কাওলা-কুতুবখালী) নির্ধারিত র্যাম্প ব্যবহার করে শহরের বিভিন্ন স্থানে ওঠানামা করতে পারবেন।
এ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সাভার, আশুলিয়া, নবীনগর ও সাভার ইপিজেড এলাকার যানজট নিরসন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। একইসঙ্গে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় সাভার ইপিজেড সংলগ্ন শিল্পাঞ্চল, ঢাকা চিটাগাং হাইওয়ের সঙ্গে দ্রæতগতিতে চলাচল করা যাবে। উন্নত ও দ্রুতগতির যোগাযোগের কারণে সাভার শিল্পাঞ্চলে নতুন নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে। এতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং স্থানীয় জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থানের উন্নতি হবে।
১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকার এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি ২০১৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পায়। এর ৬৫ শতাংশ খরচ ধরা হয়েছিল চীন থেকে প্রাপ্ত ঋণের অর্থ থেকে।
প্রকল্পের নথি অনুযায়ী, প্রকল্পটির কাজ ২০১৯ সালে শুরু হয়ে ২০২২ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
সে অনুযায়ী বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশের তিনটি কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে ২০১৯ সালের জুন মাসে নকশা পর্যালোচনা এবং তদারকির জন্য একটি চুক্তি সই হয়।
এর কাজ শেষ হলে ২৪ কিলোমিটার এই এক্সপ্রেসওয়েটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে আব্দুল্লাহপুর, আশুলিয়া, ঢাকা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল এবং চন্দ্রা হয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
এটি শনির আখড়ার কাছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগ স্থাপনকারী ২৬ কিলোমিটার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের স¤প্রসারিত অংশ হিসেবেও কাজ করবে।
বাকী তিনটি প্রকল্পের মধ্যে, ‘ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন’ অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রীপরিষদ কমিটির অনুমোদন পেয়েছে। প্রাথমিকভাবে এর জন্য ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর চীনা দূতাবাসে ৮৩৭ মিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল।
এই প্রকল্পের আওতায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ডাকঘর এবং কৃষি অফিসসহ দুই লাখ ছোট প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল সংযোগের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
ডিজিটাল আর্থিক সেবা এবং ই-কমার্স স¤প্রসারণের জন্য দেশজুড়ে ১০ হাজার ‘পয়েন্টস অব প্রেজেন্স’ স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে।
এ সম্পর্কে চীনা দূতাবাস জানিয়েছে, ঋণটি প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে এবং তারা একটি চীনা ঠিকাদারের নাম দিয়েছে যাদের দিয়ে প্রকল্পের কাজ করাতে চায় চীন।
একনেকে অনুমোদিত আরেকটি প্রকল্প হচ্ছে- ‘রাজশাহী ওয়াসা সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’। এর জন্য ২৭৬ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়ে করা আবেদনের বিষয়ে দূতাবাস জানিয়েছে, চীনা কর্তৃপক্ষ এটি ‘মূল্যায়ন’ করছে।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য ছয়টি পূর্ণাঙ্গ স্টেশন স্থাপনের জন্য চীনের কাছে ১২৫ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়ে করা আবেদনটির প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে চীন। এই প্রকল্পটি সরকারি ক্রয় সম্পর্কিত মন্ত্রীসভা কমিটি এবং একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। এই প্রকল্পটির জন্য চীনা ঠিকাদার মনোনয়নের জন্য অপেক্ষা করছে দেশটি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।