Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টিকিটের জন্য হাহাকার

বহির্বিশ্বের শ্রমবাজারে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা : বায়রা দেশে হাজার হাজার সউদী প্রবাসী শ্রমিকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত : মতিঝিল বিমান অফিসের সামনে বিক্ষোভ

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৫ এএম

সোনারগাঁও হোটেলে মানুষের বিশাল লাইন। প্রখর রোদ ও বৃষ্টির মধ্যেই হাজার হাজার মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। উদ্দেশ্যে টিকেট সংগ্রহ। সউদী আরবে চাকরি করেন। করোনায় দেশে ফিরে এসে আটকে পড়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন নির্ধারিত সময়ে কাজে যোগদান করতে না পারলে চাকরি চলে যাবে। কারো কারো চাকরি চলে গেছে।

কিন্তু কর্মস্থলে যেতে না পেরে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছেন। একটি টিকেটের জন্য এই প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে হাহাকারের দৃশ্য প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে। জানা যায়, ঢাকা থেকে জেদ্দা অভিমুখে প্রতিদিন সাউদিয়া এয়ারলাইন্স ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের তিনটি করে ফ্লাইট চলাচলের কথা ছিল। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ সাউদিয়া এয়ারলাইন্সকে সপ্তাহে দু’টি ফ্লাইট পরিচালনার জন্য অনুমতি দেয়। কিন্তু সউদী সিভিল এভিয়েশন বাংলাদেশের বিমানের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন উল্টো সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি বাতিল করে দেয়। এতে বিপদে পড়ে দেশের হাজার হাজার সউদী প্রবাসী শ্রমিক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিভিল এভিয়েশনের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকরা বিপাকে পড়ে গেছেন। পরিস্থিতি এমন যে সিভিল এভিয়েশনের অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্তে মনে হয় এই সিভিল এভিয়েশন শুধু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্বার্থ দেখছে। দেশের সার্বিক স্বার্থ তাদের কাছে উপেক্ষিত।

সউদী থেকে ছুটিতে আসা সাউদিয়া অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের আটকে পড়া প্রবাসী যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। নগরীর সোনারগাঁও হোটেলস্থ সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের অফিসের সামনে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত দেশটিতে ফিরতি টিকিট কনফার্ম করতে গিয়ে চরম হয়রানির মুখে পড়েছে হাজার হাজার প্রবাসী কর্মী। সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের অফিসে জনবল সঙ্কটের দরুণ টিকিট কনফার্ম করার জন্য প্রতিদিন মাত্র তিনশ’ যাত্রীকে টোকেন দিচ্ছে। সাত থেকে আট ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরতি টিকিট কনফার্ম করার সুযোগ না পেয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বাড়ি ফিরছে অধিকাংশ যাত্রী। এসব যাত্রীর অনেকেরই ভিসা ও ইকামার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। যথাসময়ে এসব প্রবাসী সউদীর কর্মস্থলে পৌঁছতে না পারলে তারা চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে। শুধু সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের প্রায় ৮৪ হাজার যাত্রী ফিরতি টিকিটের মাধ্যমে সউদী যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। ফিরতি টিকিট কনফার্ম করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত একাধিক যাত্রী এ অভিমত ব্যক্ত করেন। দেশটিতে প্রায় বিশ লাখ প্রবাসী কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনে বায়রা মহাসচিব দ্রæত কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সাউদিয়া অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি বাতিল করায় পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হচ্ছে। সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি বাতিল করার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার সউদী গমনেচ্ছু যাত্রীরা বিমান অফিসে বিক্ষোভ করেছে। সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি বাতিল করা হয়েছে কী না তা’ নিশ্চিত হওয়ার জন্য সিভিল এভিয়েশনের একজন কর্মকর্তার সাথে গতকাল যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমি জানি না। জেদ্দাস্থ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ সউদীতে বিমানের ফ্লাইট পরিচালনার জন্য অনুমতির ব্যাপারে জানতে চাইলে ঐ কর্মকর্তা বলেন, তিনি কিছুই জানেন না।

রাজধানীর মতিঝিলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রয় কেন্দ্রে বিক্ষোভ করেছে সউদী আরব থেকে ছুটিতে আসা আটকে পড়া সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের প্রবাসী যাত্রীরা। সোমবার দুপুরে বিমান অফিসের ভেতরে ঢুকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তা কর্মচারীদের গালিগালাজ করেন বিক্ষুদ্ধ প্রবাসীরা। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সাউদিয়া অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি বাতিল করার প্রতিবাদে তারা বিক্ষোভ করেন। দুপুর ২টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন অনেক প্রবসাী। সেখানেও বিক্ষোভ করেন তারা। এ বিষয়ে জানতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উপ মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকারকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।

জানা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সউদী আরবে নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সউদী আরবের জেদ্দাস্থ সিভিল এভিয়েশনের কাছে অনুমতি চায়। অন্যদিকে সাউদিয়া অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বেবিচকের কাছে অনুমতির আবেদন করে। বেবিচক সাউদিয়া অ্যারবিয়ান এয়ারলাইন্সকে সপ্তাহে দু’টি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিলেও, সউদী আরব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়নি।

আকাশপথ নীতিমালা অনুসারে, বাংলাদেশ সউদী আরব থেকে যে কয়টি ফ্লাইটের অনুমতি দেবে, সউদী আরবকেও বাংলাদেশে থেকে একই পরিমান ফ্লাইটের অনুমতি দিতে হবে। কিন্তু সউদী আরব সে নীতি মানেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেবিচক রোববার সাউদিয়া অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি বাতিল করে। সোমবার সকাল থেকেই মতিঝিলে বিমানের অফিসের সামনে জড়ো হতে থাকেন সউদী গমনেচ্ছু প্রবাসীরা। সাউদিয়া অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সে ফ্লাইট বাতিলের জন্য বিমানকে দুষছেন তারা। হাফিজুর রহমান নামের এক প্রবাসী ইনকিলাবকে বলেন, দেশে আটকে পড়া প্রবাসী কর্মীদের দ্রুত সউদী যাওয়ার ব্যবস্থা কর হোক। বিমানের কাছে এক টিকিট যারা পাবেন তাদের টাকা ফেরত দেয়া হোক। সুমন মিয়া বলেন, সাউদিয়া এয়ারলাইন্সকে ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিলেন না, না দেয়ার কারণে যাদের ভিসার মেয়াদ চলে যাবে অথবা আর দেশটিতে যেতে পারবে না, তাদের ক্ষতিপূরণ কে দেবে?

বায়রার মহাসচিব শামীম আহমদ চৌধুরী নোমান সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের আটকে পড়া হাজার হাজার যাত্রীর চরম ভোগান্তির কবলে পড়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ইনকিলাবকে বলেন, সাউদিয়া ও বিমানের তিনটি করে ফ্লাইট চলাচলের কথা ছিল। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ সাউদিয়া এয়ারলাইন্সকে সপ্তাহে দু’টি ফ্লাইট পরিচালনার জন্য অনুমতি দিলেও সউদী সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ দেশটিতে বিমানের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়নি। এতে সিভিল এভিয়েশন সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি বাতিল করে দেয়। এক প্রশ্নের জবাবে বায়রা মহাসচিব নোমান বলেন, করোনা মহামারির কারণে এমনিতেই জনশক্তি রফতানি খাত ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন। আটকে পড়া প্রবাসী কর্মীদের ভিসা ও ইকামার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এসব অপেক্ষমান প্রবাসী কর্মীরা যথা সময়ে সউদীর কর্মস্থলে ফিরতে না পারলে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসবে। বায়রা মহাসচিব বিমান ও সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের মধ্যে অনাকাঙ্খিত ঘটনার দ্রুত সমাধানের জন্য কূটনৈতিকভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় বর্হিবিশ্বের শ্রমবাজারে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে, আগামী ১ অক্টোবর থেকে সউদী আরবের তিনটি শহরে আটটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সোমবার রাতে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোকাব্বির হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সউদী আরব কর্তৃপক্ষ শর্ত সাপেক্ষে সে দেশের বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছিল। সে অনুযায়ী বিমান তাদের ফ্লাইট পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়ে সউদী কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পাওয়ায় ফ্লাইট শুরু করতে পারেনি বিমান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ