পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চাঁদাবাজির নাম বদলে পরিচালন ব্যয় বা সার্ভিস চার্জ আদায়ের প্রস্তাব শ্রমিক নেতাদের
বর্তমানে এক মাসে মাত্র ১০ হাজারের মত মামলা হয়। কিন্তু আগে প্রতিমাসে এক লাখের বেশি মামলা হতো : যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুর রাজ্জাক
আইজিপির নির্দেশে গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ রয়েছে। এতদিন পরিচলন ব্যয়ের জন্য গণপরিবহন থেকে যে চাঁদা তোলা হতো এখন তা হচ্ছে না। এতে সাধারণ মালিকরা উপকৃত হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। মালিকদের অভিযোগ, কতিপয় ট্রাফিক পুলিশের কারণে হয়রানি রাজধানীর গণপরিবহনে হয়রানি বেড়েছে। পুলিশ কথায় কথায় মামলা দিচ্ছে। নতুন আইনে মামলায় জরিমানার পরিমান অনেক বেশি। সেই জরিমানার টাকা দিতে গিয়ে মাস শেষে আর কিছুই থাকছে না। এদিকে পরিবহন সেক্টরের বন্ধ থাকা চাঁদাবাজির নাম বদলে পরিচালন ব্যয় বা সার্ভিস চার্জ আদায়ের প্রস্তাব দিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। এ প্রস্তাব এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত হিসেবে অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি। এই সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। মালিক সমিতির নেতারা অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। একজন নেতা বলেন, আইজিপির নির্দেশে আমরা সব ধরণের চাঁদা তোলা বন্ধ রেখেছি। সুতরাং এ বিষয়ে আমাদের আর কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। শ্রমিক সংগঠনগুলো তাদের স্বার্থে কিছু করলে সেটা তাদের দায়িত্ব।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, চাঁদা বন্ধ হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের কিছু দুর্নীতিবাজ সদস্য গণপরিবহনের উপর ক্ষুদ্ধ। তারা পরোক্ষভাবে মালিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আবদুল্লাহপুর-বাবুবাজার রুটে চলাচলকারি এক পরিবহন কোম্পানীর পরিচালক বলেন, সারা ঢাকা শহরে ক’জন মানুষ মাস্ক পড়ে এখন? অথচ বাসের হেলপার, ড্রাইভারের মুখে মাস্ক নেই বলে প্রতিদিনই মামলা দেয়া হচ্ছে। মাস শেষে মামলার জরিমানা গুনতে হচ্ছে ২০-২৫ হাজার টাকা। গাড়ির খচর দিয়ে কিছুই বাকি থাকছে না। আমরা পথে বসতে চলেছি। এ প্রসঙ্গে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ঢাকা শহরে যে সব মালিকের বাস চলে তারা প্রতিদিনই আমাদের কাছে নানা অভিযোগ করছে। ট্রাফিক পুলিশ দিনে একটা গাড়ি বার বার আটকাচ্ছে, মামলা দিচ্ছে। নতুন আইনে মামলা দেয়ার কারণে জরিমানার অঙ্ক অনেক বেশি। সেই টাকা দিয়ে মালিকদের কিছুই থাকছে না। এ প্রসঙ্গে ডিএমপির ট্রাফিকের যুগ্ম কমিশনার মো. আব্দুর রাজ্জাক দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে এক মাসে মাত্র ১০ হাজারের মত মামলা হয়। কিন্তু আগে প্রতিমাসে এক লাখের বেশি মামলা হতো। নতুন আইনে মাত্র কয়েকটি বিষয়ে মামলা করা হয়। এছাড়াও জরিমানা ২৫ হাজার টাকা রয়েছে; কিন্তু তা কমিয়ে মাত্র ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তা হলে অতিরিক্ত মামলা দিয়ে হয়রানি করা হলো কিভাবে? তারপরও যদি কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসে; তা হলে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজধানীর সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘুরে এবং বিভিন্ন রুটে চলাচলকারি সিটি সার্ভিসের বাসের মালিক শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীতে কতিপয় ট্রাফিক পুলিশের রোষানলে পড়ছে সব রুটেরই বাস। সাত সকালে রাস্তায় বের হলেও ট্রাফিক পুলিশ বাস আটকিয়ে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে মামলা দিচ্ছে। গাজীপুর থেকে যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচলকারি বলাকা পরিবহনের এক চালক বলেন, একদিনে ৬টা মামলা খেয়েছি। তার মানে নিজের সারাদিনেও উপার্জন শেষ। উপরন্তু মালিকের বকাঝকা তো আছেই। কি কারণে মামলা দিচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দোষ খুঁজলে অনেক কিছুই পাওয়া যাবে। যারে দেখতে নারি/তার চলন বাঁকার মতো অবস্থা আর কি। গুলিস্তান থেকে এয়ারপোর্ট রোড রুটের এক কন্ডাক্টর বলেন, আসল কথা হলো আগে মালিকরা সবাই মিলে একটা বরাদ্দ রাখতো। এখন সেটা রাখা যাচ্ছে না। সে কারণেই এতো ঝামেলা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আগে ঢাকায় চলাচলরকত বাসগুলোর রুটভিত্তিক বিট ভাগ করা ছিল। বিট অনুসারে চাঁদার টাকা থেকে রাখা হতো বরাদ্দ। এ কারণে কোনো ঝামেলা ছিল না। বড় কোনো ঘটনা বা ত্রæটি ছাড়া ট্রাফিক পুলিশ কোনা বাসই আটকাতো না। এখন যখন তখন এবং মোড়ে মোড়ে বাস থামানো হয়। এ নিয়ে যাত্রীরাও মহাবিরক্ত। মিরপুর থেকে মতিঝিলে বাসে চড়ে অফিস করেন এমন একজন ব্যাংক কর্মচারি জানান, সকালে বাসগুলোতে বেশ চাপ থাকে। যাত্রীর তুলনায় বাস থাকে কম। নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের কারণে যানজট তো আছেই। তার উপর একটা বাসকে যদি মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ দাঁড় করিয়ে কাগজপত্র চেকের নামে সময়ক্ষেপণ করে তখন এক ঘণ্টার রাস্তা দু’ঘণ্টায়ও শেষ হয় না। করোনার পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে এই প্রবণতা অনেকটাই বেড়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
গাজীপুর-মতিঝিল রুটের এক পরিবহন কোম্পানীর কর্মকর্তা বলেন, চাঁদা বন্ধ থাকার কারণে আমরা সুপাইভাইজারকে খাটাতে পারছি না। এতে করে সঠিক হিসাব মিলছে না। আবার কোনো কোনো এলাকায় প্রভাবশালীদের ঠিকই চাঁদা দিতে হচ্ছে। তার উপর পুলিশ যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানায় মামলা দেয় তাহলে আমরা যাবো কোথায়। তিনি বলেন, আগে চাঁদা আমরা মালিকরাই দিতাম। চাঁদা বন্ধ থাকাতেই আমাদের টাকা বাড়ার কথা। তা না হয়ে উল্টোটা হয়েছে। মামলা আর জরিমানা দিতে দিতে আমরা পথে বসতে চলেছি। মাঝখানে ৫ মাস করোনায় গাড়ি না চলায় অনেক গাড়িই বসে পড়েছে। এখন যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে আমাদের এই ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে। যাওয়ারও উপায় নাই। কারণে আমাদের অধিকাংশ গাড়িই ঋণের টাকায় কেনা। সায়েদাবাদের এক মালিক বলেন, গত এক মাসে আমার ১২টি গাড়ি জব্দ করেছে ঋণের কিস্তি না দিতে পারায়।
এদিকে, বন্ধ হওয়া চাঁদাবাজি চালু করতে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে পরিবহন শ্রমিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। কৌশলে তারা চাঁদাবাজি নাম বাদ দিয়ে এটাকে পরিচালন ব্যয় বা সার্ভিস চার্জ আদায়ের প্রস্তাব করেছে। ভুক্তভোগি মালিকদের মতে, এটা অনুমোদন হলে পরিবহন সেক্টরে অরাজকতা আরও বাড়বে।
জানা গেছে, ৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। এ সভায় সমগ্র বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন শ্রমিক সংগঠন চাঁদাবাজি বন্ধ করে পরিচালন ব্যয় (সার্ভিস চার্জ) সংগ্রহের প্রস্তাব দেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী। সেই সভাতেই প্রস্তাবটি কিছুটা সংশোধন করে বাস্তবায়নের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভুক্তভোগিদের মতে, পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলোর চাঁদা আদায়ের বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার চেষ্টা হয়েছে এর আগেও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চাঁদার হার ঠিক করে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির প্রস্তাব দিয়েছিলেন শ্রমিক নেতারা। ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একাধিক বৈঠকে তারা বিষয়টি উত্থাপন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে সে সময় যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়। তবে চাঁদার হার ঠিক করে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি আমলে নেয়নি অর্থ মন্ত্রণালয়।
দেশের সড়ক পরিবহন খাতের শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। সারা দেশে শুধু ফেডারেশনের আওতায় রয়েছে ২৪৯টি শ্রমিক ইউনিয়ন। ঢাকায় বাস ও ট্রাক টার্মিনালকেন্দ্রিক শ্রমিক ইউনিয়ন ছাড়াও প্রতি জেলায় অন্তত দুটি করে বাস ও ট্রাকের শ্রমিক ইউনিয়ন আছে। অন্যদিকে শ্রম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তথ্য বলছে, দেশের সড়ক পরিবহন সেক্টরে মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠনের সংখ্যা ৯৩২। এসব সংগঠনের আয়ের প্রধান উৎস যানবাহন থেকে দৈনিক আদায় হওয়া চাঁদার টাকা। ভুক্তভোগিরা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চাঁদা তোলার অনুমতি দিলে শ্রমিক সংগঠনের কারণেই পরিবহন ব্যবসা লাটে উঠবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।